বাংলাদেশের ক্রিকেট কি ষড়যন্ত্রের শিকার?
কানাঘুষা আগেই শোনা যাচ্ছিলো। অবশেষে সেটাই সত্যি হলো। ‘আরাফাত সানি ও তাসকিন আহমেদের বোলিং অ্যাকশন অবৈধ’- খবরটি বজ্রপাতের মতো এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য। গতকাল দুপুরে প্রথমে খবর আসে আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশন অবৈধ এবং এ জন্য তাকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপর অপেক্ষা তাসকিন আহমেদের জন্য। প্রথমে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছিল তাসকিন আহমেদের বোলিং অ্যাকশন বৈধ। কিন্তু পরে জানা গেল তাসকিনও নিষিদ্ধ হচ্ছেন বোলিং অ্যাকশন অবৈধ হওয়ায়। বিশ্বকাপের মতো একটি টুর্নামেন্টের মাঝখানে দুইজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের জন্য বড় ধাক্কা। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন আইসিসি হঠাৎ করে কেন টিটোয়েন্টি বিশ্ব আসরের মাঝখানে বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিলেন। এশিয়া কাপের সময়ওতো এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেনি। অথচ আইসিসির এই সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ দলের দুইজন ক্রিকেটারের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়ে গেল। তারচেয়ে বড় কথা শুধু বাংলাদেশ দল নয় ক্রিকেটের জন্য এটি বড় এক ছন্দপতন। আইসিসির এই সিদ্ধান্ত তাই প্রশ্নবিদ্ধ থেকেই গেল।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আইসিসির ঘোষণা, কোনো কোনো ডেলিভারিতে তাসকিন আহমেদের কনুইও ১৫ ডিগ্রির বেশি বেঁকে যায়। সানির সঙ্গে তাই তাসকিনও বোলিং থেকে নিষিদ্ধ। তবে চেন্নাইয়ের রামাচন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষায় যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে সেটির বৈধতা নিয়েই। বিসিবির মতে, ‘১৫ মার্চের পরীক্ষায় মাত্র ৩-৪ মিনিটের মধ্যে তাসকিনকে ৮-৯টি বাউন্সার দিতে বলা হয়। এর মধ্যে তিনটি বাউন্সারে অবৈধ অ্যাকশন ধরা পড়েছে। এত অল্প সময়ে অতগুলো বাউন্সার দিতে হলে এ রকম হওয়াটা অস্বাভাবিকও নয়। মূলত এই পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করেই তাসকিনের বোলিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আইসিসি। কিন্তু নিয়ম হলো, ম্যাচের যে ডেলিভারিতে অ্যাকশন সন্দেহজনক মনে হয়েছে, পরীক্ষায় সেটাই করতে বলা হবে বোলারকে। সে অনুযায়ী পরীক্ষায় তাসকিনকে বাউন্সার দিতে বলার কথা নয়। অথচ হল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি কোনো বাউন্সারই দেননি। বাউন্সারে তার অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ ওঠারও তাই কোনো অবকাশ ছিল না ওই ম্যাচে। আইসিসির সিদ্ধান্তে আরেকটি নিয়মেরও ব্যত্যয় নিয়েও প্রশ্ন আছে। ‘স্টক ডেলিভারি’ ছাড়া অন্য কোনো ডেলিভারিতে কনুই ১৫ ডিগ্রির বেশি বাঁকা হলেও নিয়ম অনুযায়ী আইসিসি কোনো বোলারের বোলিং নিষিদ্ধ করতে পারে না। শুধু ভবিষ্যতের জন্য সতর্কই করতে পারে। তাসকিনের অ্যাকশন নিয়ে অভিযোগ তার গুড লেংথ অথবা ইয়র্কার বলগুলোর মতো ‘স্টক ডেলিভারি’তে নয় বলেও তার বোলিংয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। এ অবস্থায় আম্পায়ারদের আনা অভিযোগ, রামাচন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে হওয়া তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষা এবং আইসিসির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের যথার্থতা বিবেচনা করে বিসিবির উচিত আইসিসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ করা।
বাংলাদেশের ক্রিকেট যত দ্রুত এগোচ্ছে এর পেছনে ষড়যন্ত্রকারীরাও ততোটাই তৎপর। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়েছিল বাংলাদেশ। এ নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে সমালোচনার ঝড় বইয়ে যায়। এছাড়া নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশে খেলতে না আসাসহ ইতোপূর্বেও নানা অবিচারের শিকার হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। এমনকি টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়িং রাউন্ডে বাংলাদেশকে খেলানো নিয়েও রয়েছে জোরালো প্রশ্ন। কিন্তু মনে রাখা দরকার ক্রিকেটের মোড়লরা যখন নানা কারণে সমালোচিত তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট জগতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। বলা হয় বাংলাদেশ দলের দ্বাদশ খেলোয়াড় হচ্ছে ১৬ কোটি বাঙালি। এটি আবেগের কথা। ক্রিকেট যখন পণ্য তখন এই আবেগেরও সঞ্চার করেছে বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনাময় টাইগারবাহিনী। বাংলাদেশ শুধু ভালো খেলছেই না, বড় বড় টুর্নামেন্টের আয়োজন করেও আয়োজক হিসেবে সাফল্য দেখিয়েছে। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটের দর্শকরা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের দর্শকের চেয়ে খেলাঅন্তপ্রাণ। ক্রিকেট বিশ্ব তাই বাংলাদেশকে উপেক্ষা করতে পারে না কিছুতেই। নিয়ম অনুযায়ী কোনো সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলে সেটি নিয়ে কোনো কথা নেই। কিন্তু এর বাইরে অক্রিকেটীয় কিছু হলে আপত্তি সেখানেই। বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে আরো সতর্ক হতে হবে- খেলার সাথে এগিয়ে নিতে হবে ক্রিকেট কূটনীতিও।
এইচআর/এমএস