প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফর

প্রতিশ্রুত জ্বালানি সহায়তা সংকট মোকাবিলায় সাহায্য করবে?

ইরিনা হক
ইরিনা হক ইরিনা হক , গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০৯:৫৪ এএম, ২৬ মে ২০২৩

কাতারের আমির তার দেশ থেকে বৃহত্তর এলএনজি সরবরাহের বিষয়ে বাংলাদেশকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। ২৩ মার্চ, ২০২৩ তারিখে আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি দোহার আমিরি দেওয়ানে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে আমি আমির হিসেবে আপনাকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেব কারণ আপনি একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ। দুই নেতা জ্বালানি, ব্যবসা, বিনিয়োগ, বাংলাদেশি জনশক্তির পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহ এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এই বৈঠকটি অত্যন্ত উষ্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’

জ্বালানি সম্পর্কে আমির বলেন, কাতার থেকে বাংলাদেশে বৃহত্তর জ্বালানি সরবরাহের বিষয়ে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা কয়েক মাস বাকি। মোমেন বলেন, এই প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন। তিনি আরও বলেন যে, এই নতুন চুক্তি শিগগির স্বাক্ষরিত হতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চায় কাতার। একই সঙ্গে স্থিতিশীলতার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জাসিম আল থানি। এসময় প্রধানমন্ত্রী কাতারের কাছে জ্বালানি সহায়তা চেয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

মঙ্গলবার (২৩ মে) স্থানীয় সময় দুপুরে দোহার র‌্যাফলস টাওয়ারে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি সহযোগিতা আরও বাড়াতে শিগগির চুক্তি করতে কাতার সম্মত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমরা আপনাদের কাছ থেকে অনেক জ্বালানি ক্রয় করি। আমরা জ্বালানির বিষয়ে কাতারের সহায়তা চাই। এ প্রসঙ্গে তারা (কাতার) অঙ্গীকার করেছে যতটুকু যেভাবে সম্ভব সহায়তা করবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাতার প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, কাতারে বাংলাদেশের অনেক লোক কাজ করে। এ বিষয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মানুষগুলো তাদের সম্পদ।

ফুটবল বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর কাতারে অনেক প্রবাসীর চাকরি হারানোর আশঙ্কার কথা জানিয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনা বলেন, ফুটবল বিশ্বকাপ শেষে চাকরি চলে যাবে, এটা ভেবে অনেকে আতঙ্কিত। এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালিরা এখানেই থাকবে। তারা আমাদের বন্ধু, তারা আমাদের সহযোগী। যতদূর পারি আমাদের দেশে তাদের রাখবো। ড. মোমেন বলেন, এটা (কাতারের প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস) আমাদের প্রবাসীদের জন্য খুব ভালো বিষয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালীন আবাসস্থল লুসাইল সিটির হোটেল ওয়ালডর্ফ অ্যাস্তোরিয়ায় তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন কাতারের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সাদ বিন শেরিদা আল কাবি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বৈঠকেও জ্বালানি ইস্যুটি নিয়ে আলাপ হয়েছে। কাতার থেকে জ্বালানি নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

ড. মোমেন বলেন, ২০১৭ সালে কাতার থেকে জ্বালানি নেওয়ার বিষয়ে ১৫ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি করে বাংলাদেশ। সেই চুক্তিটি অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ও বুদ্ধিমানের কাজ ছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ২০২৫ সাল থেকে কাতার থেকে আরও জ্বালানি পেতে হলে এখনই চুক্তি করতে হবে। শিগগির এ চুক্তি সই হবে। ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত একটি ১৫ বছরের চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ এখন প্রায় ৪০টি কনটেইনার জ্বালানি আমদানি করছে, যার অর্থ ১.৮-২.৫ এমটিএ। কিন্তু এখন বাংলাদেশ কাতার থেকে এলএনজির বৃহত্তর সরবরাহ চায়।

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে শ্রম অভিবাসন (৮ লাখ বাংলাদেশী কর্মী এবং মার্কিন ১.৩ বিলিয়ন রেমিটেন্স), জ্বালানি সহযোগিতা (১৫ বছরের জি-টু-জি এনএলজি চুক্তি), এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ক্রমাগত সহায়তাসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে অবিরাম সহযোগিতা রয়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে কাতার এবং ওমান থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ক্রয় চালিয়ে যাচ্ছে এবং বছরে প্রায় চার মিলিয়ন টন তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করে।

কাতারের সাথে চুক্তির মেয়াদ ২০৩২ সালে শেষ হবে এবং ওমানের সাথে ২০২৯ সালে মেয়াদ শেষ হবে। কাতার অন্যতম শীর্ষ জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে কাতারের সাথে জি-টু-জি ১৫ বছরের জন্য এলএনজি চুক্তি করেছে। তবে ইউক্রেন সংকট, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং পরবর্তীকালে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে জ্বালানি সংকট দেখা দেয়। স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির উচ্চমূল্যের কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবিলায় লড়াই করছে।

কাতার মধ্যপ্রাচ্যের একটি তেলসমৃদ্ধ দেশ। তার অর্থনীতিকে সমর্থন করার জন্য দেশটি মূলত বিদেশি শ্রমের ওপর নির্ভরশীল: কাতারের ৮৯.৫ শতাংশ বাসিন্দা বিদেশি নাগরিক। বিপরীতে, বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম শ্রম রপ্তানিকারক দেশগুলোর একটি। প্রায় ৪,০০,০০০ বাংলাদেশী প্রবাসী সেখানে কাজ করছেন, যা কাতারের মোট বাসিন্দার ১২.৫ শতাংশ। তেলসমৃদ্ধ দেশটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের প্রবাসী ও অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ।

কাতার চ্যারিটি বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি স্কুল, এতিমখানা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করে। ২০১৭ সালের জুন মাসে, বাংলাদেশ পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য বার্ষিক ২.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি পাওয়ার জন্য কাতারের কোম্পানি রাসগ্যাসের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটা লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে গত পাঁচ বছরে কাতার থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ মার্কিন ১ বিলিয়ন ছুঁয়েছে।

বাংলাদেশ যেহেতু জ্বালানি সংকটে ভুগছে, কাতার তার ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির কাছে বছরে আরও এক মিলিয়ন টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী রোববার (৫ মার্চ) কাতারের দোহায় কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর জাতিসংঘের পঞ্চম সম্মেলনের ফাঁকে দেশটির আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এদিকে, বাংলাদেশ এই জ্বালানি চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাতারের আমির বাংলাদেশকে জ্বালানি সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমিরকে বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের পর আমাদের বড় জ্বালানি সমস্যা রয়েছে। আমরা আরও জ্বালানি চাই। এখন বাংলাদেশ কাতার থেকে বছরে প্রায় ৪০টি কনটেইনার জ্বালানি আমদানি করে, অর্থাৎ ১.৮ থেকে ২৫ মিলিয়ন টন। আমরা যা নেব তা নবায়ন করব। এছাড়াও আমরা আরও এলএনজি চাই।

আবদুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে আন্তরিকভাবে সাড়া দিয়ে কাতারের আমির বাংলাদেশ আরও কতটা চায় জানতে চান। আমরা বলেছি, আমরা আরও ১ মিলিয়ন টন চাই, আরও ১৬-১৭ কনটেইনার চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনুরোধের পর কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমি আজ আমাদের জ্বালানিমন্ত্রীকে নির্দেশ দিচ্ছি। আপনি (শেখ হাসিনা) দেশে ফেরার আগে আমি আপনার সাথে দেখা করব এবং এর মধ্যে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেব। আমি আপনাদের সাহায্য করতে চাই। কাতার সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

বাংলাদেশ ও কাতার সম্প্রতি তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করেছে। কাতারের ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জ্বালানি খাত, এলপিজি স্টোরেজ টার্মিনাল, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে জরুরি এলএনজির জন্য কাতারকে অনুসরণ করেছে এবং তুলনামূলক কম দামে সরবরাহের জন্য ঋণ প্রসারিত করেছে। এলএনজির বর্ধিত ঋণ এবং জরুরি সরবরাহ বাংলাদেশকে জ্বালানি নিরাপত্তায় সহায়তা করবে।

আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জ্বালানি সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে। বাংলাদেশ যদি বিলম্বিত অর্থপ্রদানের ভিত্তিতে কাতারের এলএনজি পেতে পারে, তবে এটি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে সহজ করবে এবং অন্য প্রয়োজনীয় আমদানি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে, যার জন্য তাত্ক্ষণিক অর্থপ্রদান প্রয়োজন। কাতার শোধনাগার খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে পারে। ওআইসি সদস্যপদ এবং মুসলিম পরিচয় বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ এখন কঠোর পরিশ্রম করে বিশ্বের মানচিত্রে তার উন্নয়নের ছাপ ফেলেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্যদের মতো বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অত্যাবশ্যকীয় জ্বালানীর অভাব রপ্তানিমুখী পোশাক ইউনিটগুলোর জন্য বিদেশি অর্ডারের ক্ষতির কারণ হতে পারে। অন্য শিল্পের উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ, বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা চাকরি হারাতে পারে এবং সমাজে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যসহ সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তাই উন্নয়ন ও শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে বর্তমান জ্বালানি সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। এদিকে, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে খুবই আগ্রহী এবং তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা হবে, বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সম্পর্ক সুসংহত হবে। আমিরের সফরের সময় বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক উপকরণ- এমওইউ এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে, যা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করবে।

আমিরের বাংলাদেশ সফর অবশ্যই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করবে এবং বাংলাদেশে কাতারি বিনিয়োগের পথ সুগম করবে। কাতারকে বাংলাদেশের দরকার। বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা সম্প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর এক হাজার ১২৯ সদস্যকে ডেপুটেশনে কাতারে পাঠানোর চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে। চুক্তিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন করা হবে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর। দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনী চূড়ান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে। বাংলাদেশ ও কাতার উভয়ই এখন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় আগ্রহী।

সামগ্রিক সম্পর্ক ইঙ্গিত দেয় যে এই দুটি দেশ একে অপরের কার্যকর অংশীদার হতে পারে। কাতারের মতো দেশের কাছে বাংলাদেশ সুযোগের দেশ। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ উৎপাদন করে এবং কাতার বিদেশ থেকে ওষুধ আমদানি করে। কাতারের আমাদের হাইড্রোকার্বন এবং সেবা খাতে বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া করপোরেট ট্যাক্স দিয়ে আয়কর কমানোয় বাংলাদেশে বিনিয়োগ দেশের জন্য আরও বেশি লাভবান হবে। বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ উপভোগ করছে এবং উভয় দেশই এই বিরল সুযোগ থেকে উপকৃত হতে পারে। ডিজিটাল স্পেসে বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে এবং কাতার বাংলাদেশের আইটি খাতেও বিনিয়োগ করতে পারে।

বরং আশাবাদী, বাংলাদেশের অর্থনীতি মধ্যম আয়ের গোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হতে চলেছে। মুদ্রা স্থিতিশীল থাকাকালীন সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করা আকর্ষণীয়। উপরন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের নীতি শাসন অনুকরণীয় হয়েছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশ এবং মানবিক ঝুঁকির দিক থেকে দেশটিকে ইতিবাচকভাবে মানচিত্র করা হয়েছে, যাতে এর প্রবৃদ্ধির গতি অব্যাহত থাকে। এদিকে, বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতা (জটিলতা) অপসারণ করাও গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন দেশটি এখনও নিরাপদ এবং ব্যবসাবান্ধব জাতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি।

উভয় অংশীদারের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং প্রবণতা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য অনুকূল কারণ কাতার নিয়মিতভাবে বিদেশে সম্ভাব্য খাতে বিনিয়োগ করে। ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের একটি উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য থাকলেও কাতারের মতো দেশ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ও অবদান রাখতে পারে।

লেখক: সুইডেন প্রবাসী গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট।

এইচআর/ফারুক/জিকেএস

বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতা (জটিলতা) অপসারণ করাও গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন দেশটি এখনও নিরাপদ এবং ব্যবসাবান্ধব জাতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। উভয় অংশীদারের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং প্রবণতা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য অনুকূল কারণ কাতার নিয়মিতভাবে বিদেশে সম্ভাব্য খাতে বিনিয়োগ করে। ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের একটি উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য থাকলেও কাতারের মতো দেশ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ও অবদান রাখতে পারে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।