চাঁদাবাজের গুলির সামনে অসহায় জীবন
জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি সরকারের অন্যতম সাংবিধানিক দায়িত্ব। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সবক্ষেত্রেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে হত্যার মতো ফৌজদারি অপরাধ বাড়তে থাকলে সেটি বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়। নরসিংদীতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এক ব্যবসায়ী ও তার বন্ধুকে গুলি করে হত্যা করেছে। এটি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক দিকটিকেই তুলে ধরছে। এ ধরনের অপরাধ বন্ধে অপরাধীর গ্রেফতার ও কঠিন শাস্তির কোনো বিকল্প নেই।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নরসিংদী পৌর শহরের ভাগদী এলাকার ২ নম্বর সেতুসংলগ্ন বালুর মাঠে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে এলাকার মোরশেদ খন্দকারের ছেলে রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী খোকন খন্দকার (৩২) ও মতিন খন্দকারের ছেলে আরিফ খন্দকার (৩০) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। নিহতদের স্বজনদের দাবি চাঁদা চেয়ে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা এই হত্যাকাণ্ড চালায়। জানা যায়, প্রবাসী রফিক খন্দকার এক বছর আগে নরসিংদী শহরের ভাগদী বালুর মাঠ এলাকায় জমি কেনেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে তিনি সেখানে বাড়ি করার কাজ শুরু করলে চৌয়ালা এলাকার কয়েক সন্ত্রাসী চাঁদা দাবি করে। রফিক ঘটনাটি খোকনকে জানান। গতকাল সন্ধ্যায় চাঁদাবাজরা ঘটনাস্থলে গেলে রফিক খন্দকার ফোন করে খোকনের সহযোগিতা চান। ব্যবসায়ী খোকন তার বন্ধু আরিফকে নিয়ে সেখানে গেলে তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কথাকাটাকাটি হয়। চাঁদাবাজরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দুই বন্ধুও সেখান থেকে বের হয়ে ২ নম্বর সেতুসংলগ্ন বালুর মাঠ পর্যন্ত গেলে সেখানে তাদের গুলি করে সন্ত্রাসীরা। গুলির শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যার কার্যকারণ তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তবে এটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় দুইজন মানুষকে সন্ত্রাসীদের হাতে জীবন দিতে হলো। একটি সভ্য সমাজে এই অপতৎপরতা চলতে পারে না। বাস্তবতা হচ্ছে চাঁদাবাজি বড় ধরনের অপরাধ হলেও এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা সন্তোষজনক নয়। বরং দিন দিন চাঁদাবাজরা এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠছে যে তারা মানুষের জীবন কেড়ে নিতেও পিছপা হচ্ছে না। আইন-কানুনের কোনো তোয়াক্কা করছে না। অপরাধ করলে যদি শাস্তি পেতে না হয় তাহলে অপরাধীরা উৎসাহী হবে-এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু নরসিংদীতে নয় সারাদেশেই এমনকি খোদ রাজধানীতেই চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে অহরহ। সত্যি বলতে কি চাঁদাবাজি রীতিমতো কালচারে পরিণত হয়েছে। সাধারণত ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে, কখনো তাদের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজরা সক্রিয় থাকে। অপরাধের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রলেপ যুক্ত হলে এর বিচার পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু সমাজে অপরাধীর সহাবস্থান কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ জন্য চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নরসিংদীর জোড়াখুনের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বন্ধ করতে হবে অবৈধ অস্ত্রের সংস্থান। সর্বোপরি রাজনৈতিক মোড়কে যেন চাঁদাবাজির ঘটনা না ঘটে সেটি ক্ষমতাসীন দলকে নিশ্চিত করতে হবে। চাঁদাবাজরা যদি প্রশ্রয় না পায় তাহলে তা বন্ধ হতে বাধ্য। দৃষ্টি দিতে হবে সেইদিকে।
এইচআর/আরআইপি