জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কঠোর হোন


প্রকাশিত: ০২:০৬ এএম, ২২ এপ্রিল ২০১৬

এটা অত্যন্ত ভয়াবহ ব্যাপার যে জীবনরক্ষাকারী ওষুধও এখন ভেজাল ও মানহীন। এসব ওষুধ খেলে রোগ-বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তো দূরের কথা উল্টো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে।নকল ও ভেজাল ওষুধ নিয়ে কম কথা হয়নি। কিন্তু এর বিপরীতে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা সন্তোষজনক নয়। তবে আশার  কথা হচ্ছে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির কাছ থেকে এমন বেহাল চিত্র পেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৭৬ সালের জিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস) নীতিমালা অনুসরণ করে মানসম্পন্ন উপায়ে ওষুধ প্রস্তুত না করাসহ আরো কিছু কারণে বুধবার দেশের ২০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলসহ মোট ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে।এর আগে ওই কমিটির উদ্যোগে ওষুধ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি পরিদর্শন টিম ৮৪টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। বুধবার এক সভায় ওই প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার পর ওই কমিটি এসব সুপারিশ করে। এ সুপারিশ কার্যকরের জন্য তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এখন এ সংক্রান্ত সুপারিশ যতো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয় দেশ ও জাতির জন্য তা ততোই মঙ্গল।

রোগব্যাধি হলে ওষুধ খেয়ে জীবন রক্ষা করে মানুষ। কিন্তু সেই ওষুধেও ভেজাল থাকাটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মানহীন ও ভেজাল ওষুধ খেয়ে রোগ সারার বদলে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, দেশে ওষুধের উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত কোনো স্তরেই সরকারি পরীক্ষাগারে মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না। বিপণনের পর অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠান। তখন ওষুধের মান জানা যায়। এর আগ পর্যন্ত পরীক্ষাহীন, মান না জানা ওষুধই ব্যবহার করে মানুষ। এভাবেই ওষুধ কম্পানিগুলো এ দেশের মানুষকে রীতিমতো গিনিপিগে পরিণত করেছে।

এক হিসাব দেখা যায়, প্রতিবছর ১২ হাজার আইটেমের ওষুধ বাজারে আসছে। কিন্তু ওষুধ প্রশাসনের যে লোকবল ও যন্ত্রপাতি রয়েছে তাতে তারা মাত্র সাড়ে তিন হাজার আইটেম ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করতে পারে। বাকি ৭০ শতাংশ ওষুধের মান যাচাইহীন অবস্থায় রয়ে যায়।

দুঃখজনক হচ্ছে যে, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-র মতে, ওষুধ উদ্ভাবনকারী ছাড়া জেনেরিক বা বর্গনামে ওষুধ প্রস্তুত করাই হচ্ছে নকল ওষুধ। তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি দেশেই বর্গনামে ওষুধ প্রস্তুত চলছে। ফলে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। অনেক কম্পানি জেনেশুনে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। অথচ বাংলাদেশে ওষুধ একটি বিকাশমান শিল্প।১০৭টি দেশে আমাদের তৈরি ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতেও ওষুধশিল্প বড় ভূমিকা রাখছে। শুধু তাই নয়, জীবন রক্ষাকারী মূল্যবান অনেক ওষুধও এখন আমাদের দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় শুধু জনস্বার্থই নয়, কম্পানিগুলোর নিজ স্বার্থেও ওষুধের মান ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরি।

মনে রাখা দরকার ওষুধ কোনো সাধারণ পণ্য নয়। জীবন রক্ষার জন্য ওষুধের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য ওষুধ কম্পানিগুলো যাতে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেটি জোর নজরদারিতে রাখতে হবে। যে সমস্ত কম্পানির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এই চক্র যেন কিছুতেই ছাড় না পায় সেটি দেখতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে সরকারের অর্জন কম নয়। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে সেটি ভেস্তে যাক এটি কাম্য হতে পারে না। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এ বিষয়ে আমরা সরকারের কঠোর অবস্থান দেখতে চাই।  

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।