মাহে রমজান
ইবাদতে আনি আমূল পরিবর্তন
আলহামদুলিল্লাহ! পবিত্র মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশকের দ্বিতীয় দিনের রোজা আমরা অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পাচ্ছি। মহান আল্লাহপাকের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, তিনি আমাদেরকে সুস্থতার সাথে রমজানের রোজাগুলোর রাখার সৌভাগ্য দান করছেন।
দ্রুতই রমজানের দিনগুলো চলে যাচ্ছে, কিন্তু পুণ্যেকর্মে রয়েছে এখনও অনেক ঘাটতি। অবশিষ্ট দিনগুলোতে ইবাদতে আনতে হবে আমূল পরিবর্তন। সব ধরনের পুণ্যকর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। সুনিয়ন্ত্রিত সুখাদ্য যেমন দেহকে সুস্থ, সবল ও আনন্দময় করে, তেমনি সুনিয়ন্ত্রিত ইসলামি রোজা আত্মাকে সুস্থ, সতেজ ও আল্লাহ প্রেমিকে পরিণত করে। আমাদের রোজা রাখা, ইবাদত বন্দেগি করা সবই আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কিন্তু আমরা আসলে তার আদেশ-নিষেধের ওপর কতটা অনুসরণ করছি তা যাচাই করার বিষয়। আমাদের রোজা এবং ইবাদত যদি প্রকৃত অর্থেই আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে তিনি তার কৃপার চাদরে আবৃত করে নিবেন। আমরা যদি সবসময় সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করি তাহলে তিনিও আমাদেরকে স্মরণ করবেন এবং বিপদআপদে রক্ষা করবেন।
মাহে রমজানের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত বড়ই কল্যাণ ও বরকতমণ্ডিত। রমজানে কুরআনের আলোয় নিজেকে আলোকিত করার কল্যাণমণ্ডিত হবার এক উত্তম সময়। সে নিতান্তই দুর্ভাগা যে এসব বরকত ও কল্যাণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখে আর অন্যান্য দিনের মতই রোজার দিনগুলো অতিবাহিত করে।
একটি বিষয় আমাদেরকে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, এ মাসে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন। তাই রমজান এবং পবিত্র কুরআন করিমের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেভাবে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, ‘রমজান সেই মাস যাতে নাযেল করা হয়েছে কোরআন যা মানবজাতির জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াত ও ফুরকান (অর্থাৎ হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী) বিষয়ক সুস্পষ্ট প্রমাণাদি। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এই মাসকে পায়, সে যেন এতে রোজা রাখে, কিন্তু যে কেউ রুগ্ন এবং সফরে থাকে তাহলে অন্য দিন গণনা পূর্ণ করতে হবে, আল্লাহ তোমারে জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান এবং তোমাদের জন্য কাঠিন্য চান না, এবং যেন তোমরা গণনা পূর্ণ কর এবং আল্লাহর মহিমা কীর্তন কর, এই জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হেদায়াতে দিয়েছেন এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)।
পবিত্র রমজান মাসেই মহানবি (সা.) আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে পবিত্র কুরআনের প্রথম বাণী লাভ করেছিলেন। এ রমজান মাসেই হজরত জিবরাইল (আ.) বছরের পূর্বে অবতীর্ণ হওয়া সমস্ত বাণী মহানবির (সা.) কাছে পুনরাবৃত্তি করতেন। এ ব্যবস্থা মহানবির (সা.) জীবনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
এছাড়া ‘মহানবির (সা.) জীবনের শেষ বছরের রমজান মাসে হজরত জিবরাইল (আ.) পূর্ণ কুরআনকে মহানবির (সা.) কাছে দু’বার পাঠ করে শুনান’ (বুখারি)।
এ থেকে বুঝা যায়, রমজানের সাথে কুরআনের সম্পর্ক সুগভীর। এ পবিত্র মাসে রোজার কল্যাণ, আজ্ঞানুবর্তিতা এবং কুরআন পাঠ এই সব ইবাদত একত্রে মানবচিত্তে এক আশ্চর্য আধ্যাত্মিক অবস্থা সৃষ্টি করে।
এ প্রসঙ্গে মহানবি (সা.) বলেন, ‘রমজান ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, খোদা! আমি তাকে পানাহার এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিবৃত্ত রেখেছি, তাই তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। আর কুরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রে নিদ্রা হতে বিরত রেখেছি এবং তাকে ঘুমাতে দেইনি, এ কারণে তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে’ (বায়হাকি)।
যেহেতু আমরা রমজানের রোজাগুলো ঠিকভাবেই রাখছি, তেমনিভাবে যদি কুরআন পাঠের প্রতি এবং এর মর্মার্থ উপলব্ধি করার দিকে মনোযোগী হই তাহলে এ কুরআনই আমাদের সুপারিশের কারণ হবে।
এছাড়া রোজা রেখে কুরআন করিম পাঠ করা, এর অর্থ বুঝতে চেষ্টা করা এবং এর অনুশাসনাদি পালন করার মাধ্যমে মানুষের আধ্যাত্মিক দর্শনশক্তি সতেজ হয়। সে শয়তানি চিন্তাভাবনা ও প্রভাব হতে নিরাপদ থাকে। অধিকন্তু মানুষ এক অনাবিল আধ্যাত্মিক প্রশান্তি এবং পরম সম্পদ লাভ করে, যা শুধু অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই উপলব্ধি করা যায়, এটি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। এই পবিত্র মাসে ইবাদত বন্দেগি ও দান খয়রাত, কুরআন পাঠসহ সব কিছুর মাঝে নতুন এক প্রেরণা সৃষ্টি হয়।
মুমিন মুত্তাকি বান্দারা এই মাসে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি দান খয়রাত করে থাকেন এবং গরীব অসহায়দের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন।
আল্লাহতায়ালার কাছে আমাদের এই কামনা, তিনি যেন আমাদের এই দান খয়রাত, ইবাদত বন্দেগি, সিয়াম সাধনাকে কবুল করে আমাদেরকে মাগফিরাত দান করেন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]
এইচআর/এমএস