কে সেরা : সাকিব না মুস্তাফিজ!


প্রকাশিত: ০৩:৫৩ এএম, ০২ মে ২০১৬

বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বল দুই নক্ষত্র। সাকিব আল হাসান এবং সময়ের সেরা তারকা কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। যার কাটার-স্লোয়ারে দিকভ্রান্ত হচ্ছে বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যানরা। দু’জনই খেলছেন ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগ আইপিএলে। সাকিব কলকাতা নাইটরাইডার্স এবং মুস্তাফিজ সানরাইজার্স হায়দারাবাদের হয়ে। আইপিএল শেষ হওয়ার পরই পৃথিবীর সবচেয়ে ঐতিহ্যপূর্ণ এবং সেরা ঘরোয়া ক্রিকেট আসর ইংলিশ কাউন্টিতে সাসেক্সের হয়ে খেলতে যাওয়ার কথা মুস্তাফিজের। যদিও মুস্তাফিজের আগে কাউন্টিতে খেলে এসেছেন সাকিব আল হাসান।

অভিষেকের পর ধীরে ধীরে নিজেকে মেলে ধরেছেন সাকিব। ব্যাট এবং বল হাতে সমান পারদর্শিতা সাকিবকে আলাদা একটা মর্যাদার আসনে বসিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে পুরো ক্রিকেট বিশ্বেরও নজর কাড়তে সক্ষম হন তিনি। তবে বিস্ময় বালক মুস্তাফিজুর রহমানকে সাকিবের মত ধীরে ধীরে নিজের আসন প্রতিষ্ঠা করতে হয়নি। অভিষেকের দিন থেকেই মুস্তাফিজ বন্দনায় মেতেছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। যা এখন অব্যাহত রয়েছে।

মাত্র এক বছরেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন আইপিএল মাতাচ্ছেন মুস্তাফিজ। একসময় যারা বাংলাদেশকে খাটো করে দেখতো এখন তারাই প্রশংসা বাক্যে ভাসাচ্ছেন। বলছেন, ‘মুস্তাফিজ বাংলাদেশের ভবিষ্যত। এই ধরনের প্রতিভাকে যেভাবে হোক, কালের গহ্বরে হারিয়ে যেতে দেয়া উচিত হবে না বিসিবির।’ অনেকে মুস্তাফিজকে বিশ্বসেরা বোলারদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যারা কিনা একসময় দাপুটে বোলার ছিলেন। শাসন করেছেন ক্রিকেটবিশ্ব। বিশ্ব ক্রিকেটের রথী-মহারথীরা যখন মুস্তাফিজকে নিয়ে মেতেছেন, তখন বাদ যাবেন কেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা! অন্যদের চেয়ে একটু এগিয়েই গেলেন তিনি। মুস্তাফিজকে ‘জাতীয় বীর’ বললেন প্রধানমন্ত্রী।

অভিষেক থেকেই আলোচনায় মুস্তাফিজ, তার বৈচিত্র্যময় বোলিং অ্যাকশনের কারণে। তরুণ এই উদীয়মান পেসারের কাটার বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানও খেলতে হিমশিম খেয়েছেন। ক্রিকেটের সব ফরম্যাটেই মুস্তাফিজ তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বিশ্বসেরা তারকা ব্যাটসম্যানদের উইকেট নিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টাইগার মুস্তাফিজের আগমন ঘটে মূলত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে। এই ফরম্যাটে অভিষেক ম্যাচেই তার প্রথম শিকার পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান শহীদ আফ্রিদি।

টি-টোয়েন্টির মত ওয়ানডেতেও মুস্তাফিজের অভিষেক বর্ণিল। ওয়ানডের অভিষেক ম্যাচেই তরুণ এই পেসার তুলে নিয়েছিলেন দুটি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মার উইকেট। গত বছরের ১৮ জুন মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ভারত-বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে রোহিতসহ পাঁচ উইকেট নেন মুস্তাফিজ।

শুধু ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতেই নয়, টেস্টেও মুস্তাফিজ ছিলেন আপন আলোয় উজ্জ্বল। টেস্ট অভিষেকেই তার প্রথম শিকার দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়াল খ্যাত হাশিম আমলা। ওই ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরাও হয়েছিলেন মুস্তাফিজ।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচে মুস্তাফিজ শিকার করেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের উইকেটটি। ওই ম্যাচে স্মিথ ছাড়াও মুস্তাফিজের শিকার হয়েছিলেন মিচেল মার্শ।

প্রথমবারের মত আইপিএল খেলতে গিয়ে অভিষেক ম্যাচে উইকেট তুলে নিজের জাত চিনিয়েছেন এই কাটার মাস্টার। ষষ্ঠ ম্যাচে পুনে সুপারজায়ান্টসের বিপক্ষে একেবারেই নিষ্প্রভ থাকলেও ৭ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে তো ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে তুলে নেন দুই উইকেট। তার মধ্যে ১৭টিই ডট বল ছিল। তারপর থেকে আলোচনার আরো কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসেন মুস্তাফিজ।

অন্যদিকে বাংলাদেশের আরেক নক্ষত্র সাকিব আল হাসান। এবারের আইপিএলে যদিও এখন পর্যন্ত নিজের জাত চেনাতে পারেননি। ৫ ম্যাচে খেলে বল হাতে তেমন সাফল্য দেখাতে পারেননি। ৫ ম্যাচে মাত্র ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তবে যখন মুস্তাফিজের নাম যখন কেউ শোনেনি তখন কিন্তু সাকিব একাই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে চিনিয়েছেন।

২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে সাকিব প্রথমবারের মত বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। সে ম্যাচে এক উইকেট ও ৩০ রান করেন। তারপর থেকে তাকে পেছানো তাকাতে হয়নি। এরপর থেকে টেস্টে, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দারুণভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছেন।

সাকিব এ পর্যন্ত ২৫৩ টি ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৮৩২৪ আর উইকেট পেয়েছেন ৪১৮টি। টেস্টে ৪২ ম্যাচে পেয়েছেন ১৪৭ উইকেট আর ওয়ানডে ১৫২ ম্যাচে ২০৬ উইকেট। সাকিবের টেস্ট সেরা ৩৬ রানে ৭ উইকেট। আর কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ ২৪ ম্যাচ খেলে উইকেট পেয়েছেন ৫২টি। এর মধ্যে ৯টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে উইকেট পেয়েছেন ২৬টি। সেরা ৪৩ রানে ৬ উইকেট।

যদিও কালের পরিক্রমায় সাকিবের চেয়ে মুস্তাফিজের নামই এখন মানুষের মুখে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়। মুস্তাফিজের বোলিং ছন্দে মুগ্ধ পুরো বিশ্ব। মুস্তাফিজের নাম বললে এখন সবাই এক নামে বাংলাদেশকে চেনে। আগে এক সময় সবার মুখে ছিল সাকিবের নাম। এখন বাংলাদেশ আর সাকিবের উপর নির্ভরশীল নয়। বাংলাদেশ দলে এখন এক ঝাঁক তরুণ এসে গেছে, যারা কি না যে কোনো সময় ম্যাচের রঙ বদলে দিতে পারেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মুস্তাফিজ। যার কাটারে বিধ্বস্ত হয়ে যেতে পারে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ।

মুস্তাফিজের কাটার, স্লোয়ারে যেভাবে ব্যাটসম্যানরা হিমশিম খায়, সাকিবের ঘূর্ণিতে হয়ত বা ততটা না। সময়ের ব্যবধানে সাকিব থেকে কাটার মাস্টার মুস্তাফিজেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছেন ব্যাটসম্যানদের কাছে। সুতরাং, সময়ের বিবেচনা করলে মুস্তাফিজই হচ্ছেন বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার।

বিষয়টা স্বীকার করে নিয়েছেন সাকিব নিজেও। গত বছর নভেম্বরে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার পর বাংলাদেশের প্রথম সারির দৈনিক প্রথম আলোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব এবং মাশরাফি- দু’জনই বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সর্বকালের সেরা প্রতিভা হচ্ছেন মুস্তাফিজ।’  কয়েকদিন আগে মাশরাফিও বলেছেন, আশরাফুলের চেয়েও বেশি প্রতিভাবান ক্রিকেটার হলেন মুস্তাফিজ। আইপিএলে মুস্তাফিজের দল সানরাইজার্স হায়দারাবাদের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার বলেছেন, ‘মুস্তাফিজের ক্রিকেট জ্ঞান খুবই উন্নত।’এখন দেখার পালা কতোদূর যান মুস্তাফিজ।

লেখক : সাংবাদিক

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।