স্বাগতম মাহে রমজান

দ্রব্যমূল্য থাকুক নিয়ন্ত্রণে

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ১০:০০ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৪

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার কৃপায় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ আরও একটি রমজান মাস লাভ করতে যাচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহপাক যাদের রোজা রাখার সৌভাগ্য পাবেন তাদের উচিত হবে রোজার দিনগুলো বিশেষ ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করা এবং রমজান শেষেও তা ধরে রাখা।

পবিত্র রমজান মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটায়। মুমিন বান্দারা আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির লক্ষে রমজানের রাতগুলো ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করে। অপরদিকে রমজান এলেই একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত রেখে অধিক মুনাফা অর্জনের খেলায় মত্ত ওঠে।

গরিব-অভাবী মানুষদের প্রত্যাশা থাকে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকলে তারা নির্বিঘ্নে রমজান পালন করতে পারেন। বিশ্বের অনেক দেশেই রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা হয়। কিছু কিছু দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়েও দেওয়া হয় যেন রোজাদাররা নির্বিঘ্নে প্রশান্তি সহকারে সিয়াম সাধনার সুযোগ পান। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে মুনাফা করবেন তা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু রমজান মাসে ভোক্তাদের বাড়তি চাহিদা পুঁজি করে অতিমুনাফা করবেন তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। দেখা যায় রমজান শুরু হওয়ার ক’দিন আগ থেকেই বাজারে যেন আগুন লেগে যায়। দ্রব্যমূল্য এত বেড়ে যায় যে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। রোজার মাস এলেই দেখা যায়, ইফতার সামগ্রীসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজীয় দ্রব্যের দাম আচমকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অথচ রমজান মাস ছাড়া বছরের অন্য মাসগুলোতে এসব খাদ্যদ্রব্যের দাম অনেকটা সহনীয় পর্যায় কিংবা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থাকে। ব্যতিক্রম ঘটে কেবল রমজান মাসে। অধিক মুনফালোভীরা তাদের গুদামে রমজান মাসের নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যদ্রব্য অবৈধ, অনৈতিকভাবে মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতেও দেখা যায়। যদিও এদের সংখ্যা কম কিন্তু বাজার ব্যবস্থাকে এ কম সংখ্যক লোকই নিয়ন্ত্রণ করছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যতম সম্মানজনক কাজ। কিন্তু অবৈধ মজুতদারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা এটি নিষেধ। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে অস্বাভাবিক ও অধিক মূল্যে বিক্রি করার জন্য গুদামজাত করে রাখাকে ইসলামের পরিভাষায় ‘ইহতিকার’ বা মজুতদারি বলা হয়। যেসব জিনিস আটকিয়ে রাখলে বা মজুত করলে সর্বসাধারণের সীমাহীন কষ্ট ও ক্ষতি হয়। হজরত নবি করিম (সা.) বলেন, ‘মজুতদার খুবই নিকৃষ্টতম ব্যক্তি; যদি জিনিসপত্রের দাম হ্রাস পায় তাহলে চিন্তিত হয়ে পড়ে, আর যদি মূল্য বেড়ে যায় তাহলে আনন্দিত হয়’ (মিশকাত)।

মহানবি (সা.) আরও ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি বাজারে পণ্যের অভাবের সময় পণ্য মজুত করে রাখে সে বড় পাপী’ (মুসলিম)। পণ্যসামগ্রী মজুত করে মূল্যবৃদ্ধি অথবা অধিক মুনাফা করাও ইসলামে নিষিদ্ধ। হাদিস শরিফে মজুতদারকে নিকৃষ্ট, অভিশপ্ত বলে অভিহিত করা হয়েছে। মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘আমদানিকারক রিজিকপ্রাপ্ত হয়, আর মজুতদার হয় অভিশপ্ত।’ আরও বলা হয়েছে, ‘বিভ্রান্ত লোকই শুধু মজুতদারি করে’ (ইবনে মাজা)।

মহানবি (সা.) মজুতদারকে কঠোর শাস্তি প্রদানের কথা ঘোষণা করেছেন, ‘যে মুসলিম সম্প্রদায়ের খাদ্যদ্রব্য চল্লিশ দিন যাবত মজুত করে রাখবে আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দিয়ে শাস্তি দবেন’ (ইবনে মাজা)। তাই দ্রব্যমূল্য মজুত রেখে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া অত্যন্ত গোনাহের কাজ। এই পাপ কাজ করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।

 

ব্যবসায়ী ভাইদের প্রতি বিনীত নিবেদন, অবৈধভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না করে সবাইকে সুন্দরভাবে রোজা রাখার সুযোগ করে দিন। প্রয়োজনে একটি মাস মুনাফা কম করার চিন্তা করুন, দেখবেন আল্লাহ আপনার ব্যবসায় অদৃশ্য হতে এত বরকত দিচ্ছেন যা আপনি কল্পনাও করতে পারেন না। আল্লাহপাকের বান্দারা তার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে রোজা রাখবেন আর আপনারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করবেন এতে কি মনে করছেন আপনি শান্তি পাবেন? অবশ্যই না। আপনি অবশ্যই আল্লাহপাকের কাছে ধৃত হবেন।

 

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থার ওপর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি জোরদার করতে হবে। সেই সাথে ব্যবসায়ী ভাইদের অবশ্যই রমজান মাসের মাহত্মকে উপলব্ধি করতে হবে। কেননা পবিত্র এ রমজান মাসেই মহানবি (সা.) আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রথম বাণী লাভ করেছিলেন। এ রমজান মাসেই হজরত জিবরাইল (আ.) বছরের পূর্বে অবতীর্ণ হওয়া সব বাণী মহানবির (সা.) কাছে পুনরাবৃত্তি করতেন। এ ব্যবস্থা মহানবির (সা.) জীবনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

এছাড়া ‘মহানবির (সা.) জীবনের শেষ বছরের রমজান মাসে হজরত জিবরাইল (আ.) পূর্ণ কোরআনকে মহানবির (সা.) কাছে দুবার পাঠ করে শোনান’ (বুখারি)। এ থেকে বোঝা যায়, রমজান আল্লাহকে লাভ করার বিশেষ এক মাস। পবিত্র এ মাসে মুমিন-মুত্তাকি বান্দারা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগি, দান-খয়রাত করে থাকেন কিন্তু এসব তখনই প্রশান্তিতে আমরা করতে পারবো, যখন আমাদের চারপাশ সুশৃঙ্খল থাকবে।

সুনিয়ন্ত্রিত সুখাদ্য যেমন দেহকে সুস্থ, সবল ও আনন্দময় করে, তেমনি সুনিয়ন্ত্রিত ইসলামি রোজা আত্মাকে সুস্থ, সতেজ ও আল্লাহপ্রেমিকে পরিণত করে। মনে যদি শান্তি থাকে তাহলে ইবাদত-বন্দেগিতেও মন বসবে এবং প্রশান্তি লাভ করব, এটাই স্বাভাবিক। তাই রমজান প্রশান্তিময় করার জন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

আল্লাহতায়ালার কাছে আমাদের এই কামনাই থাকবে তিনি যেন আমাদের পবিত্র মাহে রমজান লাভে ধন্য করেন এবং আমাদের ইবাদত বন্দেগি আর সিয়াম সাধনা কবুল করে নেন। ব্যবসায়ী ভাইদের প্রতি বিনীত নিবেদন, অবৈধভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না করে সবাইকে সুন্দরভাবে রোজা রাখার সুযোগ করে দিন। প্রয়োজনে একটি মাস মুনাফা কম করার চিন্তা করুন, দেখবেন আল্লাহ আপনার ব্যবসায় অদৃশ্য হতে এত বরকত দিচ্ছেন যা আপনি কল্পনাও করতে পারেন না। আল্লাহপাকের বান্দারা তার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে রোজা রাখবেন আর আপনারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করবেন এতে কি মনে করছেন আপনি শান্তি পাবেন? অবশ্যই না। আপনি অবশ্যই আল্লাহপাকের কাছে ধৃত হবেন।

তাই আসুন, রমজানের মাহাত্ম ও কল্যাণ উপলব্ধি করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে এ থেকে লাভবান হই।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]

এইচআর/ফারুক/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।