শিশুর প্রতি জিঘাংসা বন্ধ হোক


প্রকাশিত: ০৫:৪২ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে দেশে শিশুহত্যা বন্ধ হচ্ছে না। বরং ক্রমাগত যেন তা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ কুমিল্লায় দুই শিশু ঘাতকের নির্মম জিঘাংসার শিকার হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কি ভেবে দেখেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

হবিগঞ্জের বাহুবলে চার শিশুকে হত্যার জের না কাটতেই এবার কুমিল্লায় বৈমাত্রেয় ভাইয়ের হাতে খুন হতে হলো দুই সহোদর শিশুকে। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কুমিল্লা সদরের দক্ষিণ উপজেলাধীন দক্ষিণ রসুলপুরের ঢুলিপাড়ায় নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মেহেদী হাসান জয় ও মেজবাউল হক মনি নামের সহোদর দুই ভাইকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার অভিযোগ উঠেছে নিহতদের বৈমাত্রেয় (সৎভাই) ভাই মোঃ আল শফিউল ইসলাম ছোটনের বিরুদ্ধে। ছোটন ঢাকার বেসরকারী ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএ (ব্যাচেলর অব বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন) শেষবর্ষের ছাত্র। সে ব্যবসায়ী আবুল কালামের প্রথম স্ত্রীর সন্তান। পারিবারিক কলহ এবং সম্পত্তির লোভে এ নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি আবুল কালাম তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও নিহত দুই শিশু ছেলের নামে ১৭ লাখ টাকায় জমি ক্রয় করেন। এতে প্রথম স্ত্রীর ছেলে আল শফিউল ইসলাম ছোটন ক্ষিপ্ত হয়। এমন ঘটনার সূত্র ধরেই ছোটন হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়ে থাকতে পারে।

সাম্প্রতিক শিশু হত্যার প্রেক্ষাপটে অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি অপরাধীদের এক ধরনের মানসিক বিকৃতির লক্ষণ। পাশাপাশি শিশুদের পরিবার বা পিতামাতাকে মানসিকভাবে চিরদিনের জন্য দুর্বল করে দেওয়ার কৌশলও এটি। এছাড়া সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। মানুষের সক্ষমতা বাড়ছে। একটি সমাজ যখন উন্নত সামাজিক ব্যবস্থার দিকে প্রবেশ করতে থাকে, তখন সমাজে বেশকিছু বিষয়ে পরিবর্তন আসতে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম মানুষের আর্থিক সক্ষমতা। মানুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। চাহিদা আরও বাড়ছে। পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থায় যারা পিছিয়ে থাকে তাদের মধ্যে জেদ, মন কষাকষি, ক্ষোভ, না পাওয়ার আকুতি, আফসোসসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এতে করে তারা নানা অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ে।

অপরাধের কারণগুলো চিহ্নিত করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজে শিশুহত্যা চলতে থাকলে সামাজিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। যে সমাজে শিশুরা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে বেড়ে উঠতে পারে না-সেই সমাজের উন্নয়ন, অগ্রগতি আশা করাও বৃথা। আর কেবল দালান, কোঠা, রাস্তাঘাটের উন্নতি করলেই চলবে না মানসিক বিকাশ না ঘটলে মানবিকতারও উন্মেষ ঘটবে না। মূল্যবোধহীন একটি সমাজব্যবস্থায় কোনো কিছুই আশা করা যায় না। লোভ-লালনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয় যখন বড় হয়ে ওঠে তখনই মানবিকতা লোপ পায়। অপরাধ দমনে অপরাধীর শাস্তির পাশাপাশি এমন একটি সমাজ তথা রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে হবে যেখানে বৈষম্যহীনভাবে সবাই যার যার  অধিকার ভোগ করতে পারে। বিশেষ করে শিশুর বাসযোগ্য একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ব্যাপারে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগুনোর কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।