সবার আগে নিরাপত্তা


প্রকাশিত: ০৫:১৩ এএম, ০২ এপ্রিল ২০১৬

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়  বৃহস্পতিবার নির্মাণাধীন একটি উড়ালসড়কের একাংশ ভেঙে  ২৫ জনের মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনায়  গুরুতর আহত হয়েছে ৭৮ জন। উত্তর কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলের জোড়াসাঁকো এলাকায় বিবেকানন্দ উড়ালসড়ক ভেঙে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী। ভারতের হায়দরাবাদের নির্মাণ সংস্থা আইভিআরসিএল ভেঙে যাওয়া উড়ালসড়কটি নির্মাণ করছে। এর কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। বাম সরকারের আমলে এই উড়ালসড়কের নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। আর বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ঠিকাদারদের গাফিলতির জন্যই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় কলকাতায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রেখে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। বিদেশ সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

উড়াল সড়ক ধসের ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বইছে পশ্চিমবঙ্গে। অভিযোগ আছে এবারের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন এই উড়ালসড়কের উদ্বোধন করতে। এই লক্ষ্যে ঠিকাদারেরা দ্রুত কাজ করার উদ্যোগ নেওয়ায় নির্মাণে গাফিলতি দেখা দেয়। আর এ কারণেই এ ধসের ঘটনা ঘটে। তবে মুখ্যমন্ত্রী এজন্য বাম সরকারকে দায়ী করছেন। কেননা এর কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। বাম সরকারের আমলে। অবশ্য নির্মাণ কাজ শুরু হয় তৃণমূলের শাসনামলেই।  পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রেখেই যে এই উড়ালসড়কের নির্মাণ কাজ চলছিল সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। আর নির্মাণ কাজেও ছিল ত্রুটি। এসব বিষয়ই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যাই হোক এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভাবনার বিষয়।

আমাদের ভাবনার বিষয়টি হচ্ছে উড়াল সড়কের সংস্কৃতিতে আমরাও প্রবেশ করেছি। সেজন্য পশ্চিমবঙ্গের এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়াই হবে যুক্তিযুক্ত। রাজধানীতে বেশ কয়েকটি উড়াল সড়ক আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতির দৃশ্যমান সাক্ষ্য দিচ্ছে। সম্প্রতি খুলে দেওয়া হলো মৌচাক-মগবাজার উড়াল সড়কের একাংশ। বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামেও উড়াল সড়ক রয়েছে।  ২০১২ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট জংশনে উড়ালসড়কের গার্ডার ধসে বহুমানুষ হতাহত হয়। সেই ক্ষত এখনো আমাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। নতুন নতুন উড়াল সড়ক হচ্ছে এটি অবশ্যই আশার দিক। তবে কলকাতার ঘটনা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিল নিরাপত্তার কথা। যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকে সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হয়। সেক্ষেত্রে উড়াল সড়কের বিষয়টি আরো স্পর্শকাতর। কেননা জনবহুল স্থানে এটি নির্মাণ করা হয়। এবং এর উপর দিয়ে নানা ধরনের যান চলাচল করে। সেক্ষেত্রে একটি দুর্ঘটনা বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এ জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যে সমস্ত উড়াল সড়ক যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সেগুলো নিয়মিত মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখতে হবে। আর নির্মাণাধীন উড়াল সড়কের মান যেন ঠিক থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। জননিরাপত্তা রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে জোরনজরদারি রাখার কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।