‘চীনের নতুন যাত্রা’
আন সিয়াও ইয়ু
মাননীয় রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, সম্মানীত অতিথিবৃন্দ ও তথ্যমাধ্যমের বন্ধুগণ, শুভ বিকেল।
আজকের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের তথ্যমাধ্যমের অনেক বন্ধু ও উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দের সঙ্গে ভাব বিনিময় করার সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।
সম্প্রতি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিংশ জাতীয় কংগ্রেস শেষ হয়েছে। এ সম্মেলনে চীনের পরবর্তী উন্নয়নের সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; চীনকে সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ হিসেব গড়ে তোলার নতুন যাত্রা উন্মোচিত হয়েছে। চীনের ক্ষমতাসীন পার্টি হিসেবে সিপিসির বর্তমান কেন্দ্রীয় কর্তব্য হলো গোটা দেশের বিভিন্ন জাতির জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে, চীনকে সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক ও শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলা; এবং চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়নের মাধ্যমে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে দ্রুত অগ্রসর হওয়া।
চীনের নতুন যাত্রা মানে চীনের নতুন উন্নয়ন। চীনের নতুন উন্নয়ন বিশ্বের জন্য নতুন সুযোগও বটে। চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন হচ্ছে বিশাল জনসংখ্যার আধুনিকায়ন, সকল জনগণের অভিন্ন সমৃদ্ধির আধুনিকায়ন, বস্তুগত সভ্যতা ও আধ্যাত্মিক সভ্যতার মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ আধুনিকায়ন, মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থানের আধুনিকায়ন, এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে যাওয়ার আধুনিকায়ন। এ ধরনের আধুনিকায়ন মানব সভ্যতার নতুন রূপ। এটি অবশ্যই বাংলাদেশসহ এশিয়া তথা গোটা বিশ্বের জন্য উন্নয়নের বড় লভ্যাংশ বয়ে আনবে। চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন প্রমাণ করবে যে, আধুনিকায়ন কেবল পশ্চিমা পুঁজিবাদের একমাত্র মডেল নয়, বরং বিভিন্ন দেশ বা সভ্যতা তাদের নিজস্ব আধুনিকায়নের পথ বেছে নিতে পারে।
আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের সামনে ‘চীনের নতুন যাত্রা’-কে তথ্যচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরতে যাচ্ছি। এ ধারাবাহিক তথ্যচিত্রেএকাধিক প্রাণবন্ত গল্প বলা হয়েছে। এসব গল্পচীনের প্রাণশক্তিপূর্ণ উন্নয়নের ‘পাসওয়ার্ড’ প্রকাশ করে; চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়নের পথে চীনা জনগণের নিরন্তর চলার চিত্র তুলে ধরে। আমার বিশ্বাস, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দর্শকরা চীনের নতুন যাত্রার বৈশ্বিক তাৎপর্য আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
আজকের এ আয়োজনে চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)-র বিভিন্ন টিভি-অনুষ্ঠানের সাথেও আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে। আমি আশা করি, এ চমৎকার অনুষ্ঠানগুলো সভ্যতার আদান-প্রদান ও একে অপরের কাছ থেকে শেখার মাধ্যম হবে এবং বাংলাদেশী দর্শকরা চীনকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন।
চীন ও বাংলাদেশ পরস্পরের ঐতিহ্যবাহী বন্ধু ও প্রতিবেশী। দু’দেশের মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময়ের ইতিহাসও দুই সহস্রাধিক বছরের পুরোনো। এদিকে, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের সাথে ‘সোনার বাংলা’-র স্বপ্নকে সংযুক্ত করার কাজে নতুন সফলতা অর্জিত হয়েছে।
আমি এটা দেখে খুবই আনন্দিত যে, চায়না মিডিয়া গ্রুপের সাথে বাংলাদেশের আরটিভি, বাংলাভিশন, দীপ্ত টিভিসহ বিভিন্ন তথ্যমাধ্যম বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচারে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে। ‘চায়না আওয়ার’, ‘চায়না ফোকাস’, ‘জানা অজানা চীন’, ‘দ্য গ্রেট ওয়াল শো’-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাংলাদেশী দর্শকদের প্রিয় টিভি শো হয়ে উঠেছে। এই অনুষ্ঠানগুলো চীনের নতুন যাত্রা পর্যবেক্ষণ ও জানার জানালাও বটে।
বন্ধুরা, সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের পর সি চিনপিং আবারও সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সকল সদস্যের অভিন্ন ইচ্ছা এবং চীনের নতুন যাত্রায় কোটি কোটি মানুষের সাধারণ আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। চীনের পরবর্তী কৌশলগত লক্ষ্য বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য এর গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যও আছে।
বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কংগ্রেস সমাপ্ত হবার পরপরই সি চিনপিংকে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছেন। তিনি সি চিনপিংয়ের উত্থাপিত ‘মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি’ গড়ে তোলার চিন্তাধারার প্রতি পুনরায় সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসে জোরালো ভাষায় বলা হয়েছে: চীন মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলার কাজ বেগবান করতে; শান্তি, উন্নয়ন, ন্যায্যতা, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও মানবজাতির স্বাধীন ও সাধারণ মূল্যবোধ প্রচার করতে; বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে বোঝাপড়া ও বন্ধুত্ব বাড়াতে; এবং যৌথভাবে বিভিন্ন ধরনের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আহ্বান জানায়। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের তথ্যমাধ্যমেরও পালন করার মতো দায়িত্ব আছে।
চায়না মিডিয়া গ্রুপ বাংলাদেশের বিভিন্ন তথ্যমাধ্যমের সঙ্গে আরও ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করতে চায়। আর এর লক্ষ্য, দু’দেশের মানুষের পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ানো এবং তথ্যমাধ্যমের প্রভাবশক্তি কাজে লাগিয়ে যৌথভাবে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো। আমি বিশ্বাস করি, চীনের নতুন যাত্রায় চীন ও বাংলাদেশের তথ্যমাধ্যমগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা থেকে আরও বেশি সুফল অর্জিত হবে।
সবাইকে ধন্যবাদ।
১৮ নভেম্বর, ২০২২
একটি সিএমজি পরিবেশনা
চায়না মিডিয়া গ্রুপের অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্য
আন সিয়াও ইয়ু: চায়না মিডিয়া গ্রুপের এশিয়া ও আফ্রিকান ভাষা প্রচার বিভাগের মহাপরিচালক।
এইচআর/এমকেআর