মুসলিম বিদ্বেষী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম সমর্থন!


প্রকাশিত: ০১:৫৮ এএম, ২২ এপ্রিল ২০১৬

পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর দেশটির আসন্ন নির্বাচনে আগুন জ্বলছে বলে ‘ট্রাম্পফায়ার’ নামক একটি নতুন শব্দের উদ্ভব ঘটে গেছে, যা ইতোমধ্যে পরিচিত হয়ে উঠেছে সবার কাছে। আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে চেয়ে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন সব খানে, তার আঁচ লেগে গেছে জাতিসংঘ নামক পৃথিবীর কর্তা-প্রতিষ্ঠানটির গায়েও। ট্রাম্প-এর বক্তব্য ধর্মীয় গোঁড়ামি, মুসলিম বিদ্বেষপূর্ণ- জাতিসংঘ ঠিক এভাবেই সনাক্ত করতে পেরেছে ভদ্রলোকের মানসিকতাকে। ট্রাম্প-এর নির্বাচনী নীতির কঠোর সমালোচনা করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার টু দ্য পয়েন্টে বলেছেন, জনাব ট্রাম্প-মুসলিমদের নির্যাতন করা সমর্থন করেন; মুসলিমবিরোধী নীতি সমর্থন করেন; যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান।

পোপ ফ্রাঁসিস মুসলিম বিরোধী এসব বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘খ্রিস্টান নন’ বলে রায় দিয়েছেন এভাবে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি সেতু না গড়ে মানুষের মাঝে দেয়াল গড়তে চায়, তাহলে সে খ্রিস্টান নয়।’ বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, তবে এটাই সত্যি যে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাচনী সভায় বলেছেন, তথ্য আদায়ের জন্য ওয়াটার বোর্ডিং (পানিতে ডুবিয়ে মেরে ফেলার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা)-এর মতো বিভিন্ন কঠিন পদ্ধতিতে সিআইএ যে নির্যাতন করত, তাকে তিনি সমর্থন করেন। ওবামা প্রশাসন এসব জঘন্য পদ্ধতি বন্ধ করে দিয়েছে। ট্রাম্প হোয়াইট হাউস দখল করলে আবার চালু করবেন। সব শুনে মুসলিমদের তো বটেই, সব ধর্মের অভিবাসীদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে ট্রাম্পকে সমর্থন দিচ্ছেন মুসলিম, শিখ আর হিন্দুরা, এরকম খবরে চমকে উঠতেই হয়। এও সত্যি নাকি?

সত্যি! বিবিসি এরকম কিছু সমর্থককে তুলে এনেছে পাদপ্রদীপের আলোতে। ন্যুয়র্ক থেকে প্রকাশিত নিউজ ইন্ডিয়া টাইমস এবং দেশি টক পত্রিকা দু’টির প্রকাশক পারিখ ওয়ার্ল্ড মিডিয়ার কর্ণধার জনাব সুধীর পারিখ জোর গলায় সাক্ষাতকার দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপারে তার মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তাকে (ট্রাম্পকে) মনে হচ্ছে থামানো যাবে না। আমার সম্প্রদায়ের এক অংশ হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন করছে বটে, তবে অন্য অংশকেও তো সমর্থন দিতে হবে, এতে আমাদের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে আর ওয়াশিংটনের ক্ষমতার বলয়ে যাতায়াত সুগম হবে।’  

বিষয়টি বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়েই দেখতে হবে আসলে। ভারত থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়ে এখানে অভিবাসী হয়ে ওঠা ভারতীয়রা ঐতিহ্যগত ভাবেই ডেমোক্রাট দলকে সমর্থন করে। যদিও এই দলের মতাদর্শ কিংবা প্রার্থীর ভালমন্দ নিয়ে মাথা ঘামানোর উৎসাহ বা প্রয়োজন বোধ করার দরকার পড়েনি এর আগে। আমেরিকা-ভারত নিউক্লিয়ার চুক্তির কারণে জর্জ ডব্লিউ বুশ ভারতীয়দের কাছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সমর্থিতদের অন্যতম। বুশ ছাড়া আর কোনো প্রার্থীকে নিয়ে উচ্চবাচ্য না করলেও রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিতে মুখ খুলছেন ভারতীয় হিন্দুরা। জনাব পারিখের মতে, ট্রাম্প মুসলমানদের বিরুদ্ধে যা বলছেন তা হয়তো হিন্দুদের পছন্দ হচ্ছে। আমেরিকাতে মুসলমানরা যদি না আসতে পারে, মানে ট্রাম্প যদি মুসলমানদের জন্য দরজা বন্ধ করেই দেন, তবে অন্যদের কপাল খুলে যাবে। এ তো সহজ হিসাব।  

একই রকম সেন্টিমেন্ট দেখা গেছে ট্রাম্প সমর্থক শিখ গ্রুপের মাঝে। এই গ্রুপের নেতা জেসে সিং ত্রিশ বছর আগে এসেছিলেন আমেরিকাতে। তিনি এখন চাচ্ছেন না আর কেউ আমেরিকায় আসুক, কেননা এতে আমেরিকার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশংকা আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ‘আমেরিকান’ তিনি এর আগে আর দেখেননি। কাজেই, ট্রাম্প যখন বলেন আমেরিকা আবার মহান হবে, জেসে সিং এবং তার গ্রুপের সদস্যরা পূর্ণ সমর্থন জানাতে প্রস্তুত হয়ে যান। আমেরিকান হিসেবেই ট্রাম্প বৈধ অভিবাসনের পক্ষে আছেন এবং ভারতসহ বিশ্বের সব দেশে ব্যবসা করছেন, কেননা ট্রাম্প সংস্কৃতির বৈচিত্র আর বিভিন্ন দেশের বিষয়টা নির্বাচনী দৌড়ে শামিল আর সব প্রার্থীদের চেয়ে ভাল বোঝেন বলে তাদের মনে হয়েছে।

স্বয়ং আমেরিকান ভোটাররাও আমেরিকাতে মুসলিমদের আসা বন্ধ করার জন্যই ট্রাম্পকে ‘ভালবেসে’ ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে, কেননা জরিপের পারদ কেবলি চড়ছে ট্রাম্পের। সে না হয় হ’ল। দক্ষিণ ক্যারোলিনাতে হিজাবধারী এক মুসলিম নারীকে রীতিমত ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়া হ’ল ট্রাম্পের সমাবেশ থেকে এবং এরপরও মুসলিম আমেরিকানরা কেন ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন? দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স নামের একটি মুসলিম অধিকার ও এডভোকেসি গ্রুপ ছয় প্রদেশের সুপার ট্যুয়েসডে পোল-এর ১,৮৫০ জন মুসলিম ভোটের সমর্থনের উপর জরিপ চালিয়েছিল এই মার্চে। হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে শতকরা ৪৬ ভাগ আর বার্নি সান্ডার্সের পক্ষে ২৫ ভাগ সমর্থন দেখে অবাক না হলেও রীতিমত চমকে উঠতে হয়েছে মুসলিমদের শতকরা ১১ ভাগ সমর্থন ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে দেখে।  

পাকিস্তানী আমেরিকান সাজিদ তাহির ট্রাম্পের সমর্থনে দল দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। সিরিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের ঠেকাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে ‘দেয়াল’  তুলতে চাচ্ছেন, তা তাকে মুগ্ধ করেছে। কেননা, তিনি একজন ‘আমেরিকান’। কি বলেছেন সাজিদ তাহির? Ô I am an American myself and I believe it should be about (putting) America first, I am not in favour of anybody coming here and doing things against America.Õ ডোনাল্ড ট্রাম্প কাজের সুযোগ সৃষ্টি করবেন, অর্থনীতিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন, তখন সংখ্যালঘুরাও সুবিধা পাবে- এই যুক্তিতেই মূলত সমর্থন দিচ্ছেন মুসলিমরা। আর ট্রাম্প যা বলছেন, তা আসলে ‘ঘূর্ণি’ সৃষ্টির জন্য বলছেন, মুসলিমদের নিয়ে বলছেন যখন তখন তা সব মুসলমান বা সব আমেরিকান মুসলমানদের নিয়ে বলছেন না বলেই তারা বিশ্বাস করছেন। সিরিয়ার অভিবাসী সমস্যাকে সামনে রেখে এরকম কিছু কথা তাকে বলতে হচ্ছে। ট্রাম্প যেমনটি বলছেন, যাচাই না করে আমেরিকাতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না, ঠিক সেভাবেই বিশ্বাস করছেন আমেরিকান মুসলিমরা। কেননা, ‘সন্ত্রাসী’ মুসলিমদের আমেরিকায় আসা বন্ধ করে সুখে-শান্তিতে বাস করতে তারাও চান। ‘ইসলামোফোবিয়া’ আমেরিকার এবারের নির্বাচনে তুরুপের তাস, তা ভাল করেই বুঝেছেন বিজনেস টাইকুন ডোনাল্ড ট্রাম্প, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ব্যবসা করছেন যিনি মুসলিমদের সাথেই।

লেখক : শিশুসাহিত্যিক

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।