ক্যানসার নিয়েও শুটিং করেছেন যে নায়িকা
দুরারোগ্য ক্যানসার এক সময় স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল তার জীবনের পথ। লড়াই করলেও ফিরতে পারবেন কি না সে চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছিল পরিবার-পরিজন সকলকেই। দিন-রাত বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজের মেক আপ ভ্যান, শুটিং ফ্লোর, স্বামী ও ছেলের কথাই ভাবতেন নব্বইয়ের দশকে পুরুষহৃদয়ে কাঁপন ধরানো এই অভিনেত্রী।
-
যদিও তার তীব্র প্রাণশক্তি ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে ক্যানসার। মনের জোর ও সাহসকে অবলম্বন করে ক্যানসার জয়ীদের তালিকায় এখন উঠে এসেছে তার নামও। তিনি সোনালি বেন্দ্রে। যার দুরন্ত কামব্যাক বেঁচে থাকার রসদ জোগাতে পারে বিশ্বের সব ক্যানসার আক্রান্তকেই।
-
১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি মুম্বাইয়ের এক মরাঠা পরিবারে জন্ম হয় সোনালির। ছোটবেলা থেকেই নাচ-গান ও অভিনয়ের প্রতি অদম্য টান ছিল তার। মুম্বাইয়ের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় ও ঠাণের হলি ক্রস কনভেন্ট থেকে স্কুলের পাঠ শেষ করে মুম্বাইয়ের রামনারায়ণ রুজা কলেজ থেকে স্নাতক হন।
-
স্কুল শেষ করার পর থেকেই মডেলিং করতে শুরু করেন সোনালি। ক্যারিয়ার মডেলিং দিয়ে শুরু হলেও এই সময়ই টুকটাক কিছু বিজ্ঞাপনী ছবিতেও কাজের অফার আসতে থাকে।
-
তার ক্যামেরার সামনে সপ্রতিভ আচরণ, অভিনয় দক্ষতার জেরে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই চিত্রপরিচালককে রবিশংকরের নজরে আসেন তিনি। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় ‘আগ’। সেখানে গোবিন্দা ও শিল্পা শেটির সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেন সোনালি। এই ছবিই তাকে এনে দিল সেরা নতুন মুখের পুরস্কার। এরপর পরই আসতে থাকে বলিউডি ও দক্ষিণী নানা ছবির অফার।
-
১৯৯৬ সালে মাইকেল জ্যাকসন যখন ভারতে আসেন, তখন তাকে স্বাগত জানাতে বলিউডের পক্ষ থেকে ভার দেয়া হয় সোনালিকে। তত দিনে ‘রক্ষক’, ‘ইংলিশ বাবু দেশি মেম’, ‘আপনে দম পর’, ‘সপুত’-এর মতো ছবি। প্রতিটি ছবির টাইটেল কার্ডেই নতুন এই নায়িকার নাম যোগ করত আলাদা আবেদন।
-
১৯৯৬ সালে মাইকেল জ্যাকসন যখন ভারতে আসেন, তখন তাকে স্বাগত জানাতে বলিউডের পক্ষ থেকে ভার দেয়া হয় সোনালিকে। তত দিনে ‘রক্ষক’, ‘ইংলিশ বাবু দেশি মেম’, ‘আপনে দম পর’, ‘সপুত’-এর মতো ছবি। প্রতিটি ছবির টাইটেল কার্ডেই নতুন এই নায়িকার নাম যোগ করত আলাদা আবেদন।
-
‘নব্বইয়ে সোনালি বেন্দ্রে মানেই যেন এক আলাদা আবেদন! ‘নরাজ’, ‘জখম’, ‘অঙ্গারে’ এ সব চবি তো চলতই সোনালির নামে। সবেতেই যে সে নায়িকা ছিল এমন নয়, কিন্তু তার অভিনয়ের প্রসাদগুণে অনেক তাবড় অভিনেত্রীর সঙ্গেও পাল্লা দিতে পারতেন। এক সহজাত সৌন্দর্যও ছিল, যা নয়নাভিরাম।’ সোনালি বেন্দ্রের অভিনয় নিয়ে এখনো মুগ্ধ সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
-
১৯৯৯ সালে দুই তামিল ছবি ‘কধালার ধিনাম’ ও ‘কান্নোদু কানবাথেলাম’-এ অভিনয় করেও দক্ষিণী ছবির দুনিয়ায় বেশ নাম করেন। এরপর ২০০০ সালে ‘চল মেরে ভাই’-তে তার ক্যামিও চরিত্রটিও সিনেমাপ্রেমীদের মন কাড়ে। ‘হমারা দিল আপকে পাশ হ্যায়’ ছবির জন্য সেরা সহঅভিনেত্রীর পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হন।
-
শুধু হিন্দি ও তামিল নয়, ২০০১ সালে তেলেগু ছবির ডেবিউ করেন সোনালি। তেলেগু ফিল্ম-ইতিহাসে এই ‘মহেশ বাবু’ ছবিটি আজও বিখ্যাত।
-
শুধু বড়পর্দাই নয়, টেলিদুনিয়াতেও সোনালি ঢুকে পড়েন ২০০১ সালে। এক বেসরকারি চ্যানেলের নাচের রিয়েলিটি শো সঞ্চালনার কাজ দিয়েই শুরু হয় তার টেলিদুনিয়ার ডেবিউ। এরপর গান ও নানা প্রতিভার ট্যালেন্ট হান্ট শো-এর সঞ্চালক ও বিচারক হিসেবে সোনালিকে দেখা গিয়েছে।
-
মাঝে ২০০২ সালে বহুদিনের বন্ধু পরিচালক গোল্ডি বেহলকে বিয়ে করেন সোনালি। ২০০৪ সালে জন্ম নেয় তাদের পুত্রসন্তান। এই সময় সংসার সামলে ছেলেকে একটু বড় করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সোনালি। পরে ২০১২ সালে অক্ষয় কুমারের বিপরীতে ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বাই দোবারা’ ছবিতে কামব্যাক করেন সোনালি। তারপর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ফিল্ম ও টেলিফিশন নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন এই জনপ্রিয় নায়িকা।
-
বাধ সাধল ক্যানসার। ২০১৮ সালের পর জীবনের এই কঠিন অধ্যায়েও এতটুকু মনোবল হারাননি তিনি। পাশে পেয়েছিলেন গোটা পরিবারকেই। নিউইয়র্কে চিকিত্সা চলাকালীন সোনালির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন একাধিক বলিউড তারকা। কখনো প্রিয় বন্ধু সুজান খান বা গায়ত্রী জোশীর সঙ্গে ছবি শেয়ার করেছিলেন সোনালি।
-
ক্যানসারের কেমোথেরাপি কেড়ে নিয়েছিল সোনালির মাথার চুল। কিন্তু সে অবস্থাতেও প্রকাশ্যে এসেছেন তিনি। নিজেকে লুকিয়ে রাখেননি। বরং সাহস দিয়েছেন অন্যদেরও। তাকে দেখে যাতে অন্য ক্যানসার আক্রান্তেরা সাহস সঞ্চয় করতে পারে, সেই চেষ্টাই করেছেন প্রতিদিন। সোনালির এমন ভূমিকাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলে।
-
পুরোপুরি সুস্থ না হলেও একটু ভাল হতেই শুটিং ফ্লোরেও ফিরেছেন তিনি। ‘অনেক কিছু ঘটে যাওয়ার পর সেটে ফিরলাম। কাজে ফিরতে পেরে ভালোলাগছে। ফিরতে পেরে কেমন লাগছে সেটা বলে বোঝাতে পারব না। কাজেই তো ফিরতে চেয়েছিলাম।’ ফিরে এসেও রাখঢাক না করেই সোশ্যাল সাইটে লিখেছেন এ কথা।
-
এমনকি কোমরের নীচে জল ভরা একটি ট্যাঙ্ক নিয়ে বিভিন্ন ব্যায়াম করার ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল ওয়ালে শেয়ার করেছেন সোনালি। কষ্টকর এই অ্যাকোয়া থেরাপি নিয়েও কিছুই লুকোননি। এই সময় পরিবারের সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্তও ভাগ করেছেন ভক্তদের সঙ্গে। নিজেই বারবার তাদের সাহস জুগিয়েছেন। নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ভয় পেতে বারণ করেছেন।
-
সময়মতো চিকিৎসার পাশাপাশি সোনালির এমন মনের জোর ও সাহসই তাকে এই বড় যুদ্ধ জয় করতে সাহায্য করেছেন বলে মনে করেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সোমনাথ সরকার। ফের টিভি ও রুপোলি পর্দায় ফের দাপিয়ে ফিরে আসুন সোনালি এমনই আকাঙ্ক্ষা তার তামাম ভক্তকুলের। অন্য দিকে ক্যানসার রোগীরাও তার এই কামব্যাক ইনিংস দেখে নিচ্ছেন সাহস ও মনের জোরের পাঠ।