নির্মম, পৈশাচিক, অমানবিক


প্রকাশিত: ০৪:২৫ এএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

হবিগঞ্জের বাহুবলে চার শিশু হত্যার ঘটনা বর্ণনা করার ভাষা নেই। কোনো সভ্য সমাজে এ ধরনের ঘটনা কল্পনাও করা যায় না। অথচ বলা যায় প্রায় প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে শিশু হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণের মতো নির্মম, পাশবিক ও অমানবিক ঘটনা। এ নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা লেখালেখি হলেও শিশুর ওপর নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। বরং দুর্বৃত্তদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে নিরীহ, নির্বিবাদী, নিষ্পাপ শিশুরা। যার সর্বশেষ নজির দেখা গেল বাহুবলে। এ অবস্থা আর কতোদিন চলবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।  

শুক্রবার বিকেলে বাড়ির পাশের মাঠে খেলা করতে যায় চার স্কুলছাত্র। সন্ধ্যার পরও তারা বাড়িতে ফিরে না আসায় অভিভাবকরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরদিন শনিবার ওই চার স্কুলছাত্রের সন্ধান না পেয়ে জাকারিয়া আহমেদ শুভর বাবা ওয়াহিদ মিয়া বাদী হয়ে বাহুবল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু পুলিশ তাদের উদ্ধার করতে পারেনি। নিখোঁজের ৫ দিন পর ৪ স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার বেলা ১১টার দিকে সুন্দ্রাদীঘি গ্রামের পার্শ্ববর্তী বালুরচর থেকে  মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। সকালে শ্রমিকরা বালু উত্তোলন করতে এসে পঁচা গন্ধ পায়। পরে তারা থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে। প্রশ্ন হচ্ছে পুলিশ কেন উদ্যোগী হলোনা নিখোঁজ চার শিশুকে উদ্ধারে। নাকি তারা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেনি? কিন্তু এটা হয় কী করে? পুলিশ তৎপর হলে চার শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা কোনো কঠিন কাজ ছিল না। এখন অপরাধীকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করলেই কি দায় মিটবে? সাধারণ মানুষই যদি অপরাধীকে ধরতে পারে তাহলে পুলিশের কাজ কী? এক্ষেত্রে পুলিশকে অবশ্যই দায় নিতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে শিশু হত্যার বিষয়টি উদ্বেগজনকহারে বেড়ে গেছে। শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারিতে সারা দেশে ২৯টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে কেরানীগঞ্জের স্কুলছাত্র আবদুল্লাহকে অপহরণ করে হত্যা করে লাশ ঘরের ভেতরে লুকিয়ে রাখা হয়। গাজীপুরে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে সোলায়মান নামে এক শিশুকে। কিশোরগঞ্জের নিকলীতে শিশুহত্যার অভিযোগে মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে দুই শিশুকে বিষ খাইয়ে মা আত্মহত্যা করেছেন। যার মধ্যে একটি শিশু মারা গেছে।

আর গত চার বছরে দেশে ১ হাজার ৮৫টি শিশুকে হত্যা করা হয়। পারিবারিক কলহ, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, ব্যক্তিগত লোভ অথবা স্বার্থ আদায়ের অস্ত্র হিসেবেই শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। মূল্যবোধের অবক্ষয়কেও শিশু নির্যাতন ও হত্যার বড় কারণ হিসেবে দেখছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।

গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল সিলেটের শিশু রাজন ও খুলনার মোহাম্মদ রাকিব হত্যা। সারাদেশে এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এমনকি রাজন হত্যার আসামী কামরুলকে সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই দুই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। এরপর আশা করা গিয়েছিল শিশু হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এর উল্টো।

শিশু হত্যা ও নির্যাতন বন্ধে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কাজ করতে হবে সামাজিক মূল্যবোধ ও অবক্ষয় রোধে । মনে রাখতে হবে, যে সমাজে শিশুরা নিরাপদ নয় সে সমাজ কখনো তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। উন্নয়ন, অগ্রগতি কোনো কিছুই টেকসই হবে না যদি শিশুর বাসযোগ্য একটি নিরাপদ পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে না পারি।

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।