সিটি নির্বাচন ও রাজনীতির হালচাল

ইয়াহিয়া নয়ন
ইয়াহিয়া নয়ন ইয়াহিয়া নয়ন , সাংবাদিক
প্রকাশিত: ১০:১১ এএম, ১৯ জুন ২০২৩

বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না, এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে দলটি। দলের এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ২৯ নেতা কাউন্সিলর পদে অংশগ্রহণ করেন। তাদের সবাইকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা কাউন্সিলর হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিএনপি সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৪৩ নেতাকর্মীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. ছালাহ উদ্দিন রিমনও রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে ৩৮ জন পুরুষ কাউন্সিলর ও চারজন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। গত ৫ জুন রাতে কেন্দ্র থেকে সিলেট মহানগর বিএনপির কাছে বহিষ্কারের আদেশ আসে।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ‘মীরজাফর’ আখ্যা দিয়ে মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপনসহ বিএনপির ১৯ নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। ৪ জুন দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ সম্পর্কে জানা যায়।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ৯ নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। ৩ জুন রাতে নিজ নিজ নেতার নামে বহিষ্কারের চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিল্টন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় ১৬ নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর করা চিঠিতে এই বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় তাদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো।

যেসব নেতার বহিষ্কার করা হয়েছে তারা স্থানীয় জনপ্রিয়, জনসম্পৃক্ত। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকার জনগণের সার্বক্ষণিক পাশে থাকার, জনগণের সুখ দুঃখের সাথী। এসব ব্যক্তি একদিনে পরিচিতি লাভ করে না। গণমানুষের পাশে থাকার নানা পরীক্ষা দিয়েই জননেতা হন। তাদের ‘বেঈমান’ বলাটা কি ঠিক?

তারা প্রত্যেকেই বিএনপি নামের দলটিকে সমর্থন করে, তারা স্থানীয় ভাবে জনগণের মাঝে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা সবাই যদি দলের কাছে ‘বেঈমান’ হয়ে যায়, তাহলে বিষয়টা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?

সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচন। এ নির্বাচনে তো সরকারের পতন হয় না। এটা মোটেই রাজনৈতিক পালাবদলের নির্বাচন নয়। বরং সিটি করপোরেশন এলাকার ঘরে ঘরে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কর্মীদের জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষার নির্বাচন। এ থেকে অনেক হিসাব সহজ হয়ে যায় ওই সব রাজনৈতিক দলের আগামী কর্মসূচি। বড় সংগঠনগুলো বুঝে নেয় কোন এলাকার কোন কোন কর্মী জনপ্রিয়তায় কতোটা এগিয়েছে, কতোটা পিছিয়েছে।

বিএনপি যাদের ‘বেঈমান’ বলে বহিষ্কার করেছে, ভোটের ফলাফলে দেখা গেলো তাদের বেশির ভাগই বিজয়ী হয়েছেন। ওইসব এলাকার জনগণের কাছে ওইসব নেতারা ‘বেঈমান’ নয়। তারা তাদের পরীক্ষিত বন্ধু। যারা তাদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন, তাদের কি বলবেন? বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।

মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিটি থেকে ১১৬ স্থানীয় নেতাকর্মীকে ‘বেঈমান’ বলে দল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি। প্রায় ১৫ বছর বিএনপি ক্ষমতায় নেই। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এরা সবাই দলের হয়ে কাজ করতে গিয়ে মামলা হামলায় পড়েছেন। একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে আইনজীবীর অফিস আর আদালত পাড়ায় সময় কাটাচ্ছেন। সময় আর অর্থ হারিয়ে অনেকেই গরিব হয়ে গেছেন।

২০০৬ সালের পর থেকেই বিএনপির হালে পানি নেই। দলের নেতাকর্মীরা নানা সংকটে দিন পার করছেন। একাধিক মামলা চালাতে গিয়ে অনেকেই অর্থসংকটে পড়েছেন। যারা বিভিন্ন সময়ে জেলবন্দি হয়েছেন, কঠিন সময় কেটেছে ওইসব পরিবারগুলোর। সব সংকটে কর্মীদের ভরসা হচ্ছে স্থানীয় নেতা। পাঁচ সিটি থেকে বিএনপি এমন ১১৬ নেতাকেই ‘বেঈমান’ আখ্যা দিয়ে বিদায় করেছে দল থেকে। এখন ওইসব নেতার অনুসারী কর্মীরা কোথায় যাবে? অসময়ে যখন ঘর গোছানোর কথা তখন তৃণমূলে ঘর ভাঙছে বিএনপি। বিএনপির অনেকগুলো রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের মধ্যে এটাও একটি।

সব দেশেই যুগে যুগে দেখা গেছে, একটি সরকার এবং তার রাজনৈতিক দল বেপরোয়া হয়ে ওঠে তখন, যখন তার প্রতিপক্ষ থাকে খুবই দুর্বল। আমাদের সরকার তাদের কাজে কি ভুল করছে, আমজনতা তা বুঝতে পারছে না। আমজনতাকে সঠিক বার্তা দেওয়ার মতো কোনো বিরোধী দল কি আছে? নেই তো। সরকারের মেয়াদ শেষের বাজেট পেশ হলো। সংসদে বাজেটের ওপর জনগণের কি প্রভাব পড়বে তা নিয়ে বলার কেউ নেই। বিএনপির যে দু-চারজন ছিলেন এবং কথাও বলতেন, তারাও পদত্যাগ করে চলে গেছেন। তাতে কি লাভ হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা ছবি দেখলাম। রাজপথে ঝলমলে আলোতে হারিকেন জ্বালিয়ে মিছিল করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তা নিয়ে নানা মহলে নানা কথা হচ্ছে। এই হচ্ছে আমাদের বিরোধী রাজনৈতিক দল। এরা নিজের ভালোটাও বোঝে বলে মনে হয় না। জনগণ কীভাবে তাদের ওপর আস্থা রাখবে?

লেখক: সাংবাদিক।

এইচআর/ফারুক/জিকেএস

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা ছবি দেখলাম। রাজপথে ঝলমলে আলোতে হারিকেন জ্বালিয়ে মিছিল করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তা নিয়ে নানা মহলে নানা কথা হচ্ছে। এই হচ্ছে আমাদের বিরোধী রাজনৈতিক দল। এরা নিজের ভালোটাও বোঝে বলে মনে হয় না। জনগণ কীভাবে তাদের ওপর আস্থা রাখবে?

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।