এভাবে চলতে পারে না


প্রকাশিত: ০৪:২১ এএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৬

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে তার বাসা থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে রাস্তার ওপর কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। ইতোপূর্বে একই কায়দায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন অধ্যাপককে হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ শনিবার সকালে বাসা থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে রাস্তার ওপর কুপিয়ে হত্যা করা হলো রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। দেখা যাচ্ছে একটির পর একটি হত্যাকাণ্ড ঘটছে অন্যদিকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে দায় এড়ানোর প্রবণতা। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটি একবার ভাবা যায়! আর এ পর্যন্ত যা হয়েছে সেটিই বা কম কীসের। কত জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে মনে হবে এগুলো ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ নয়? দেশের মানুষের এটাই আজ করুণ জিজ্ঞাসা।

দেখা যাচ্ছে প্রগতিশীল মানুষদের ওপরই বার বার ঘাতকের খড়গ নেমে আসছে। লেখক, প্রকাশক, ব্লগার, বিদেশী, ধর্মযাজক, মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন-বাদ যাচ্ছে না কেউই। হত্যাকাণ্ডের ধরন একই। একই কায়দায় দায় স্বীকারের ঘটনাও। তাহলে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হয় কিভাবে? অধ্যাপক রেজাউল করিমকে নিয়ে গত ১৪ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরই চারজন শিক্ষক ঘাতকদের হাতে প্রাণ দিলেন।  ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর ঠিক একই কায়দায় খুন হন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম (৪৯)। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার সময় তাকে নগরীর বিনোদনপুর চৌদ্দপাই এলাকায় ভাড়া বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। পরে দুই দিন পর ৩ ফেব্রুয়ারি বাসার পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভোরে প্রাতভ্রমণে বের হলে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুরের নিজ বাসভবনের কাছে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আওয়ামীপন্থী অর্থনীতির অধ্যাপক ড. ইউনুসকে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ হত্যা করা হলো এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে।

মোটর সাইকেলে এসে ঘাতকরা তাদের হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছে। হত্যাকারী যেই হোক তারা ভিনগ্রহের বাসিন্দা নন। কিন্তু তারা দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে জনারণ্যে কিভাবে হত্যাকাণ্ড চালায় এবং নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় সেটিই ভাবিয়ে তুলছে মানুষজনকে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের গাফিলতির কারণেই রাজশাহীতে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার যারা তারা আগে থেকেই নানাভাবে হুমকিপ্রাপ্ত ছিলেন। এরপরও কোনো রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

হত্যাকাণ্ডের পর আইএস-এর পক্ষ থেকে দায় স্বীকারের বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে। সরকার ‘দেশে জঙ্গি নেই, আইএস নেই’ বলে আসলেও এই হত্যাকাণ্ডগুলো তাহলে কারা ঘটায়? কারা এসব হত্যার বেনিফিশিয়ারি ভাবতে হবে সেটিও। দেখা যাচ্ছে, প্রগতিশীলরাই বার বার হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে সমাজে একটি ভয়ের সংস্কৃতি চালু করার অপচেষ্টা চলছে। যেটা সম্ভব হলে উন্নয়ন, অগ্রগতি সবকিছুতেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। অপরাধীদের যদি এই বার্তা পৌঁছে দেয়া যায় যে, অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না- তাহলে অপরাধ কমতে বাধ্য। সেই বার্তাটি পৌঁছে দিতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। অনেক হয়েছে। এভাবে আর চলতে পারে না। চলতে দেয়া উচিত নয়। অন্ধ হলেই যে প্রলয় বন্ধ থাকে না-এই কথাটির মর্ম উপলব্ধি করে এগিয়ে যেতে হবে সেভাবেই।  

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।