কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি চান বেদেরা
বগুড়ার সোনাতলা রেলস্টেশনের পূর্বে প্রেসক্লাব সড়ক। সড়কের মাথায়ই স’মিল। এখানেই বেদেদের অস্থায়ী আস্তানা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবেই চলেছে তাদের জীবন। এখন তারা এই কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি চান। বেদেদের নিয়ে লিখেছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত।
-
ফাঁকা একটি জায়গায় কালো তাঁবুর দশ-বারোটি আস্তানা। সেখানে বেদেরা এসেছে। প্রেসক্লাব সড়ক দিয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে হেঁটে যেতেই দেখা যাবে ছাউনি। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত
-
কাছে যেতেই একজন পুরুষ এগিয়ে এলেন। বয়স মনে হয় পঞ্চাশের কাছাকাছি। আধা-পাকা চুল, কালো চেহারার লোকটি আমাকে দেখেই সালাম দিলেন।ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত
-
তার কাছে জানতে চাওয়া হলো,- ‘কেমন আছেন?’ তিনি বললেন, ‘দেখতেই তো পাচ্ছেন কেমন আছি, বৃষ্টি-বাদলের দিনে খোলা আকাশে ছাউনিতে আছি।’ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত
-
ফিরতি প্রশ্নে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কি এনজিওর লোক? বাচ্চাদের জন্য কি কিছু আনছেন?’ আমি লজ্জা পেলাম। উত্তর বললাম, ‘আমি সাংবাদিক, ছবি তুলি, ফিচার করি।’ ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত
-
আমার কথা শুনে তিনি কিছুটা হতাশ হলেন। বললেন, ‘অনেক সাংবাদিকই তো আসেন, খবর করে। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।’ আমি আশ্বাস দিয়ে বললাম, ‘অচিরেই হয়তো আপনাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।’ ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত
-
তার নাম জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘আমার নাম আল হারুনিয়া। আমি এখানকার সরদার। আমার আদি নিবাস ঢাকার বিক্রমপুরের লৌহজং থানায়।’ ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত
-
তিনি আরও জানালেন, এখানে তারা ১২ পরিবারে মোট ৯২ জন আছেন। করোনার এ সময়ে জীবনযাপন করা তাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত
-
আরও বললেন, ‘আগে গ্রামে গ্রামে সাপের খেলা দেখাতাম, সিঙ্গা লাগাতাম। কিছু পয়সাপাতি আসতো। এখন তো করোনা। গ্রামে গ্রামে যেতে পারি না। লোকজন আর আগের মতো খেলা দেখে না। সিঙ্গাও লাগায় না। খুবই কষ্টে যায় দিনকাল।’ ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত
-
আমি নির্বিকার। কথা না বাড়িয়ে বললাম, ‘আমি কিছু ছবি তুলতে চাই। বাকি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চাই।’ তিনি বললেন, ‘আচ্ছা তোলেন, সমস্যা নাই।’ ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত
-
এগিয়ে যেতেই দেখলাম একটি ছাউনিতে প্রায় ১২-১৩ জন খাচ্ছেন। সেটা দুপুরের খাবার না-কি সকালের খাবার, বুঝতে পারলাম না। আমি আপনমনে ছবি তুলতে লাগলাম। তারাও কিছু বলছেন না। আপনমনে তারা খেয়ে যাচ্ছেন। মনে হয়, এসব তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত
-
পাশের ছাউনিতে একজন বয়স্ক নারী রান্না করছেন। ঢাকনা সরিয়ে তরকারিতে নাড়া দিতেই লক্ষ্য করলাম, হাঁড়িতে শুধুই ঢেঁড়শ সেদ্ধ হচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘চাচি কেমন আছেন?’ উত্তর দিলেন, ‘ভালা আছি বাবা।’ ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত
-
সেইসঙ্গে আরও কিছু টুকটাক কথা বলে জানতে পারলাম, চাচির নাম সাহানুর, বয়স ৪৫ হবে। চাচি জানান, তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১৩ জন। দুই ছেলেরই বিয়ে হয়েছে। চার মেয়েরও বিয়ে হয়েছে। নাতি-নাতনিও আছে তাদের ঘরে। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত
-
আমাকে দেখে পাশের ছাউনি থেকে বেরিয়ে এলেন একজন। সাংবাদিক শুনেই বললেন, ‘আপনারা আমাদের জন্য কিছু লেখেন। যেন সরকার আমাদের সাহায্য করে। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা যেন করাতে পারি। ভাসমানভাবে আর কতই থাকবো?’ ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত