প্রবাসী মানিকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
ফুল আর লতা-পাতায় মোড়ানো একটি তিন তলা ভবনের ছাদ। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে এটি একটি পর্যটনকেন্দ্র বা রুফটপ রেস্টুরেন্ট। আসলে একটি পাঠাগার এটি। সেইসঙ্গে এতটাই সুন্দর করে এটি সাজানো হয়েছে যে, একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে পাঠাগারটি।
-
দর্শনার্থীরা অবসর সময় কাটানোর পাশাপাশি মনোরম এ স্থানে বসে পছন্দের বইটিও পড়ার সুযোগ পাবেন। ছাদের কোণে তিনটি পরিপাটি কক্ষে কাঠের তাকে থরে থরে সাজানো বই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা’, ‘বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ’, ‘গীতাঞ্জলি’সহ তথ্যসমৃদ্ধ বিভিন্ন বই। ছবি: মো. ছগির হোসেন
-
এ পাঠাগারটি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ পৌরসভার এক প্রবাসী যুবক মানিক হোসেনের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ছবি: মো. ছগির হোসেন
-
সেখানে জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী পাঠকের সমাবেশ। এ যেন একখণ্ড জ্ঞান অর্জনের তীর্থভূমি। ভেদরগঞ্জ বাজারের সড়কের পাশ ঘেঁষে তিন তলা ভবনটির ছাদে উঠলেই যে কারও নজরকাড়বে বাহারি গাছ। দেয়ালগুলো ঢাকা নানা রঙে। আছে প্লাস্টিকের কাটা বোতল রঙ দিয়ে সাজানো গাছের টব। সুন্দর বসার ব্যবস্থার পাশাপাশি আছে ছবি তোলার স্থানও। ছবি: মো. ছগির হোসেন
-
ছাদের তিনটি কক্ষের একটিতে বাহারি সেলফ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বইয়ে ঠাসা। দ্বিতীয় কক্ষে প্রবেশ করলে মনে হবে এটি পাঠাগার নয়, সংগ্রহশালাও বটে। ৩৭টি দেশের কাগজের মুদ্রার সংগ্রহশালা। সংগৃহীত আছে ৩৮ জেলার মাটি। খেলাধুলার উপকরণের জন্য আছে একটি তাক। হারিয়ে যাওয়া পুরোনো ঐতিহ্যের কিছু নির্দশন রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় আরেকটি সেলফে। ছবি: মো. ছগির হোসেন
-
তিন নম্বর কক্ষে ঢুকতেই মিলবে ছবি আর মৃৎশিল্পের সমাহার। এখানেও ব্যতিক্রমী নকশায় তৈরি তাকগুলোয় আছে বিভিন্ন লেখকের বই। পাশেই আরাম কেদারায় বইপড়ার ব্যবস্থা। কক্ষটিতে শিশুদের জন্য আছে শিক্ষণীয় খেলনা। ছবি: মো. ছগির হোসেন
-
ছোটবেলা থেকেই যাতে শিশুরা বইপড়ায় অভ্যস্ত হয়, সে জন্যই এ আয়োজন। পাঠাগারটির সবগুলো কক্ষই সাজানো হয়েছে আলাদা চিন্তার জায়গা থেকে। শিশু-কিশোর থেকে প্রবীণ সবার জন্য ‘উন্মুক্ত গ্রন্থাগার’টি পরিচালিতও হয় নিয়মতান্ত্রিকভাবে। ছবি: মো. ছগির হোসেন
-
শুধু তা-ই নয়, গ্রন্থাগারটিতে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সূর্যসেন, কবি জসীম উদদীন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদসহ বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখকের জনপ্রিয় বইয়ের সমাহার। ছবি: মো. ছগির হোসেন
-
এ ছাড়াও আছে মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, জীবনী, বিজ্ঞান, গণিত, শিশুতোষ ও ধর্মীয় বইয়ের বিশাল সংগ্রহ। অন্যদিকে মানিকের পাঠাগারেআছে দৈনিক পত্রিকা ও দাবা খেলার ব্যবস্থা। ছবি: মো. ছগির হোসেন
-
দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক লাইব্রেরি না থাকায় বইপড়া থেকে পিছিয়ে পড়ছিল উপজেলার মানুষ। জ্ঞানের ভান্ডার বইয়ের সঙ্গে যখন ভেদরগঞ্জের মানুষের দূরত্ব বাড়ছিল; ঠিক তখনই ভেদরগঞ্জের বইপ্রেমী মানুষকে বইমুখী করে ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মানিক হোসেন গড়ে তোলেন ‘উন্মুক্ত গ্রন্থাগার’। ছবি: মো. ছগির হোসেন
-
জানা যায়, উপজেলার অসহায় মানুষের পাশে থাকার প্রত্যয় নিয়ে মানিক গড়ে তোলেন ‘উন্মুক্ত গ্রন্থাগার’। সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডের পথ ধরে জ্ঞানের দরজা খুলে দিতে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তিনি। করোনাকালে বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন ও নিজের সহযোগিতায় অসহায় মানুষকে সহযোগিতাও করেছেন তিনি। ছবি: মো. ছগির হোসেন
-
উন্মুক্ত গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা মানিক হোসেন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আক্তার হোসেনের ছেলে। সাত ভাই-বোনের মধ্যে মানিক সবার ছোট। স্বপ্নবাজ মানিকের হাত ধরে জ্ঞানপিপাসু মানুষের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে ‘উন্মুক্ত গ্রন্থাগার’। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী মানুষের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। ছবি: মো. ছগির হোসেন