এদেশ হত্যাকারীদের অভয়ারণ্য হতে পারে না


প্রকাশিত: ০৫:২৬ এএম, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের রেশ না কাটতেই একদিনেই তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। এটা নিশ্চিতভাবেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থাকেই তুলে ধরছে। এতে মানুষজন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। যা তাদের সার্বিক জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নিরাপত্তাবোধ নিয়ে একসময় সামগ্রিক আস্থাহীনতা তৈরি হবে, যার ফল নিশ্চিতভাবেই হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। দায়িত্বশীল মহলকে বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে। নিতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

গতকাল সোমবার সকালের দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে রুস্তম আলী পঞ্চায়েত নামে একজন সাবেক কারারক্ষী দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয়। এরপর  সন্ধ্যায় খোদ রাজধানীর কলাবাগানে বাড়িতে ঢোকে হত্যা করা হয় দুই জনকে। নিহত দুইজনের একজন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল অফিসার ও ইউএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান (৩৫) এবং তার বন্ধু তন্ময় মজুমদার। দুর্বৃত্তরা গৃহকর্তা জুলহাসের নামে পার্সেল আছে বলে বাসায় ঢোকে। এরপর কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাদেরকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ফাঁকা গুলি করে পালিয়ে যায়।

কারাগারের সামনে সাবেক কারারক্ষীকে হত্যার ঘটনায় খোদ কারানিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। যেখানে দুর্ধর্ষ বন্দি আছে, এমনকি যুদ্ধাপরাধের বিচারে  ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদেরও রাখা হয় বিশেষায়িত এই কারাগারে। সেখানে দিনের বেলায় মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে নির্বিঘ্নে চলে গেল! নিরাপত্তাহীনতার আর কতো নমুনা দেশবাসীকে দেখতে হবে? কলাবাগানের জোড়া খুনের ঘটনাটিও অত্যন্ত ভয়াবহ। রাজধানীতে দলবেঁধে বাসায় ঢোকে এভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে খুনিরা চলে যাবে আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চেয়ে চেয়ে দেখবে এটা হতে পারে না।

এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, একটি চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিক দেশের অর্থনীতি অগ্রসরমাণ, প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী, রেকর্ড পরিমাণ রিজার্ভ, রাজনৈতিক অস্থিরতাও নেই—এমন অবস্থায় গুপ্তহত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বিপরীতে যদি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে তাকাই তাহলে সেখানে এক হতাশাজনক চিত্রই দৃশ্যমান হয়। গত সাড়ে তিন মাসে দেড় হাজারের মতো খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে চলতি মাসের ২০ দিনেই ঘটেছে প্রায় ৩৫০টি হত্যাকাণ্ড। এসব আলামত তো ভালো নয়।  যারা একের পর এক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পারঙ্গমতার পরিচয় দিতে হবে। শুধু ঘটনা ঘটার পরই নয় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে আগেই নস্যাৎ করে দিতে হবে দৃর্বৃত্তদের নীলনকশা। একদিকে উন্নয়ন, অন্যদিকে চলবে একের পর এক হত্যাকাণ্ড- এই বৈপরীত্য মেনে নেওয়া যায় না।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।