মাছের আঁশে ভাগ্যবদল
সাধারণত মাছ কাটার পর আঁশ ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন সেই ফেলে দেওয়া আঁশ থেকেই তৈরি হচ্ছে অপরূপ সব হস্তশিল্প। বানানো হচ্ছে গহনা এবং দেবদেবীর মূর্তি। এমনকি আঁশ ব্যবহার হচ্ছে ক্যাপসুলের মোড়ক তৈরিতে। ফলে মাছের আঁশের পাশাপাশি কাঁটা, চোখ, কান সবই এখন দামি হয়ে উঠেছে। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে শত শত টন মাছের আঁশ, কাঁটা, ফুলকা রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।
-
অনেকক্ষেত্রে মাছের চেয়েও যেন আঁশের দাম বেশি। প্রতি কেজি মাছের আঁশ রপ্তানিকারক বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি হয় ৭০-৮০ টাকায়। মাছ কাটার পর ফেলে দেওয়া এসব আঁশ বিক্রি করে এখন স্বাবলম্বী অসংখ্য পরিবার। ছবি: জিহাদুল ইসলাম
-
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ আসে রাজধানীর কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন মাছের আড়তে। পাইকারি দামে মাছ কিনতে অনেকেই ভিড় করেন এসব বাজারে। পছন্দমতো মাছ কিনে কাটিয়ে নিয়ে যান বাড়িতে। বাজারের বিক্রি করা বড় রুই, কাতলা, কোরালসহ নানা মাছের আঁশ সংগ্রহ করে রাখেন মাছ কাটা শ্রমিকরা। এরপর পরিছন্নতাকর্মী কিংবা নিজেরাই সংরক্ষণ করেন এসব মাছের আঁশ। পরিত্যক্ত এসব মাছের আঁশ বাজার থেকে সংগ্রহ করার পর প্রথমে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। এরপর প্লাস্টিক সিট অথবা পরিষ্কার কোনো পাত্রে আঁশগুলো মেলে দিয়ে রোদে শুকানো হয়। ছবি: জিহাদুল ইসলাম
-
মাছ কাটা শ্রমিকেরা সারাদিন বাজারে মাছ কাটার কাজ করলেও আঁশ সংগ্রহকারীরা সকাল ৬টা থেকে ৭ টার মধ্যেই কাজ শেষ করেন। বড় বড় রেস্টুরেন্ট, মেছ কিংবা বিয়ের আয়োজনের জন্য একসঙ্গে অনেক মাছ ক্রয় করেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। সেই সব মাছ থেকেই অল্প সময়ে অনেক আঁশ সংগ্রহ করা যায়। বড় সাইজের মাছের আঁশ কাজে লাগলেও ছোট সাইজের মাছের আঁশ ফেলে দেওয়া হয়। প্রতি ২০ কেজি মাছ কাটলে পাওয়া যায় ৫ কেজির মতো আঁশ। ছবি: জিহাদুল ইসলাম
-
নিজেরা মাছ কেটে আঁশ সংগ্রহের পাশাপাশি মাসিক চুক্তিতে মাছ কাটা শ্রমিকদের কাছ থেকে ক্রয় করা হয় মাছের আঁশ। শুঁকানোর পরে এসব মাছের আঁশগুলো বস্তাভর্তি করে রেখে দেওয়া হয় একমাসের বেশি সময়। এরপর বিদেশে রপ্তানির জন্য বাড়ি থেকে ক্রয় করে নিয়ে যায় বিভিন্ন কোম্পানি। ছবি: জিহাদুল ইসলাম
-
প্রায় ৮ বছর ধরে মাছের আঁশ বিক্রি করে সাতজনের সংসার চালিয়ে ভালোভাবেই জীবনযাপন করছেন কুলসুম বেগম। তিনি বলেন,‘আমি এই মাছের আঁশ বিক্রি করে ঘর ভাড়া দেই, চালসহ সংসারের খরচ মেটাই’। তার মতো রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায় প্রায় ২০টি পরিবার জড়িত এই মাছের আঁশের ভিন্নধর্মী ব্যবসায়। ছবি: জিহাদুল ইসলাম