আর্থিক খাতে আবার আতংক


প্রকাশিত: ০৫:২২ এএম, ১৪ মে ২০১৬

আবার সাইবার আক্রমণের খবর, আবার আতংক। বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নিরাপত্তার ইস্যুটি আবার সামনে। দেশের তিনটি ব্যাংকের তথ্য চুরির দাবি করেছে তুরস্কের ‘বোজকার্টলার’  নামের একটি হ্যাকার দল। ব্যাংক তিনটি হলো ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক। এ ছাড়া নেপালের দুটি ব্যাংকের তথ্য চুরির দাবিও তারা করেছে। চুরি যাওয়া তথ্যগুলো অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক ওয়েবসাইট ডেটাব্রিচ টুডেতে এ-সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো আরও একটি ব্যাংকে ম্যালওয়্যার (অনুপ্রবেশকারী প্রোগ্রাম) হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক মাধ্যম সুইফট। তবে ব্যাংকটির নাম বলেনি সংস্থাটি। যুক্তরাজ্যের বে সিস্টেমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ভিয়েতনামের একটি ব্যাংকে এই সাইবার আক্রমণ হয়েছে। এর আগে জানা গেলো কাতার ন্যাশনাল ব্যাংকবোতেও এমন ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কের মধ্যে এখনো তিনটি হ্যাকিং দল সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা করছে আন্তর্জাতিক সাইবার বিশেষজ্ঞরা। নেটওয়ার্ক ও লেনদেনের ওপর ভবিষ্যতে আবারও আঘাত আসার আশঙ্কা রয়েছে। নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে সাইবার হামলা ও টাকা চুরির ঘটনা তদন্ত করছে।

বিশ্বব্যাপী ব্যাংক, বিনিয়োগ, পুঁজিবাজারসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার আক্রমণ বাড়ছে। আর তা মোকাবেলায় নিরন্তর উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত আর্থিক খাত। নিরাপত্তা বাড়াতে, সম্পদ আর প্রতিষ্ঠান নিরাপদ রাখতে ক্লাউড বেজড সাইবার সেবা, বিগ ডাটা এনালিটিক্স, এডভান্সড অথেনটিকেশন এবং বায়োমেট্রিক্সসহ নানা প্রোগাম নিয়ে কাজ করছে প্রযুক্তিবিদরা।  আর এসবের সার কথা, প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগ। নিরন্তর বিনিয়োগ। কারণ তথ্য প্রযুক্তি খাত প্রতিনিয়তই বদলে যাচ্ছে। প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপারস বলছে ২০১৬ সালে এই ধরনের আক্রমণ ১৪ শতাংশ বেড়েছে।

এসব আক্রমণ বা চুরি তৎপরতায় যারা সন্দেহের তালিকায় শীর্ষে থাকে তাদের অন্যতম হলো নিকটতম তৃতীয় পক্ষ, অর্থাৎ ভেন্ডর গ্রুপ যাদের কাছ থেকে তথ্য প্রযুক্তিগত সহায়তা নেয়া হয়। চ্যালেঞ্জ এদের দিক থেকেই বেশি। তাই এখন প্রতিষ্ঠান সমূহের সবচেয়ে বেশি নজর এসব দিকেই। ভেন্ডরদের নজর যেমন এসব প্রতিষ্ঠানের দিকে, প্রতিষ্ঠান সমূহও নজরদারিতে রাখে ভেন্ডরদের। যত আস্থার সম্পর্ক থাক, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই আর এখন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনা, এটিএম মেশিন থেকে টাকা চুরির ঘটনার পর এবার যখন খবর আসল তুরস্ক থেকে নতুন করে হ্যাংকিং-এর ঘটনা ঘটেছে, তখন আশা করা যায় আমাদের দেশের সব প্রতিষ্ঠানও নজরদারিতে রাখবে স্ব স্ব ভেন্ডরদের। তবে সন্দেহ করেইতো আর কাজ সারা যায় না। প্রয়োজনে এই তৃতীয় পক্ষের সাথে সহযোগিতার কথাও ভুললে চলবে না।

বিশ্বব্যাপী মোবাইল ডিভাইস এবং অ্যাপসভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম বাড়ছে। এই মুহূর্তে আধুনিক ব্যাংকিং মানেই মোবাইল ব্যাংকিং। এবং বলা হচ্ছে কোনো কোনো দেশে বেশিরভাগ ব্যাংকিংই হচ্ছে মোবাইলের মাধ্যমে। বিশ্বব্যাপী গড়ে ৩০ ভাগ ব্যাংকিং হচ্ছে মোবাইল আর অ্যাপস এর মাধ্যমে।

তাই মোবাইল ব্যাংকিং এ নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যয় বাড়াচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এডভান্সড অথেনটিকেশন এই মোবাইল ব্যাংকিং-এ ঝুঁকি মোকাবেলার অন্যতম উপায় বা পদ্ধতি। পেমেন্ট সিস্টেমও এখন অনেক বেশি মোবাইল ফোন নির্ভর। তাই নজর আছে এদিকটায়ও, কিভাবে প্রতিটি পেমেন্ট-এর নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখা যায়। নিজের ভূমি, নিজের অফিস, নিজস্ব মানুষদের যতই নজরদারিতে রাখিনা কেন, বড় সমস্যা হতে পারে বাইরে থেকে, বিশেষ করে বিদেশ থেকে। বিদেশি রাষ্ট্র, সংগঠিত অপরাধ চক্র, জুয়াড়ি দল আর হ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ (হ্যাকারস) তাদের তৎপরতা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি বছরই এমনসব আক্রমণ বাড়ছে বিশ্বের নানা প্রান্তে।

তবে সবচেয়ে ভয়ংকর দিকটি হলো ঘরের শত্রু। আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং বিদায় নেয়া কর্মীরা হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর চ্যালেঞ্জ। এরা বাইরের শক্তির সাথে মিলে ঘটিয়ে দিতে পারে বড় ধরনের কোনো ঘটনা। প্রতিষ্ঠানের কর্মিরা অর্থের বিনিময়ে ভেন্ডর কিংবা হ্যাক্টিভিস্টদের সাথে হাত মেলাতে পারে, পিন কোড বা পাসওয়ার্ড শেয়ার করতে পারে, তথ্য পাচার করে দিতে পারে। স্পর্শকাতর স্থানে বা পদবী ধারীদের দিকে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের মতো নজরদারি আছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেলায়ও এমনটাই ভাবা হচ্ছে।  আর্থিক খাতের কর্মীরা বিচরণ করেন অর্থ জগতে। নিয়তই তারা লড়াই করেন লোভ আর লালাসার সাথে সততার চর্চার। কোথাও সামান্য ব্যত্যয় ঘটলে হয়ে যেতে পারে বড় ধরনের ক্ষতি, তার চেয়েও বড় কেলেংকারি।  

বিগ ডাটা এনালিটিক্স মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ লড়াই এখন সাধারণ বিষয়। আর প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা প্রতিষ্ঠানের স্তরে স্তরে কর্মীদের সচেতনতা বাড়ানো। তাদের সতর্ক করা, তাদের সামান্য ভুল, কিংবা আচরণগত সমস্যার কারণে বাইরে থেকে বা ভেতর থেকে ঘটে যেতে পারে অপূরণীয় ক্ষতি।

লেখক : বার্তা পরিচালক, একাত্তর টিভি

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।