একদিকে কমিয়ে অন্যদিকে বাড়ালে কী লাভ?


প্রকাশিত: ০৪:৪৪ এএম, ০৭ এপ্রিল ২০১৬

আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে অবশেষে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু একদিকে জ্বালানির দাম কমছে  অন্যদিকে বিদ্যুত ও গ্যাসের দাম বাড়ছে। তাহলে সাধারণ মানুষ কী পাচ্ছে।  জ্বালানির দাম কমায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমবে। কারণ অনেক বিদ্যুতকেন্দ্র চলে জ্বালানি তেল (ফার্নেস অয়েল) দিয়ে। গ্যাসনির্ভর বিদ্যুতকেন্দ্রও অনেক।  দেশের মোট বিদ্যুতের প্রায় ৭২ শতাংশ উৎপাদন হয় গ্যাস থেকে। গ্যাসের দাম ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বরের পরে আর বাড়েনি। আর ২০ শতাংশের কিছু বেশি বিদ্যুৎ আসে ফার্নেস তেল থেকে, যার দাম এক বছর ধরে কমছেই। এর বাইরে বাকি বিদ্যুৎ আসে কয়লা ও পানি থেকে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই। জনবান্ধব একটি সরকারের কাজ হচ্ছে জনস্বার্থ নিশ্চিত করা।  গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়লে ব্যবসাবাণিজ্যসহ সবক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যার মাশুল শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকেই দিতে হবে।এটা কখনো কাম্য হতে পারে না।  

সরকারের উচিত জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করে দ্রুত এর দাম কমানো। কেননা জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে অন্য অনেক বিষয় জড়িত। পরিবহন সেক্টর থেকে শুরু করে পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিষয়টিও জ্বালানি তেলের সঙ্গে জড়িত। জ্বালানি তেলের দাম কমলে পণ্য পরিবহন ও উৎপাদনের খরচ কমবে। এতে দ্রব্যমূল্যও কমে আসবে। এ কারণে জ্বালানি তেলের দাম কমানো অত্যন্ত জরুরি।  ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে  কমে আসবে মূল্যস্ফীতি, বাড়বে  বিনিয়োগ এবং উৎপাদন বাড়ার কারণে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হবে।  অথচ  জ্বালানির তেলের দাম না কমানোর ব্যাপারে এর আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, জ্বালানি তেলের দাম না কমিয়ে সরকার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের লোকসান সমন্বয় করতে চেয়েছে।

অদ্ভুত যুক্তি বটে। সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি, অনিয়ম, সিস্টেমলসসহ নানাবিধ কারণে লোকসানি হবে আর তার মাশুল গুণবে সাধারণ মানুষ? এটা হতে পারে না। লোকসানি প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করার নানাবিধ উপায় আছে। মানুষের পকেট থেকে টাকা নেয়ার শর্টকাট রাস্তায় না গিয়ে সেই পথে হাঁটতে হবে। এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করার কথা বলা হলেও অন্যদিকে বিদ্যুত ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। এতে তো আখেরে মানুষজনের কোনো লাভ হবে না। একদিকে কমবে, অন্যদিকে বাড়বে, অর্থাৎ ‘যে লাউ সেই কদু’। এছাড়া শুধু ফার্নেস তেলের দাম কমানো হবে- এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমেছে সেখানে শুধু ফার্নেস তেলের দাম কমানো মোটেও যুক্তিযুক্ত হবে না। আমরা চাই, জনস্বার্থে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমানো হোক এবং বিদ্যুত ও গ্যাসের মূল্যও যেন না বাড়ে। এক্ষেত্রে জনস্বার্থকেই সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।