শুধু পুলিশ নয় ছাত্র ব্রিগেডও দরকার
বাংলা দিনপঞ্জির হিসেবে আজ বছরের শেষ দিন, চৈত্রসংক্রান্তি। কাল পয়লা বৈশাখ। বাঙালির সার্বজনীন প্রাণের উৎসব। একমাত্র উৎসব যেখানে ধর্মের সাথে কোনো সংযোগ নেই, সব ধর্মের মানুষ মিলে মিশে এদিন উৎসবে মেতে উঠে। এই প্রথমবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হলো বিকেল ৫টার মধ্যে উৎসব শেষ করতে হবে। রাজধানীবাসীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কমিশনার বলেছেন, বর্ষবরণ আয়োজনের মূল কেন্দ্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সব গেইট বিকাল সাড়ে ৪টার পর বন্ধ করে দেওয়া হবে। এছাড়াও মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ পরা যাবে না, তবে চারুকলার তৈরি ঐতিহ্যবাহী মুখোশ হাতে রাখা যাবে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না গতবছর বৈশাখ উৎসবে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইটে নারীদের নিপীড়নের ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও কিছু মৌলবাদি গোষ্ঠির অপতৎপরতাও পুলিশের মাথায় থাকতে পারে। একথা মানতেই হবে পুলিশ সেবছর নিপীড়নকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পয়লা বৈশাখের উৎসবে ১৫-২০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আর ৫-১০ হাজার পুলিশের পক্ষে তাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া যে সম্ভব নয় সেটি তারা মুখ খুলে বলতে পারছেন না। পুলিশের এতে লজ্জারই বা কী আছে বোধগম্য নয়।
এমন বিশাল সমাগমে দু চারটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা যদি ঘটেও যায় তাহলে পুলিশের উচিৎ হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু নিকট অতীতে ঘটনা পরবর্তী পুলিশের ভূমিকা সঠিক ছিল না বলেই জনমনে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। পুলিশ এখন সেই সংকট দূর না করে উৎসবেই নানা বিধি নিষেধ আরোপ করে পার পেতে চাইছে। আমার ধারণা পুলিশের ওই উদ্যোগ একেবারেই অবাস্তব প্রামাণিত হবে। উৎসবপ্রিয় বাঙালিকে কখনো বিধি নিষেধ দিয়ে আটকে রাখা যাবে না। এছাড়া কোনো উৎসবই ঘড়ির কাটা মেপে চলতে পারে না। এবারও পুলিশ যতো বিধি নিষেধই আরোপ করুক না কেন মানুষের স্রোত ঠেকানো যাবে না।
২০০১ সালের বৈশাখী উৎসবে যখন জঙ্গি গোষ্ঠি বোমা হামলা চালিয়ে ১০ জন মানুষকে হত্যা করেছিল তখন কেউ কেউ ভেবেছিলেন পরের বছরগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কম হবে। কিন্তু তাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে পরের বছরই আরো বেশি মানুষের সমাগম প্রমাণ করেছিল উৎসবপ্রিয় বাঙালিকে কোনো কিছুই দমিয়ে রাখতে পারে না। যে মানুষটি সেদিন বোমায় আহত হয়েছিলেন সেই মানুষটিও পরের বছর রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণে যোগ দিয়েছিলেন।
আমরা পুলিশের আশঙ্কার কথাটি অনুধাবন করতে পারি। লাখ লাখ মানুষের মধ্যে দুচারটি অমানুষ ঢুকে পড়ে যদি কোনো অঘটন ঘটায় তখন পুলিশের যে বদনাম হবে সেটি তারা হজম করতে রাজী নয়, তাই বলে শুধু প্রাণের টানে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে যে মানুষগুলো ঘর থেকে বের হয়ে আসবে তাদের অতৃপ্তি নিয়েই আবার ঘরে ঠেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। পুলিশের ওই সিদ্ধান্ত অনেকটা মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলারই মতো। পুলিশের উচিত হচ্ছে জনগণ বিশেষ করে ছাত্র ও সংস্কৃতিকর্মীদের সহায়তা নিয়ে তৃপ্তি ভরে উৎসব করার পথ বের করে দেয়া।
এক্ষেত্রে পুলিশ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে একটা সমঝোতায় এসে নিরাপত্তার ভারটা ভাগাভাগি করে নিতো সেটা বরং আরো বেশি কার্যকর হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র সংগঠন মিলে যদি একটি ছাত্র ব্রিগেড গঠন করে ঘোষণা দেয়-বৈশাখ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যে কোনো নিপীড়ককে প্রতিরোধ করা হবে। তাহলে এমন কোনো অমানুষ নেই যে তার সাহস হবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর। প্রস্তাবিত ওই ছাত্র ব্রিগেড শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক ইত্যাদি এলাকায় গ্রুপ করে লাঠি হাতে নিয়ে যদি অবস্থান নেয় তাহলে কতিপয় অসামাজিক ছেলে পেলের কানে এই বার্তা যেতো যে কোনো নারীর গায়ে হাত দিয়ে অক্ষত অবস্থায় ফেরা সম্ভব না। আর তাতে উৎসবপ্রিয় মানুষও স্বস্তি পেতো এই ভেবে যে তাদের নিরাপত্তায় পুলিশই নয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীও রয়েছে। আমি বুঝতে পারছি না ছাত্র সংগঠনগুলোই বা নিজ উদ্যোগে একাজটি কেন করছে না।
পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আবারো অনুরোধ থাকবে উৎসবে বাধা দিবেন না। এটা আপনারা ঠেকাতে পারবেন না। এটা আমার অধিকার। আর নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আপনার। আপনি যদি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো সহায়তা চান সেটা এদেশের মানুষ অবশ্যই দিবে। আপনারা নিরাপত্তা দিতে পারবেন না এই অজুহাতে এরপর হয়তো বলবেন খোলা জায়গায় উৎসবেরই দরকার নেই, ঘরে বসে উৎসব করুন। এটাতো জনগণ মেনে নিবে না। এখনো সময় আছে আপনাদের বিধি নিষেধ তুলে নিন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বলবো ব্রিগেড গঠন করুন। আপনাদের বাড়িতে গিয়ে কতিপয় নষ্ট ছেলে আপনাদেরই বোনকে নিপীড়িন করার চেষ্টা করবে তা বসে বসে দেখবেন এ কেমন কথা! পুলিশের অপেক্ষায় বসে থাকবেনই বা কেন, যেখানেই নিপীড়ক সেখানেই প্রতিরোধ-শ্লোগান দিয়ে নেমে পড়ুন, দেখবেন একটি শয়তানও ক্যাম্পাসে ঢোকার দুঃসাহস দেখাবে না।
এইচআর/পিআর