ডেঙ্গু: দরকার সচেতনতা
প্রায় দুই দশক কাল আমরা ডেঙ্গুর সাথে বসবাস করছি। শুরুর দিকে জনমনে এটা নিয়ে আতঙ্ক ছিল। যদিও তখন ডেঙ্গু শুধুমাত্র ঢাকাকেন্দ্রিক ছিল। এখন অবশ্য আতঙ্ক কমেছে। তবে ডেঙ্গুর ধরন ও বিস্তার বেড়েছে। ঢাকা ছাড়িয়ে ডেঙ্গু এখন দেশময় বিস্তার লাভ করেছে। সেই সাথে খেয়াল করলে দেখবেন আগে বছরের নির্দিষ্ট কয়েক মাস বিশেষ করে জুন-জুলাই থেকে আগস্ট-সেপ্টেম্বর বা বড়জোর অক্টোবর অবধি এ রোগটি দেখা দিতো। তারপর শীতকাল শুরু হতেই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যেত। কিন্তু সে অবস্থা এখন আর নেই।
গত দু-এক বছরে দেখা যাচ্ছে বছরজুড়েই কম-বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এটা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে হয়। হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনের কারণে এডিস মশার বংশবিস্তারের ধরন পাল্টে গিয়ে এমন হচ্ছে৷ এ বিষয়ে তাই বিস্তারিত জানার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের গবেষণা কাজ জারি রাখতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এখন মনে হয় সবাই কম-বেশি জানেন। তবুও আর একবার মনে করিয়ে দিই। ডেঙ্গু হলে প্রচণ্ড জ্বরের সাথে সারা শরীর ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথাসহ জ্বরের অন্যান্য উপসর্গ যেমন বমি বমি ভাব বা বমি, শারীরিক দুর্বলতা, খাবারে অরুচি ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এটা ক্ল্যাসিকাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ। শুধু এসব উপসর্গ থাকলে ভয়ের কারণ নেই। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াবেন। দয়া করে জ্বর কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ নিজে থেকে বা ফার্মেসিওয়ালাদের কথা মতো খাওয়াবেন না। এতে হিতে বিপরীত হয়ে রোগীর অবস্থা বিপন্ন হতে পারে। তাই আমার অনুরোধ থাকবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রোগীকে বাসায় রেখে যত্ন নিন। ওষুধ খাওয়ান। তাহলেই অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে যাবেন৷
পরের প্রশ্ন হচ্ছে, কখন রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে? প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো যে, এ সময়ের সব জ্বরের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডেঙ্গু হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরপর যদি তা ডেঙ্গু হয় এবং চামড়ার নিচে রক্ত জমাট, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া অথবা মাসিকের সময়ে বেশি বেশি রক্ত যায় তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। অথবা জ্বরের সাথে পেটে ব্যথা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ থাকলেও রোগীকে দয়া করে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। পরিচিত চিকিৎসক হলেও অহেতুক ফোনে পরামর্শ নেবেন না। কারণ উনি কিন্তু রোগীকে শারীরিক পরীক্ষা করতে পারছেন না।
তদুপরি আপনার দেওয়া তথ্য যথাযথ না হলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসা এবং পরামর্শ প্রদান সঠিক নাও হতে পারে। কারণ ডেঙ্গু হিমোরেজিক বা শক সিনড্রোম হলে চিকিৎসা দ্রুত শুরু করতে হবে। এজন্য এক মুহূর্ত দেরি না করে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করুন। অহেতুক সময় নষ্ট করবেন না৷
এবার ডেঙ্গু চিকিৎসার চেয়ে তা প্রতিরোধের গুরুত্ব এবং উপায় নিয়ে দুটো কথা বলি৷ ডেঙ্গু যেহেতু মশাবাহিত রোগ ফলে নিজ নিজ বাসা, অফিস মশামুক্ত রাখুন। জানালায় নেট লাগিয়ে নিন। ঘুমানোর সময় দিন বা রাত যখনই হোক না কেন অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাবেন। ছোট বাচ্চাদের হাফ প্যান্ট বা শার্ট না পরিয়ে ফুল প্যান্ট, শার্ট পরান৷ সন্ধ্যার সময় পায়ে মোজা পরিয়ে দিন। মশা তাড়ানোর ক্রিম বা জেল শরীরের খোলা জায়গায় লাগাতে পারেন। এতে মশার কামড় থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
তাছাড়া মশা যেন বাড়িতে জন্ম নিতে না পারে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। বাসাবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে বছরব্যাপী।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসের বিকল্প নেই। কারণ আমরা যদি সবাই সচেতন না হই তাহলে ডেঙ্গু কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর হবে- আপনারাই বলুন?
লেখক: চিকিৎসক।
এইচআর/ফারুক/জিকেএস