সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমান
দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া অনেক সময়ই দাপিয়ে বেড়ায়। দাম বাড়ার প্রবণতা যতোটা বেশি কমার উদাহরণ ততোটা নেই। বিশেষ করে আমদানিনির্ভর কোনো পণ্য-দ্রব্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশীয় বাজারেও তা সমন্বয় করার কথা। এটিই ঠিক এবং বাস্তবসম্মত। কিন্তু একবার দাম বাড়লে সেটি কমানোর ব্যাপারে আগ্রহ দেখানো হয় না। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে স্থানীয় বাজারে দাম বাড়াতে এতটুকু সময় ব্যয় করা হয় না। এ ধরনের মানসিকতা অগ্রহণযোগ্য। এক্ষেত্রে ভোক্তা স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে অনেকদিন হলো। সহসা বাড়বে এমন লক্ষণও নেই। কিন্তু দেশীয় বাজারে অনেকদিন ধরেই আগের দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তাসহ বিভিন্ন মহল থেকে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি উঠলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিলো না। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ওঠা-নামার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজারের সম্পর্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার কারণে সর্বশেষ স্থানীয় বাজারে বাড়ানো হয়েছিল ২০১৩ সালে। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে যে দাম ছিল তার চেয়ে বর্তমানে দাম প্রায় তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসলেও দাম কমানো হচ্ছিলো না। তবে আশার কথা হলো শেষ পর্যন্ত সরকার জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত যতো তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন হবে সকলের জন্য ততোই মঙ্গল।
জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে অন্য অনেক বিষয় জড়িত। পরিবহন সেক্টর থেকে শুরু করে পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিষয়টিও জ্বালানি তেলের সঙ্গে জড়িত। জ্বালানি তেলের দাম কমলে পণ্য পরিবহন ও উৎপাদনের খরচ কমবে। এতে দ্রব্যমূল্যও কমে আসবে। এ কারণে জ্বালানি তেলের দাম কমানো অত্যন্ত জরুরি। ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে কমে আসবে মূল্যস্ফীতি, বাড়বে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন বাড়ার কারণে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হবে। অথচ জ্বালানির তেলের দাম না কমানোর ব্যাপারে এর আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, জ্বালানি তেলের দাম না কমিয়ে সরকার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের লোকসান সমন্বয় করতে চেয়েছে। অদ্ভুত যুক্তি বটে। সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি, অনিয়ম, সিস্টেমলসসহ নানাবিধ কারণে লোকসানি হবে আর তার মাশুল গুণবে সাধারণ মানুষ? এটা হতে পারে না। লোকসানি প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করার নানাবিধ উপায় আছে। মানুষের পকেট থেকে টাকা নেয়ার শর্টকাট রাস্তায় না গিয়ে সেই পথে হাঁটতে হবে। এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করার কথা বলা হলেও অন্যদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। এতে তো আখেরে মানুষজনের কোনো লাভ হবে না। একদিকে কমবে, অন্যদিকে বাড়বে, অর্থাৎ ‘যে লাউ সেই কদু’। এছাড়া শুধু ফার্নেস তেলের দাম কমানো হবে- এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমেছে সেখানে শুধু ফার্নেস তেলের দাম কমানো মোটেও যুক্তিযুক্ত হবে না। আমরা চাই, জনস্বার্থে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমানো হোক এবং বিদ্যুতের মূল্যও যেন না বাড়ে।
এইচআর/এমএস