কে নেবে এই মর্মান্তিক মৃত্যুর দায়?
রাজধানীর উত্তরায় গ্যাসের চুলার বিস্ফোরণে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে এক পরিবারের ২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং অপর সদস্যদের মারাত্মক আহত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দিল এ শহরের মানুষ কতটা অনিরাপদ। অপঘাতে মৃত্যু কখন যে কাকে কোন ঘটনায় কেড়ে নেবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এ ধরনের মুত্যুর কে নেবে দায়ভার? ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয়টাই বা কে করবে। কারণ এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কর্তৃপক্ষ কিছু বাণী-বিবৃতির মাধ্যমেই তাদের দায় সারার চেষ্টা করে। এতে তারা পার পেয়ে গেলেও জননিরাপত্তা থেকে যায় অরক্ষিত। এর একটি বিহিত হওয়া প্রয়োজন।
শুক্রবার চা বানানোর জন্য দেয়াশলাই জ্বেলে চুলায় আগুন ধরাতে গেলেই ঘটে বিস্ফোরণ। মুহূর্তে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ফ্ল্যাটে। ঝলসে যান গৃহকত্রী সুমাইয়া। কোলের শিশুসন্তানসহ পুড়ে যান গৃহকর্তা শাহনেওয়াজ। যিনি স্ত্রীকে সাহায্য করতে রান্না ঘরে গিয়েছিলেন শিশুসন্তানসহ। পাশের শোবার ঘরে ঘুমের মধ্যে দগ্ধ হয় তাদের আরো দুই ছেলে। প্রতিবেশিরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে হাসপাতালে দুটি ছেলে মারা গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন শাহনেওয়াজ ও সুমাইয়া।
স্বজনদের অভিযোগ, রান্নাঘরের গ্যাস সংযোগে ছিদ্র বা ত্রুটি থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কয়েক দিন আগে পরিবার নিয়ে এই বাসায় ওঠেন শাহনেওয়াজ। গ্যাস সংযোগে ত্রুটির বিষয়টি তিনি বাড়ির মালিককে জানালেও প্রতিকার হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে গ্যাস লিকেজ হয়েই সারাবাড়ি ছড়িয়ে পড়ে। দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় দেয়াশলাই জ্বালানোর সাথে সাথেই মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। এতে পরিবারের সবাই মারাত্মক দগ্ধ হন। এতে দুইজনের মুত্যু হয়। অন্যদের অবস্থায়ও আশঙ্কাজনক।
রাজধানীতে হরহামেশাই ঘটছে গ্যাসের সংযোগ ও চুলায় বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এতে হতাহতের সংখ্যাও কম নয়। পুলিশ ও হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৪ মাসে রাজধানীতে গ্যাস সংযোগের আগুনে দগ্ধ হয়ে নারী, শিশুসহ ২৪ জন নিহত হয়েছে। এ সময়ে দেড় শতাধিক মানুষ গ্যাসের সংযোগ ও চুলার আকস্মিক বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর আবাসিক গ্যাস সংযোগ ও চুলায় দুর্ঘটনা বেড়েছে। এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ গ্যাসলাইনে ছিদ্র বা ত্রুটি। ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ সংযোগের কারণেও ঘটছে অগ্নিকাণ্ড। কিন্তু কাউকে এর জন্য দায় নিতে হয়নি। ব্যাপকসংখ্যক মানুষের প্রাণহানিসহ অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থায়ও।
অবৈধ ও ত্রুটিপূর্ণ সংযোগসহ নানাবিধ কারণে ঘটছে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা। এছাড়া সচেতনতারও অভাব রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা লাইনে কোনো ত্রুটি বা সমস্যা দেখা দিলে বাড়ির মালিক কিংবা কর্তৃপক্ষের উচিত ত্বরিৎ গতিতে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে যে অবহেলা আছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। উত্তরার যে বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে সেখানেও গ্যাস লাইনে ত্রুটি ছিল। বাড়ির মালিককে তা জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরফলেই ঘটেছে মর্মান্তিক ট্র্যাজিডি। কিন্তু এর জন্য তো কাউকে দায় নিতে হচ্ছে না। এভাবে তো চলতে পারে না। একটা ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এর যে দুর্বল দিকগুলো আছে সেদিকে নজর দিলে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা যে এড়ানো যেত সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। উত্তরার ঘটনার তদন্ত করে দেখতে হবে কারো কোনো গাফিলতি ছিল কিনা। ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এইচআর/এমএস