সময় কাটাই আল্লাহপাকের স্মরণে
আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ। পবিত্র জুমুআর দিন। পবিত্র মাহে রমজানের নাজাতের দশকের দ্বিতীয় দিনের রোজা অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ।
নববর্ষ উপলক্ষ্যে আমাদেরকে জাগতিকতার আনন্দ-উল্লাসে ডুবে না গিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার স্মরণে বছরের সূচনা করা চাই এবং সারা বছরই যেন আমার দ্বারা কোনো অন্যায় কাজ সংঘটিত না হয় তারও অঙ্গীকার করি নববর্ষের এই দিনে।
একান্ত একাগ্রতা ও প্রচণ্ড নিষ্ঠার সাথে ইবাদত করার বিশেষ তাগিদ নিয়ে আসে রমজানের শেষ দশক। বিগত বছরে আত্মায় সংগোপনে সঞ্চিত তাবৎ পাপ অপরাধ ও হৃদয়াভ্যন্তরে পুঞ্জীভূত সব পঙ্কিলতাকে ধুয়ে মুছে সাফ করে সজ্জিতরূপে সজ্জনে পরিণত হওয়ার দশক। আর এ দশকে মুমিন-মুত্তাকিরা লাইলাতুল কদরের সন্ধানে থাকে।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের জীবনে আগত প্রতিটি রমজানের শেষ দশকের কোন এক বেজোর রাত্রিতে এ সম্মানিত রজনীকে তালাশ করো।’ অর্থাৎ রমজানের ত্রিশটি দিবস অসম্ভব কঠোর সাধনায় অবিরাম আরাধনার পর এ মাসের প্রায় শেষ প্রান্তে সে আরাধক তার কাঙ্খিত রাতের সন্ধান লাভ করবে। এটাই হলো রমজানের নিবিড় ইবাদতের মর্মকথা।
মহান আল্লাহপাক বলেন, ‘স্মরণ রেখো, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে’ (১৩:২৮)। মুমিন মাত্রই মাহে রমজানের পবিত্রতায় আল্লাহ স্মরণের মাত্রাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়, ইবাদতের একাগ্রতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এমন কোনো পুণ্যের কাজ নেই যা কিনা সে হাতছাড়া করে। তখন তার অন্বেষণ মাত্র একটাই, আর তা হলো, লাইলাতুল কদরকে লাভ করা। এ প্রাপ্যতার মাঝেই সে আত্মার শান্তি আর এ উপার্জনের মাঝেই সে জীবনের সার্থকতা। প্রতিটি বছর রমজান তার সেই স্বর্গ-সুধা প্রদানের জন্যই আমাদের প্রত্যেককে আহ্বান করে।
আসুন না, আমরা সবাই রমজানের অবশিষ্ট এই দিনগুলো সিয়াম সাধনায় নিবিড়চিত্তে নিবেদিত হয়ে সেই মাহাত্ম্য আহরণে মত্ত হই আর অনেক বেশি কোরআন পাঠ করি। আল্লাহপাক বলেছেন, ‘রমজান সেই মাস যে মাসে কোরআন নাজেল হয়েছে’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।
সুতরাং রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলো রোজা পালন এবং ইবাদতের সাথে কোরআন পাঠ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অতীব পুণ্যের কাজ। আত্মাকে ঐশী সাজে সাজানোর এক বিশেষ সময়। তবেই হাশরের দিন রমজান ও কোরআন এ বলে আমাদেরকে সুপারিশ করবে যে, রোজা বলবে, ‘হে খোদা! আমি তাকে পানাহার এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিবৃত্ত রেখেছি, এ কারণে তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। আর কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা হতে বিরত রেখেছি এবং তাকে শুইতে দেইনি, সুতরাং এই কারণে তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল করো’ (বাইহাকি)। এ দ্বিবিধ ইবাদতে আমরা যত নিবিড়ভাবে নিবিষ্ট হবো রমজানের এ শেষ দশক আমাদের জন্য ততই কল্যাণকর হবে।
এছাড়া রমজানের এই শেষ দশকেই রয়েছে আত্মার নাজাতের প্রতিশ্রম্নতিসহ লাইলাতুল কদরের উপহার। এমনিভাবে বিভিন্ন ইবাদতে খোদা মানুষের আত্মার মঙ্গলার্থে নানান উপায়ে মজুত রেখেছেন তার অনন্যসব অবদান। এসব ব্যবস্থাদি মানুষের প্রতি খোদার অনুকম্পা প্রদর্শনেরই প্রমাণ। তাই আমাদের সবার উচিত হবে, খোদা সকাশে ধর্ণা দিয়ে সেসব অনুকম্পাদি আহরণ করা। নচেৎ জীবন হবে মূল্যহীন। আমরা তো কোনভাবেই প্রত্যাশা করতে পারি না যে, আমাদের জীবনে আবারও এ রমজান ফিরে আসবে। আবারও এর তৃতীয়াংশের অবদান লাভ করতে পারবো।
তাই আমাদের প্রত্যেকের স্বীয় আত্মার নাজাতের জন্য এখনই ক্রন্দনে রত হয়ে যাওয়া উচিত। এই দশকে আমাদের ইবাদত-বন্দেগিতে এমন পবিত্র পরিবর্তন ঘটাতে হবে যাতে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি। আল্লাহতায়ালা আমাদের ইবাদত-বন্দেগি কবুল করে তাঁর সন্তুষ্টির চাদরে জড়িয়ে নিন, আমিন।
বাংলা নববর্ষ সবার জন্য বয়ে আনুক অফুরন্ত কল্যাণ। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।
এইচআর/জিকেএস