কৃষিই হোক অর্থনীতির মূল ভিত্তি


প্রকাশিত: ০৪:৫৪ এএম, ২০ এপ্রিল ২০১৬

‘মাঠে কাজ করে যে কৃষক মানুষের ক্ষুধা নিবারণের অন্ন জোগান, তাঁদের মাথায় তুলে রাখা উচিত’- বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মন্তব্য করেছেন তা যথার্থ। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশকে কৃষির উপর ভর করেই দাঁড়াতে হবে। এজন্য কৃষকদের জন্য যা যা করণীয় আছে সরকারকে সেটি করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকেলে রাজধানীতে কৃষক লীগের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায়  কৃষকদের উন্নতিকল্পে বেশকিছু কথা বলেছেন যা প্রণিধানযোগ্য। সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আমি মনে করি, আমাদের ছাত্রছাত্রী যারা স্কুলে পড়ে, কলেজে পড়ে, তাদের ফসলের মাঠে নিয়ে যাওয়া দরকার। কারণ এসব কৃষিপণ্য কিভাবে উৎপাদন হয় হাতে-কলমে তা তাদের অনুশীলন করা দরকার, জানা দরকার। তারা বসে বসে ভালো জিনিস খাবে আর ওটা কোথা থেকে আসবে তা জানবে না, গাছটাও চিনবে না, ধানগাছের তক্তা হয় কি না, সেটার খোঁজ করবে। আসলে সেটাই হয়ে যাবে। আমি মনে করি, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অন্তত মাসে এক দিন কৃষি মাঠে নিয়ে যাওয়া উচিত। তাদের কিছু কাজও করানো উচিত, হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া উচিত। তার জন্য যদি কিছু এক্সট্রা নম্বর দিতে হয় তারও ব্যবস্থা  করা উচিত। যাতে এই কৃষিকাজটাকে যেন কেউ ছোট চোখে না দেখে।’ এছাড়া যততত্র শিল্পকারখানা স্থাপন করে বনউজাড় ও কৃষিজমি নষ্ট না করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। কৃষি উৎপাদন করে কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকেও তাগিদ দেন তিনি। এ সবই আশার কথা।

নানাভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কৃষিখাতেও এসেছে প্রভূত উন্নতি। বাংলাদেশ এখন উদ্ধৃত্ত খাদ্য উৎপাদন করে। আমদানি নির্ভর দেশ থেকে আমরা এখন খাদ্য রপ্তানিও করছি। তবে কৃষকের প্রকৃত উন্নতি কতোটা  হয়েছে সেটি কিন্তু ভেবে দেখা দরকার। কৃষক এখনো ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না। অনেকক্ষেত্রে উৎপাদন খরচও জোটেনা। মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভের গুড় নিয়ে যায়। তাছাড়া সার, বীজ, বিদ্যুৎ প্রাপ্তি নিয়েও রয়েছে সমস্যা। নকল ও ভেজাল সারে বাজার সয়লাব। একই অবস্থা বীজের ক্ষেত্রেও। বীজ ভাল না হলে ফসলও ভালো হবে না। কিন্তু এগুলো নিশ্চিত করবে কে? এসব সমস্যার কারণে চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষক। এটা শুভলক্ষণ নয়। আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছি বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বসে থাকলে চলবে না। বরং এটাকে ধরে রাখার জন্য চেষ্টা চালাতে হবে। মনে রাখতে হবে কৃষিতে পূর্ণ মনোযোগ দিলে উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব। এতে সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্রও পাল্টে যেতে বাধ্য।

উৎপাদিত ফসল যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য হিমাগার গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে এটা করতেই হবে। যে অঞ্চলে সেসব ফসল উৎপাদন হয় সেটির ওপর ভিত্তি করে সেই ধরনের শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে। কত টাকা কতভাবে নষ্ট হচ্ছে-অথচ কৃষিতে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাড়ালে এখান থেকে বিরাট রিটার্ন আসবে যা আমাদের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দিবে। আমাদের লক্ষ হোক সেইদিকে।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।