পরস্পরকে ভালোবাসতে শিখি
সমগ্র বিশ্বের মানুষ যেন এক অশান্তি আর অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সময় অতিক্রম করছে। না ধর্মীয়ভাবে কেউ শান্তিতে আছে আর না সামাজিকভাবে। একজন অপর জনের ওপর বিনা কারণে চড়াও হচ্ছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ উপর্যুপরি দুঃখ-কষ্টের সীমাহীন আজাব ও বিপদাপদের সম্মুখীন এবং অনবরত এর লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছে।
সমস্যা সামাল দেয়ার সম্ভাব্য সকল প্রকার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু যত চেষ্টাই করা হোক না কেন ব্যাধি কেবল বাড়ছেই। প্রত্যেকটি নতুন বিপদ ও সমস্যা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি কষ্টদায়ক ও উৎকণ্ঠা বৃদ্ধির কারণ হয়ে থাকে। এক সমস্যার সমাধান সহস্র অস্থিরতা সৃষ্টির কারণ হচ্ছে।
ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ে প্রত্যেক দেশের সরকার শান্তির সন্ধানে রত আর তা অর্জনের জন্য সম্ভাব্য সকল প্রকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নামকাওয়াস্তে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় তার ভিত্তি সুবিবেচনা হয় না। আন্তরিকতার সঙ্গে কৃত সুবিবেচনাই মূলত শান্তির ভিত্তি হতে পারে।
পারস্পরিক ভালোবাসা ও প্রেম-প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সুবিবেচনা প্রদর্শন আবশ্যক। আর সুবিবেচনা হচ্ছে, মানুষের কথা ও কাজের মধ্যে যেন কোন ভিন্নতা না থাকে আর মানুষ যেন কখনো মিথ্যার আশ্রয় না নেয় বা ভুল কথা না বলে এবং সবার সাথে ন্যায়বিচার করে। কিন্তু সাধারণভাবে আমরা সত্যের এরূপ উন্নত মান কোথাও দেখতে পাই না।
আজ যদি বিশ্বের অবস্থা পর্যালোচনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে, একটি বিশাল শ্রেণি দারিদ্র্য ও অন্যায়-অবিচারের শিকার। পরিশেষে এসব অবিচারই ঘৃণা ও ক্ষোভে রূপান্তরিত হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বের শক্তিশালী জাতিসমূহের বিশ্বের সীমাহীন দারিদ্র্য ও অন্যায়-অবিচারের কোনো সমাধান খুঁজে বের না করার কারণ কী?
জাতিসংঘের উচ্চকক্ষের সভা ডেকে অন্যায় ও অন্যায্য কার্যকলাপের বিরুদ্ধে শুধু মাত্র দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা কোনো সমাধান নয়। ইসলামের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা মহানবি (সা.) এক্ষেত্রে একটি নীতিগত নির্দেশনা প্রদান করেছেন, তাহলো ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তোমাদের হৃদয়গুলোকে ঘৃণা থেকে পুরোপুরি মুক্ত করো।’ তাই আমরা যদি পরস্পরকে ভালোবাসতে শিখি আর মূল্যায়ন করি তাহলে সারা বিশ্ব হতে পারে শান্তিময়।
সমাজ ও রাষ্ট্রকে অশান্তি, জুলুম ও বিশৃঙ্খলামুক্ত করার নির্দেশ ইসলামে রয়েছে বলেই ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানুষ যদি শান্তি পেতে চায়, তাহলে তার নিজের ইচ্ছেমতো জীবন যাপন না করে আল্লাহর দেয়া বিধান মেনে চলতে হবে। তাই আল্লাহ তার প্রেরিত বিধানের নাম রেখেছেন ইসলাম বা শান্তি।
আজ বিশ্ববাসী শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করতে চাইলে পরস্পরের ভেতর প্রেম-প্রীতি, আন্তরিকতা এবং বিশ্বস্ততার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন, ভেদাভেদ ভুলে পরস্পরকে ভালোবাসি আর দেশের উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি।
কম্পিউটার চালিত অত্যাধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে মানুষ আজ কঠিনতম বাস্তবতার শিকার। সবাই চায় সচ্ছলতা, চায় শান্তি। বস্তুত মানুষ আত্মিক শান্তির পিয়াসী আর বেঁচে থাকার জন্য এটি অপরিহার্য। মহান আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম সেই অনন্ত শান্তির বাণীই প্রচার করছে। তাই তো শাশ্বত ধর্ম ইসলামের অনিন্দ্যসুন্দর আদর্শে মানুষ যুগ যুগ ধরে ইসলাম গ্রহণ করে আসছে।
বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই শান্তির প্রত্যাশা রাখে আর নিরাপত্তাও চায়, কিন্তু বিশ্লেষণ করলে মনে হয়, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের অধিকাংশই এই শান্তি লাভ করতে চায় না, তারা সেসব পথ অবলম্বন করতে সম্মত নয় যেপথে চললে শান্তি অর্জন সম্ভব। কেননা এই পথ যতটা সহজ ততটাই বন্ধুর। এই নীতি ও সমাধানের কথা বিশ্বস্রষ্টা পবিত্র কুরআনেও বর্ণনা করেছেন। আল্লাহপাক বলেন, ‘যারা ইমান আনে এবং যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করে প্রশান্তি লাভ করে।
শোন আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে’ (সুরা আর রাদ, আয়াত: ২৮)। বাস্তবতা এটাই যে, আজ মানবতা আল্লাহপাকের স্মরণ হতে দূরে চলে গেছে এবং আল্লাহতায়ালাকে ভুলে বসেছে। অনেকে তো আল্লাহপাকের অস্তিত্বই অস্বীকার করে আর এ কারণেই তারা এ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে চায় না এবং যারা এতে বিশ্বাস রাখে তারাও ধর্মের নামে ধর্ম প্রবর্তকদের আনীত সত্যিকার শিক্ষামালা বিকৃত করে এমনসব মনগড়া ব্যাখ্যা করছে যা সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে আলো-বাতাসকে পর্যন্ত বিষাক্ত করে ফেলেছে।
অথচ প্রত্যেক জাতিতে নবি এসেছে আর সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্যই তারা আবির্ভূত হয়েছেন। সবশেষে বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হন সর্বশ্রেষ্ঠ ও মানবদরদী রসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এসেছেন, যাতে তারা এক জাতিতে পরিণত হয় এবং ধরাপৃষ্ঠে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চাই সকল ধর্মের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার জীবন দ্বারা একথা প্রমাণ করে গিয়েছেন যে, ধর্মের নামে কোনো অন্যায়-অবিচার নেই। সকল ধর্মের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো শ্রদ্ধার বস্তু। মহানবির (সা.) শিক্ষাগুলোকে আজ আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করার সময় এসেছে। মহানবি হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) সমাজের সর্বক্ষেত্রে এবং সকল জাতির মাঝে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন।
আজ বিশ্ববাসী শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করতে চাইলে পরস্পরের ভেতর প্রেম-প্রীতি, আন্তরিকতা এবং বিশ্বস্ততার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন, ভেদাভেদ ভুলে পরস্পরকে ভালোবাসি আর দেশের উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি।
লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।
[email protected]
এইচআর/জিকেএস