তিতাসকেই দায় নিতে হবে


প্রকাশিত: ০৫:২৮ এএম, ১৯ মার্চ ২০১৬

রাজধানীর উত্তরায় গ্যাসের চুলার বিস্ফোরণে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে এক পরিবারের ৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বনানীতে ঘটলো আরো একটি দুর্ঘটনা। বৃহস্পতিবার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে একটি বহুতল ভবনের সামনের অংশ বিধ্বস্ত হয়। জানালার গ্লাস চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। কয়েকদিন ধরে রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ছিদ্র হয়ে থাকা গ্যাসের পাইপ দিয়ে গ্যাস নির্গত হওয়ার মধ্যেই ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। এরফলে বহুতল এই ভবনে আগুন লেগে যায়। এতে অগ্নিদগ্ধসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে গ্যাস নির্গত হওয়ার বিষয়টি তিতাসকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সময়মত ব্যবস্থা নেওয়া হলে যে এই ‘দুর্ঘটনা’ এড়ানো যেত সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রশ্ন হচ্ছে কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এভাবে আর কত প্রাণহানি ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটবে। এসব দেখার কি কেউ নেই?

রাজধানীতে হরহামেশাই ঘটছে গ্যাসের সংযোগ ও চুলায় বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এতে হতাহতের সংখ্যাও কম নয়। পুলিশ ও হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৪ মাসে রাজধানীতে গ্যাস সংযোগের আগুনে দগ্ধ হয়ে নারী, শিশুসহ ২৪ জন নিহত হয়েছে। এ সময়ে দেড় শতাধিক মানুষ গ্যাসের সংযোগ ও চুলার আকস্মিক বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর আবাসিক গ্যাস সংযোগ ও চুলায় দুর্ঘটনা বেড়েছে। এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ গ্যাসলাইনে ছিদ্র বা ত্রুটি। রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ সংযোগের কারণেও ঘটছে অগ্নিকাণ্ড। কিন্তু কাউকে এর জন্য দায় নিতে হয়নি। ব্যাপকসংখ্যক মানুষের প্রাণহানিসহ অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থায়ও।

অবৈধ ও ত্রুটিপূর্ণ সংযোগসহ নানাবিধ কারণে ঘটছে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা। এছাড়া সচেতনতারও অভাব রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা লাইনে কোনো ত্রুটি বা সমস্যা দেখা দিলে কর্তৃপক্ষের উচিত ত্বরিৎ গতিতে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে যে অবহেলা আছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বনানীতে ভবনে গ্যাস বিস্ফোরণ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় হয়েছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির পর গ্যাস লাইনে ছিদ্র দেখা দেয়। সময়মত পদক্ষেপ নিলে ভবনে বিস্ফোরণের কোনো অবকাশ ছিল না। এলাকাবাসী তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা  নেয়নি। উল্টো শ্রমিক যোগাড় করে নিজেদেরই সমস্যা দূর করার কথা বলা হয়। ফলে  ঘটেছে এই দুর্ঘটনা। এটিকে দুর্ঘটনা বলবো নাকি অবহেলার মাশুল? আর মাশুল তো দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এভাবে তো চলতে পারে না। রাষ্ট্রায়ত্ত একটি সংস্থা যদি এভাবে মানুষের জানমালের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব না দেয় সেটি হবে খুবই দুঃখজনক।  

তিতাসের অবহেলায় এই দুর্ঘটনার দায় তাদেরই নিতে হবে। এ জন্য দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অপরাধীর শাস্তি না হলে অপরাধ দমন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো উদাসীনতা কাম্য নয়।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।