পুঁজিবাজারের স্বার্থে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন


প্রকাশিত: ০২:০৫ এএম, ৩১ মার্চ ২০১৬

পুঁজিবাজারে লেনদেন ও সূচক অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সূচক ও লেনদেনের নিম্নমুখি প্রবণতায় এরই মধ্যে বাজারের সার্বিক লেনদেন বিগত সাড়ে ৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসে। এ প্রেক্ষাপটে আগামী ২১ জুলাই শেষ হচ্ছে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়। অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্য মন্ত্রীর পক্ষ থেকে ব্যাংক এক্সপোজার লিমিট বাড়ানোর কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছিলেন, সময়সীমা বাড়ানোর জন্য পার্লামেন্টে যেতে হবে। তবে নতুন গভর্নর ফজলে কবির দায়িত্ব নেয়ার পর এ বিষয়ে নতুন করে কোনো আশ্বাস দেন নি।

ব্যাংকগুলোর বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় একবারে বাড়ানো সম্ভব না হলেও যদি প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর বাড়ানো যায় তাও বাজারের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে।  এদিকে নেগিটিভ ইকুইটিতে প্রতিদিনই বাড়ছে সুদের হার। আর এ কারণে শেয়ার বাজারে কোম্পানি গুলোর দরে নেতিবাচক প্রবণতা বেড়েই চলছে। বাজারে এই মুহূর্তে লোকসান সমন্বয় করতে না পারলে আগামী দিনগুলোতে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পারে। যা ব্যাংক, ননব্যাংক ও অন্যান্য খাতের উপর ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি করবে। তাই কোম্পানিগুলোর লোকসান সমন্বয় করে প্রয়োজন সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করা। কোম্পানি গুলোর দিকে নজর দিলে ব্যাংক, নন ব্যাংক, আর্থিক কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ডের দর তলানীতে রয়েছে।

এদিকে বাজারে অনেক কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় সন্তোষজনক নয়। বাজার ভালো হওয়ার আশায় অনেকে শেয়ার বিক্রি না করে অপেক্ষা করায় পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতির সাথে সাথে লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। ২০১০ সালের পর অনেক হাউজে জোর করে শেয়ার বিক্রি করার প্রবণতা থাকলেও বিএসইসির পক্ষ থেকে ফোরসড সেল বা ট্রিগার সেলের ব্যাপারে লিখিত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয় নি। তবে মৌখিকভাবে ব্রোকার হাউজগুলোকে শেয়ার বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর এজন্য এখন লোকসান সমন্বয় করতে পারছে না মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। এ ভয়াবহ চিত্র পুঁজিবাজারে বিয়ারিশ মার্কেট তৈরি করেছে। বিএসইসির অর্থাৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল বাজারে চাহিদা তৈরি করা। সেখানেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নতুন করে বাজারে চাহিদা তৈরি না হওয়ায় অতিরিক্ত ঋণ সমন্বয় করা সম্ভব হয় নি।

২০১০ সালের পর যেখানে শেয়ারহোল্ডাররা মনে করতো হয়তো ঋণ সমন্বয় করা সম্ভব হবে। যদিও আগামী তিন বছরের মধ্যেও তা সমন্বয় করা সম্ভব হবে কিনা এখন নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। পুঁজিবাজারে বর্তমানে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার বেশি ওভার এক্সপোজার রয়েছে। এর আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ফোর্থ কোয়ার্টারের প্রভিশন দেয়ার জন্য বলেছেন।

২০১০ সালে শেয়ার বাজারে ধসের পর ২০১১, ২০১২, ২০১৩ সালেও ঋণ সমন্বয় না করায় বিও একাউন্টের ঋণ শোধ না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের একাউন্টে নিম্নমুখি প্রবণতা বাড়তে থাকে। এখন ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের কাছে দ্বিগুণ পরিমাণে টাকা পায় ইন্টারেস্ট রেট বেড়ে যাওয়ায়। আর মার্চেন্ট ব্যাংকের ঋণ সমন্বয় করতে আগামী দশ বছর লেগে যেতে পারে, তবে বিষয়টি বর্তমানে এনবিআরের অনুমোদনের অপেক্ষায়। আর এর ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করায় দিন দিনই কমছে সূচক এবং লেনদেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারল্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে। এছাড়াও পুঁজিবাজারের স্বার্থে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

লেখক : বিজনেস এডিটর, এটিএন বাংলা

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।