আকাশ পথেও খুললো সম্ভাবনার দ্বার

ইয়াহিয়া নয়ন
ইয়াহিয়া নয়ন ইয়াহিয়া নয়ন , সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৯:৩৮ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৩

আরও একটি মেগা প্রকল্পের দ্বার খুললেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু আর রূপপুর প্রকল্পের মতো দেশের বিমানবন্দরের আরও একটি আধুনিক টার্মিনাল হোক এ আকাঙ্ক্ষা ছিল সচেতন নাগরিকদের। যারা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিদেশে গেছেন এবং এসেছেন, প্রত্যেকেই আধুনিক এবং একটু বড় পরিসরের টার্মিনাল কামনা করেছেন।

শনিবার বিশ্বমানের সব সুযোগ-সুবিধা ও যাত্রীসেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করে বলেছেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে একসময় বাংলাদেশই হবে সারা বিশ্বের যোগাযোগের হাব। এক সময় আন্তর্জাতিক হাব ছিল হংকং। এরপর হলো সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, এখন দুবাই। আমি বিশ্বাস করি একসময় কক্সবাজার ও হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর হবে আন্তর্জাতিক হাব। রিফুয়েলিংয়ের জন্য অনেকেই এখানে আসবে, থামবে; বাংলাদেশের সৌন্দর্য উপভোগ করবে।'

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ১৯৮০ সালে যাত্রা শুরু করে। দেশের প্রধান বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল প্রতিদিন প্রায় ৩০টি এয়ারলাইন্সের ১২০ থেকে ১৩০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। প্রতিদিন ২৫-৩০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে। এত সংখ্যক যাত্রীকে মানসম্মত সেবা দেওয়া দুটি টার্মিনালের পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। এজন্য নতুন একটি বিমানবন্দর কিংবা একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন টার্মিনালের খুব প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। যার কারণেই মূল টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে তৃতীয় টার্মিনাল তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ও জাপানের যৌথ অর্থায়নে টার্মিনালটি তৈরি হয়েছে। ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাইকা ঋণ দিয়েছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি, সরকার দিয়েছে ৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের সময়কাল ধরা হয়েছিল চার বছর। অথচ তিন বছর নয় মাসেই তা সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটিও একটি মাইলফলক।

তৃতীয় টার্মিনালের নকশা করেছেন আন্তর্জাতিক স্থাপত্যবিদ সিঙ্গাপুরের রোহানি বাহারিন। তিনি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াংজুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ ও পাকিস্তানের ইসলামাবাদ বিমানবন্দরের মতো আধুনিক বিমানবন্দরের নকশা করেছেন। এছাড়া মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, ব্রুনেই, মিয়ানমার, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের নকশা করেছেন।

বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও সর্বোচ্চ মানসম্মত বিমানবন্দর বলা হয় সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরকে। যার ২০২৩ সালের রেটিং স্কোর ৯০ দশমিক ১২। দ্বিতীয় অবস্থান তুরস্কের ইস্তাম্বুল। তারপর যুক্তরাজ্যের হিথ্রো, সুইজারল্যান্ডের জুরিখসহ বিভিন্ন দেশের আরও অনেক বিমানবন্দর। এসব বিমানবন্দরের রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, যাতে যাত্রীদের কোনো প্রকার ভোগান্তি না হয়, তা নিশ্চিত করা। একজন যাত্রী যাতে সব ধাপ অতিক্রম করে বিমানে উঠতে পারে এবং একই ভাবে আরামদায়ক প্রস্থান করতে পারে। নান্দনিকতায় তৃতীয় টার্মিনাল ছাড়িয়ে গেছে থাইল্যান্ডের সুবর্ণভূমি ও তুরস্কের ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরকেও।

 

বাংলাদেশের প্রায় দেড়কোটি মানুষ দেশের বাইরে থাকেন, বিদেশ থেকে দেশে আসা যাওয়া করেন। তাদের জন্য নতুন টার্মিনাল উদ্বোধন বড় আনন্দের খবর। আমরা সবাই আশা করবো দেশের বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি আর হবে না। কারও লাগেজ হারাবে না। কেউ অযথা নাজেহাল হবেন না।

 

একজন যাত্রী টার্মিনাল থেকে বিমানে ওঠা পর্যন্ত হাতের স্পর্শ ছাড়া স্বয়ংক্রিয় ভাবে তল্লাশি হওয়ার কারণে যাত্রী ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের সময় বাঁচবে। এবং স্ক্যানিং হবে স্বচ্ছ ও নির্ভুল। আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের জন্য উন্নত বিশ্বের মতো আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ৬৩ হাজার বর্গমিটার এলাকা নিয়ে কার্গো ভিলেজ তৈরি করা হয়েছে। যার ধারণক্ষমতা ৪ মিলিয়ন টন। বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে পরিবহন করা কার্গোর প্রায় ৬০ শতাংশ যাত্রীবাহী পরিবহনে হয়। বাকি ৪০ ভাগ পণ্য এক্সক্লুসিভ কার্গোতে পরিবহন করা হয়। বর্তমানে কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বছরে প্রায় ৮৪ হাজার টন। নতুন টার্মিনাল নিয়ে সক্ষমতা দাঁড়াবে প্রায় পৌঁনে তিন লাখ টন। এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে সংযুক্ত হতে আগ্রহী অন্তত ১২টি বিদেশি এয়ারলাইন্স। এর মধ্যে কিছু কিছু এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে, কেউ কেউ মৌখিকভাবে জানিয়ে রেখেছে। তবে, স্থান সংকটের জন্য নতুন করে কোনো এয়ারলাইন্সকে আপাতত ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেবে না বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দেশের অন্তত ১২টি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বেবিচকে যোগাযোগ করেছে। সম্প্রতি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা এয়ারলাইন্সগুলো হচ্ছে- শ্রীলঙ্কার ফিটস এয়ার, দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ার, আবুধাবিভিত্তিক উইজ এয়ার, ইন্দোনেশিয়ার গারুদা ইন্দোনেশিয়া, ইরাকের ইরাকি এয়ারওয়েজ, জর্দানের রয়াল জর্দানিয়ান, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স, এয়ার ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ।

ইতোমধ্যে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে আফ্রিকাভিত্তিক উড়োজাহাজ সংস্থা ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স। তারা ২০২২ সালে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছিল। চলতি বছরের অক্টোবরে তারা বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিতে পারে।

এয়ারলাইন্সটি দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আফ্রিকান দেশগুলোতে বসবাসরত বাংলাদেশি যাত্রীদের ইথিওপিয়ায় ট্রানজিট দিয়ে অল্প সময়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পৌঁছে দিতে চায়। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এয়ারলাইন্সগুলো এ রুটের যাত্রী বহন করছে।

এসব এয়ারলাইন্স ছাড়াও বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য মৌখিকভাবে জানিয়েছে আরও অন্তত চারটি এয়ারলাইন্স। এগুলো হচ্ছে- পাকিস্তানের পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ), উজবেকিস্তানের উজবেকিস্তান এয়ারওয়েজ, সুইজারল্যান্ডের সুইস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স ও সৌদি আরবের রিয়াদ এয়ার।
সব মিলিয়ে জল এবং স্থলপথের পর আকাশপথেও সম্ভাবনার বড় দ্বার খুলছে বাংলাদেশ। সব সম্ভাবনাকে ইতিবাচক ভাবে কাজে লাগিয়ে আরও বৃহৎ পরিসরে বিশ্ব দরবারে স্থান করে নেবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের প্রায় দেড়কোটি মানুষ দেশের বাইরে থাকেন, বিদেশ থেকে দেশে আসা যাওয়া করেন। তাদের জন্য নতুন টার্মিনাল উদ্বোধন বড় আনন্দের খবর। আমরা সবাই আশা করবো দেশের বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি আর হবে না। কারও লাগেজ হারাবে না। কেউ অযথা নাজেহাল হবেন না।

লেখক : সাংবাদিক।

এইচআর/ফারুক/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।