মাহে রমজান
রোজা ঝগড়া বিবাদ দূর করে
আজ রহমতের দশকের অষ্টম দিন। মুমিনের জন্য পবিত্র এ রমজান মাস বসন্তের মাস। দীর্ঘ এগারো মাসে অন্তরে যে মরীচিকার সৃষ্টি হয় তা দূর করতেই রমজানের সিয়াম। তাই একজন মুমিন রহমতের বারিধারায় পবিত্র করে নেয় তার অন্তরাত্মা।
এ মাসে প্রতিটি মুমিনের হৃদয় যেমন লাভ করে আল্লাহপাকের জান্নাতের প্রশান্তি তেমনি তাদের পুরো পরিবারও হয়ে ওঠে জান্নাতি পরিবার।
আমরা যদি আমাদের পরিবারগুলোকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করে জান্নাত সদৃশ বানাতে চাই তাহলে পবিত্র এ রমজান থেকে লাভবান হতে হবে।
রাতগুলোকে বিশেষ ইবাদতে মশগুল থাকতে হবে। আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ রোজাদার হতে হবে। ঝগড়া বিবাদ ও কলহ দ্বন্দ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। উত্তেজিত হওয়া ও উগ্র আচরণ প্রদর্শন করা থেকে স্বীয় প্রবৃত্তিকে পবিত্র রাখতে হবে। কেউ গালি দিলে প্রতিবাদী না হয়ে বরং বলতে হবে আমি রোজাদার। পবিত্র মাহে রমজান আমাদের কাছে এমনটিই আশা করে।
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য রমজানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি)
তাই পরিবারের কর্তা বলে শুধু নিজে রোজা রাখলেই চলবে না বরং পুরো পরিবারকে সাথে নিয়ে রমজানের রোজা রাখতে হবে এবং অন্যান্য ইবাদতেও তাদেরকে শামিল করতে হবে।
আমরা যদি রাতে কিছুটা আগে ঘুমাতে যাই তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করাটা আমাদের জন্য সহজ হবে।
যিনি পরিবারের প্রধান তাকে সন্তানদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে, পরিবারের সবাই যেন রুটিন অনুযায়ী রমজান মাস অতিবাহিত করে। রমজানে শুধু নিজে আল্লাহপাকের আদেশ পালন করলাম আর অন্যরা পালন করলো না তা হতে পারে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন: ‘হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে আগুন থেকে বাঁচাও’ (সুরা তাহরিম: আয়াত ৬)।
তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য সে যেন কেবল নিজেই মুত্তাকি না হয় বরং সে নিজে এবং পরিবারের সকলকে পুণ্যবান-মুত্তাকি করে গড়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। সব ধরনের পাপ কাজ থেকে পরিবারের সদস্যদেরকে রক্ষার জন্য তাদেরকে যেন সঠিকভাবে শিক্ষা দেয়। আমরা যদি সন্তানদেরকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় গড়ে তুলতে পারি তাহলে পরিবার, সমাজ, জাতি, দেশ এককথায় সর্বত্রই শান্তি বিরাজ করবে এটাই নিশ্চিত।
আমরা যদি মাহে রমজান থেকে অধিক কল্যাণমণ্ডিত হতে চাই তাহলে পুরো পরিবারকে রোজার মাহাত্ম বুঝিয়ে তাদেরকে ইবাদতে মগ্ন করাতে হবে। এছাড়া রমজান মাস হচ্ছে প্রশিক্ষণের মাস। এ মাসে সন্তানদের যদি সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া যায় তাহলে সন্তানরা রমজান চলে গেলেও এর ওপর আমল করার চেষ্টা করবে।
আমরা যদি আল্লাহপাকের আদেশ নিষেধ পরিপূর্ণভাবে প্রথমে নিজেরা পালন করে জীবন অতিবাহিত করি এবং সন্তানদেরকেও সেভাবে গড়ে তুলি তাহলে আমাদের ঘরগুলো জান্নাতি ঘরে পরিণত হতে পারে। নিজেদের পরিবারগুলোকে জান্নাতি পরিবারের অন্তর্ভূক্ত করাতে চাইলে পবিত্র রমজান মাসকে কাজে লাগাতে হবে এবং সবাইকে সাথে নিয়ে ইবাদতে রত হতে হবে।
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে মাহে রমজান থেকে পরিপূর্ণ ফায়দা হাসিল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]
এইচআর/জিকেএস