নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রদূত শেখ হাসিনা

তাপস হালদার
তাপস হালদার তাপস হালদার
প্রকাশিত: ১০:৩০ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৪

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস।১৯৭৭ সাল থেকে জাতিসংঘ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়।এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘নারীর সমাধিকার,সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।’

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় বলেছেন,‘বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,অর্ধেক তার নর।'দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী অর্থাৎ নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়া একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পরই নারীর যথার্থ মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেন।যার কারণে নারীরা এখন সামাজিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯(৩) অনুচ্ছেদ,জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।শেখ হাসিনার সরকার নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়ন করেছে।সন্তানের পরিচয় নির্ধারণে বাবার নামের সাথে মায়ের নাম যুক্ত করা হয়েছে।যা নারী মর্যাদার ক্ষেত্রে এক অনন্য মাইলফলক।রাজনীতি,কূটনীতি,আইন শৃঙ্খলা,ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা ব্যাপক হারে এগিয়ে এসেছে।গ্রাম কিংবা শহরে পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে।

গ্রামীণ ও প্রান্তিক নারীদের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার পদক্ষেপ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-(ক)নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে গঠিত ‘জয়িতা ফাউন্ডেশন’,(খ)দরিদ্র,দুস্থ ও অসহায় নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে মহিলা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত ‘অঙ্গনা’,(গ)মাতৃত্বকালীন মায়েদের জন্য ‘স্বপ্ন প্যাকেজ’ ভাতা (ঘ)গ্রামীণ নারীর আয়বর্ধক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে মহিলা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রশিক্ষণ ও ঋণ বিতরণ (ঙ)কর্মজীবী নারীদের আবাসন সুবিধার জন্য ‘কর্মজীবি মহিলা হোস্টেল’ (চ)গার্মেন্টসে কর্মরত নারীদের স্বল্প ব্যয়ে আবাসন সুবিধার জন্য ঢাকা,সাভার ও আশুলিয়ায় হোস্টেল নির্মান,(ছ)কর্মজীবী মায়ের সন্তানদের জন্য ঢাকা সহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে ‘ডে-কেয়ার’ সেন্টার চালু,(জ)পল্লী এলাকার নারীদের ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ‘পল্লী মাতৃ কর্মসূচি’ সহ বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।সমাজের পিছিয়ে পড়া অসহায় নারীদের জন্য ভিজিএফ,ভিজিডি,দুস্থ ভাতা,বয়স্ক ভাতা,মাতৃত্বকালীন ও গর্ভকালীন মায়েদের ভাতা,বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তদের ভাতা,কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচির মতো বিভিন্ন জনবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

নারীদের দক্ষ জনসম্পদে পরিনত করতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।কারিগরি প্রশিক্ষণ,কৃষিকাজ,পশুপালন,বানিজ্যিক খামার সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা তৈরিতে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করছে।সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে শিক্ষার ব্যবস্থা।শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট গঠন করে প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত নারীদের শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।যার কারণে নারী শিক্ষার হার ৫০ দশমিক ৫৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করে নারীরা দক্ষ মানব সম্পদে পরিনত হচ্ছে।

শ্রম জরিপের তথ্যমতে,দেশের মোট কর্মজীবী মানুষের মোট ৩৮ শতাংশ নারী।শ্রমজীবী নারীদের অধিকাংশই পোষাক ও কৃষি খাতে নিয়োজিত।গ্রামীণ কৃষিকাজের প্রায় ৪৬ শতাংশ নারীরা অবদান রাখছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীদের অবদান ২০ শতাংশেরও বেশি।বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান সেক্টর গার্মেন্টসের ৮০ শতাংশই নারী।আরেক বৃহৎ সেবা খাত হলো স্বাস্থ্য খাতে ৭০ শতাংশই নারী।উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীরা বিদেশে কাজে করে দেশের রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা বিশ্বের একমাত্র নারী সরকার প্রধান হিসেবে টানা চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করছেন।এছাড়া তিনি দেশের ইতিহাসে প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নারীকে দিয়েছেন।জাতীয় সংসদের স্পীকার,সংসদ উপনেতা,সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি,বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর,মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান,নির্বাচন কমিশনার সহ সাংবিধানিক পদ গুলোতে নারীদেরকে স্থান করে দিয়েছেন।সচিব, ডিআইজি,অতিরিক্ত ডিআইজি,ডিসি,এসপি, সহ প্রশাসনিক পর্যায়ে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন।সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলোতেও নারীরা সফলতার সাথে কাজ করছেন।

নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংসদে নারীর আসন ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করেছেন।স্থানীয় সরকার পরিষদ(সিটি কর্পোরেশন,জেলা পরিষদ,উপজেলা পরিষদ,পৌরসভা,ইউনিয়ন পরিষদ)নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নারী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

নারীর সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতে পারিবারিক সহিংসতা দমন ও নিরাপত্তা আইন,মানব পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন,পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন,বাল্য বিবাহ নিয়ন্ত্রণ আইন,বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন,শিশু আইন,হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন,নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বিভাগীয় পর্যায়ে One step crisis center খোলা,ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ ও পরীক্ষার বহুল সমালোচিত Two fingers text বাতিল করা হয়েছে।

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ রোল মডেল।বিশ্বের অনেক ধনী দেশ থেকেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে।অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ,স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের উপর ভিত্তি করে তৈরি প্রতিবেদনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সূচক মতে,বাংলাদেশ লিঙ্গসমতায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম।রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের নবম, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।সেখানে ভারতের অবস্থান ৪৮ তম এবং পাকিস্তানের ৯৫ তম।

নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বিশ্বের অনেক মর্যাদাবান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।তিনি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জেন্ডার অসমতা দূর করার নেতৃত্বদানের কারণে ইউনেস্কোর ‘উইমেন ইন পার্লামেন্ট ফোরাম',শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের অগ্রগতির জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক ‘ট্রি অব পিস’ সম্মান,নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ‘ইউএন উইমেন কর্তৃক প্লানেট ৫০’ ও ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর চ্যাম্পিয়ন’,এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারী শিক্ষা ও নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে নেতৃত্বদানের জন্য গালর্স উইমেন সামিট কর্তৃক ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’, সম্মানিত হয়েছেন।

নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া বলেছেন, ‘দেহের দুটি চক্ষুস্বরূপ মানুষের সব রকমের কাজ কর্মের প্রয়োজনে দুটি চক্ষুর সমান গুরুত্ব।তিনি নারী ও পুরুষকে একটি গাড়ীর দুটি চাকার সাথে তুলনা করেছেন।কেননা একটি চাকা ছাড়া পুরো গাড়ীটাই অচল।তাই নারী পুরুষ মিলিত ভাবে কাজ করলে সমাজে পরিবর্তন আসবেই।’বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী বাস্তবসম্মত দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হয়েছে।নারীরা এখন সমাজ ও দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে।এই কৃতিত্ব একমাত্র শেখ হাসিনার,তিনিই এদেশের নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রদূত।

লেখক:সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য,সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
haldertapas80@gmail

এইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।