শিশুহত্যা চলবেই?


প্রকাশিত: ০৫:২৭ এএম, ০২ মার্চ ২০১৬

আবারো শিশুহত্যা। আবারো নির্মমতা। অমানবিকতা। এবার রাজধানীর বনশ্রীতে নিজ বাসায় পাওয়া গেল অরনী ও আলভী নামের স্কুল পড়ুয়া দুই সহোদরের মৃতদেহ। সোমবার রাতে চাইনিজ খাবার খেয়ে দুই ভাই-বোনের মৃত্যুর খবরে আটক করা হয় সংশ্লিষ্ট চাইনিজ রেস্টুরেন্টের মালিক, ম্যানেজারসহ তিনজনকে। পরে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বলা হয় নিহতদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এরপরই  তদন্ত নতুন মোড় নেয়। এদিকে দুই সন্তানের মরদেহ হাসপাতালে রেখে গ্রামের বাড়িতে চলে যায় তাদের  পিতা-মাতা। এ নিয়েও চলছে আলোচনা। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, র‌্যাব হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবা-মা এবং খালাকে জামালপুর থেকে ঢাকায় নিয়ে অাসছে।       

শিশুহত্যার বিষয়ে আমরা পূর্বেও এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। শিশুহত্যা তো বন্ধ হচ্ছেই না  বরং ক্রমাগত যেন তা বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কি ভেবে দেখেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

হবিগঞ্জের বাহুবলে চার শিশুকে হত্যা,  কুমিল্লায় বৈমাত্রেয় ভাইয়ের হাতে দুই শিশুর খুন হওয়া, বনশ্রীতে নিজ বাসায় দুই সহোদরের নিহত হওয়া, কুমিল্লায় বস্তাবন্দী এক শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনা সমাজের অন্ধকার দিকটিকেই তুলে ধরছে। সামাজিক অবক্ষয় এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে, নিজ পিতা-মাতার কাছেও সন্তান এখন নিরাপদ কিনা এ নিয়েও সন্দেহ অবিশ্বাস দেখা দিচ্ছে। এই অবস্থার উত্তরণ অত্যন্ত জরুরি।

সাম্প্রতিক শিশু হত্যার প্রেক্ষাপটে অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি অপরাধীদের এক ধরনের মানসিক বিকৃতির লক্ষণ। পাশাপাশি শিশুদের পরিবার বা পিতামাতাকে মানসিকভাবে চিরদিনের জন্য দুর্বল করে দেওয়ার কৌশলও এটি। এছাড়া সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। মানুষের সক্ষমতা বাড়ছে। একটি সমাজ যখন উন্নত সামাজিক ব্যবস্থার দিকে প্রবেশ করতে থাকে, তখন সমাজে বেশকিছু বিষয়ে পরিবর্তন আসতে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম মানুষের আর্থিক সক্ষমতা। মানুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। চাহিদা আরও বাড়ছে। পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থায় যারা পিছিয়ে থাকে তাদের মধ্যে জেদ, মন কষাকষি, ক্ষোভ, না পাওয়ার আকুতি, আফসোসসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এতে করে তারা নানা অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ে।

অপরাধের কারণগুলো চিহ্নিত করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজে শিশুহত্যা চলতে থাকলে সামাজিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। যে সমাজে শিশুরা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে বেড়ে উঠতে পারে না-সেই সমাজের উন্নয়ন, অগ্রগতি আশা করাও বৃথা। আর কেবল দালান, কোঠা, রাস্তাঘাটের উন্নতি করলেই চলবে না মানসিক বিকাশ না ঘটলে মানবিকতারও উন্মেষ ঘটবে না। সংস্কৃতিবিমুখ, মূল্যবোধহীন একটি সমাজব্যবস্থায় কোনো কিছুই আশা করা যায় না। লোভ-লালনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয় যখন বড় হয়ে ওঠে তখনই মানবিকতা লোপ পায়। অপরাধ দমনে অপরাধীর শাস্তির পাশাপাশি এমন একটি সমাজ তথা রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে হবে যেখানে বৈষম্যহীনভাবে সবাই যার যার  অধিকার ভোগ করতে পারে। বিশেষ করে শিশুর বাসযোগ্য একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ব্যাপারে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগুনোর কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।