কারাবন্দি হয়েছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র
১৬ জুলাই, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে কালো দিন। ১/১১ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করতে গণতন্ত্রের মানস কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে। অথচ এই সরকার ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগের বদান্যতায়। ক্ষমতার নেশায় মত্ত বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিজেদের লোক বসাতে সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের বয়স দুই বছর বাড়িয়েছিল।
বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছাত্রদলের ক্যাডারদের সারা দেশে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এবং তৈরি করা হয় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার। এই সব অপকর্মের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের আন্দোলনের মুখে প্রথমে বিচারপতি এম এ হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান হতে বিব্রত বোধ করলে পরবর্তীতে উপায়ান্তর না পেয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমদকে প্রধান করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয় এবং সে সরকার ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে।
মহাজোটর নেতৃত্বে মানুষের জাগরণ সৃষ্টি হলে সরকার ও জনগণ মুখোমুখি অবস্থান নিলে সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সেনাবাহিনী এগিয়ে এসে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। এবং ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। যা ১/১১ সরকার নামে পরিচিত।
১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম দিকের উদ্দেশ্য ভালো হলেও আস্তে আস্তে তাদের মধ্যেও ক্ষমতার নেশা পেয়ে বসে। ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে তারা নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করে। দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে মাইনাসের নামে প্রথমেই টার্গেট করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে। রাজনীতি থেকে মাইনাস করার প্রক্রিয়া হিসেবে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়।
শেখ হাসিনা গ্রেফতারের পূর্বে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। প্রথমত অসুস্থতা হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিৎ নেতা জিল্লুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব প্রদান ও দ্বিতীয়ত দলীয় নেতাকর্মী সহ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে করণীয় সম্পর্কে একটি খোলা চিঠি লিখেন, চিঠি হুবহু ঠিক এরকম ছিল:-
প্রিয় দেশবাসী,আমার ছালাম নিবেন। আমাকে সরকার গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় জানিনা। আমি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে সারা জীবন সংগ্রাম করেছি। জীবনে কোনো অন্যায় করিনি।তারপরও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও আপনারা দেশবাসী আপনাদের উপর আমার ভরসা আছে। আমার প্রিয় দেশবাসী,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন কখনও মনোবল হারাবেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সাথে,আমৃত্যু থাকব। আমার ভাগ্যে যাহাই ঘটুক না কেন আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে চালিয়ে যান। জয় জনগণের হবেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বই। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবোই। জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু।
শেখ হাসিনা,১৬.০৭.২০০৭
২৯ ডিসেম্বর,২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২৩০ আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। তারপর থেকে তিন মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশকে নিয়ে নিয়ে গেছেন মর্যাদার আসছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার দুরন্ত গতি এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি হায়নাদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা’ করেন এবং জনগণ সেটিকে ধারণ করেই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল ঠিক ৩৬ বছর পর তাঁরই কন্যার আহ্বানে এদেশের জনগণ অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র নতুন নয়। তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে যেদিন বাংলাদেশে এসেছেন সেদিন থেকেই এই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। কখনো গ্রেফতার, কখনো গৃহবন্দি, আবার একাধিক বার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা শত বাধা অতিক্রম করে শুধু সামনের দিকে এগিয়ে চলছে।
১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনা গ্রেফতার করে কার্যত গণতন্ত্রকেই বন্দি করা হয়। কিন্তু সেসময়কার সরকার বুঝতে ভুল করেছিল, মুক্ত শেখ হাসিনার চেয়ে বন্দি শেখ হাসিনা আরও বেশি শক্তিশালী ছিল। আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে ইস্পাত কঠিন ঐক্য তৈরি হয়।
শুধু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাই নয়,সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পরই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জনপ্রিয়তায় প্রচণ্ড রকম ধস নেমে আসে। শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে মাত্র ১৫ দিনে ২৫ লক্ষ সাধারণ মানুষ গণস্বাক্ষর দিয়েছিল। দেশের সাথে সাথে বিদেশেও শেখ হাসিনার মুক্তিতে গণজাগরণ তৈরি হয়। দেশে-বিদেশে সরকার প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ে যায়। অবস্থা বেগতিক বুঝে তৎকালীন সরকার ২০০৮ সালের ১১ জুন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
২৯ ডিসেম্বর,২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২৩০ আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। তারপর থেকে তিন মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশকে নিয়ে নিয়ে গেছেন মর্যাদার আসছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার দুরন্ত গতি এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
[email protected]
এইচআর/জেআইএম