রক্তের দামে বিদ্যুত!
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রাণহানির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিদ্যুতের জন্য লোকজনকে পুলিশের গুলির সামনে পাখির মতো জীবন বিলিয়ে দিতে হবে- এটা মানা যায় না। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু সেজন্য প্রাণহানির ঘটনা কেন ঘটবে? কারা নেবে এতোগুলো মানুষের জীবনের দায়? সরকার, স্থানীয় প্রশাসন বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কেউ কি দায় এড়াতে পারে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, গতকাল সোমবার এস আলম গ্রুপের প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র বিরোধীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই গুলিতে দুই সহোদরসহ তিন জন নিহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান আরো এক জন। যদিও পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। গন্ডামারা ইউনিয়নে এস আলম গ্রুপের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে জমি কেনা নিয়ে এলাকাবাসী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। অধিকাংশ এলাকাবাসী জনবসতির স্থানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের বিপক্ষে। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে একটি অংশ এর পক্ষে অবস্থান নেয়। ওই দুই পক্ষ গতকাল বিকালে পশ্চিম গন্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একই সময়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকে।
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকায় সমাবেশস্থলসহ পুরো ইউনিয়নে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। বেলা পৌনে ৩ টার দিকে আহমদ ছগীর নামে এক ব্যক্তি বিষয়টি মাইকিং করলে লোকজন উত্তেজিত হয়ে তাকে মারধর করে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিসহ পুলিশের একটি দল সমাবেশস্থলে যাওয়ার পথে গন্ডামারা ব্রিজ এলাকায় বিদ্যুত কেন্দ্র বিরোধী পক্ষের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। এরপরই মূলত জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ শুরু হয়। আর ঘটে এই বিয়োগান্তক ঘটনা। প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ কেন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার শর্টকাট রাস্তায় যাচ্ছে। গুলি চালানো ছাড়া আর কোনো পথ কি খোলা ছিলোনা? নাকি পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা অক্ষম? এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সে অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
যে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হলে সেখানে জমির প্রয়োজন হয়। সরকারের কাছে সব সময় পর্যাপ্ত জমি নাও থাকতে পারে। এজন্য প্রয়োজন জমি অধিগ্রহণ। যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে এক্ষেত্রে তাদের সম্মতির বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। তবে রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে যদি জমি অধিগ্রহণ করতিই হয় তবে সেটি জমিদাতাদেরকে বুঝিয়ে, তাদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিয়েই তা করতে হবে। এক্ষেত্রে জোর-জবরদস্তির কোনো ব্যাপার নেই। বাঁশখালীর ঘটনার ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ছিল বলেই এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অহেতুক বাধা দেওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। উস্কানিদাতারাও থাকে সক্রিয়। বেসরকারি খাতে প্রস্তাবিত এই বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের কথা। মূলত জমি অধিগ্রহণই এখানে সমস্যা। তাই সেটি যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সেটি নিশ্চিত করা উচিত ছিল। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অকারণ বিরোধিতা যেমন কাম্য নয় তেমনি উন্নয়ন করতে গিয়ে মানুষের জীবন যাবে সেটিও সমর্থনযোগ্য নয়। নিহতদের প্রাণহানির ঘটনায় কোথায় কোন গাফিলতি ছিলো সেটি ক্ষতিয়ে দেখে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে এটি অত্যন্ত জরুরি।
এইচআর/পিআর