আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলো পাবনার ‘বিদ্যা নিকেতন’
পাবনার চাটমোহর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কুমারগাড়া। এই গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বড়াল নদটি দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। নদী রক্ষা আন্দোলনের অংশ হিসেবে এখানেই প্রতিষ্ঠা হয় ‘বড়াল বিদ্যানিকেতন’। ছবি: আলমগীর হোসাইন (নাবিল)
-
নজরকাড়া স্থাপত্যশৈলীতে আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে এই বড়াল বিদ্যানিকেতন।
-
নান্দনিকতা ও বুদ্ধিদীপ্ত স্থাপত্য নকশার জন্য সম্প্রতি আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্টের পুরস্কার জিতেছে এ স্কুল।
-
ইট, কাঠ, বাঁশ ও মাটির তৈরি স্কুলটিতে রয়েছে দুটি একতলা এবং একটি দোতলা ভবন। শান্তিনিকেতনের আদলে উঠানে তিনটি আমগাছ। ইটের গাঁথুনি ও দেওয়ালের নকশায় রয়েছে পর্যাপ্ত আলো প্রবেশের ব্যবস্থা। শ্রেণীকক্ষ থেকেই রোদ-বৃষ্টি উপভোগের সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
-
বড়াল বিদ্যানিকেতনে আছে মাটির তৈরি আকর্ষণীয় এক লাইব্রেরি।
-
সৃজনশীল স্থাপত্যশৈলীর বিদ্যালয়টিতে শিশুদের পড়ানো হয় হেসেখেলে, সুরের তালে।
-
পড়ালেখার পাশাপাশি এখানে শেখানো হয় নাচ, গান, আবৃত্তি, ছবি আঁকা ও বিতর্ক।
-
স্কুলটিতে লাইব্রেরির পাশাপাশি রয়েছে কম্পিউটার ল্যাবও।
-
তথ্যমতে, বড়াল নদ রক্ষা আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিশুদের পরিবেশ সচেতন করতে ২০১৯ সালে নিজ জমি ও অর্থায়নে বড়াল বিদ্যানিকেতন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন মিজানুর রহমান ও দিল আফরোজ দম্পতি।
-
পরিবেশ রক্ষায় এমন প্রচেষ্টায় মুগ্ধ হয়ে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন পরিবেশবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব।
-
স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, বড়াল রক্ষায় নেমে আমার কাছে মনে হলো এভাবে শুধু নদী রক্ষা করলেই চলবে না। এখানকার মানুষের চরমভাবে শিক্ষার প্রতি অনীহা, বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায় না, অভিভাবকরাও পাঠাতে আগ্রহ পান না। এ কারণ আমার কাছে মনে হলো, গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা ও এর পরিবেশ তাদের শিক্ষার দিকে টানে না।
-
এই প্রান্তিক পর্যায়ে টিনের চালা দিয়ে স্কুল শুরু করি। পরে আমার শ্যালিকা এবং সবশেষ স্থপতি ইকবাল হাবিব আমার পাশে দাঁড়ান। এরমধ্য দিয়ে আজকের বড়াল বিদ্যানিকেতন।
-
স্কুলটির নকশাকার ইকবাল হাবিব বলেন, পরিবেশ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে চাটমোহর গিয়েছিলাম। পরিবেশ আন্দোলনের সহকর্মী মিজানুর রহমান প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্কুল প্রতিষ্ঠা করছেন জেনে সেটি ভিজিট করি।
-
সেখানে দেখি গরমে টিনের ঘরে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন, প্রচণ্ড সীমাবদ্ধতার মধ্যে শিক্ষক ও স্কুল সংশ্লিষ্টদের প্রচেষ্টার ত্রুটি নেই। এই জায়গা থেকেই আমি স্কুলটির সঙ্গে থাকার চেষ্টা করি। একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন নকশায় স্কুলটি বড় উদাহরণ করার চিন্তাভাবনার জায়গা থেকে আজকের এই রূপ দেই। স্বদিচ্ছা থাকলে সীমিত ব্যয়েও নজরকাড়া স্থাপত্য ও পরিবেশ তৈরি করা যায়। এই বিদ্যালয়টি তার উদাহরণ।
-
তিনি আরও বলেন, সবশেষ স্থাপত্য নকশায় এটি আন্তর্জাতিক দুটি পুরস্কার অর্জন করে। সরকারি স্কুলগুলো যে পরিমাণ ব্যয়ে গড়া হয়, তার চেয়ে তুলনামূলক অনেক কমে ব্যয়ে এগুলো করা সম্ভব।
-
স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা দিল আফরোজ বলেন, স্কুলটি এমন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, চাইলেও এখানে বাণিজ্যিকভাবে এই প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব নয়। এখানকার প্রত্যেকটি মানুষ প্রতিনিয়ত দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে বাঁচে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে গতানুগতিক ধারার বাইরে এক ভিন্ন শিক্ষা দিতে আমরা এখানকার ছেলে মেয়েদের দায়িত্ব নিয়েছি। এখানে অল্পকিছু টাকা মাসিক ফি হিসেবে নেওয়া হয়।