বিচারাঙ্গনকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখুন
সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেয়া অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান বিচারপতিদের আদালতের নিয়মকানুন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। গতকাল বুধবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানির সময় এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির এই অভিমতের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। আদালত হচ্ছে মানুষের শেষ ভরসাস্থল। যে কোনো মূল্যে বিচারাঙ্গনকে সকল ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে।
গতকাল সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানি দ্বিতীয় দিনের মতো শুরু হয়। তখন মীর কাসেম আলীর পক্ষে শুনানির জন্য দাঁড়ান সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে অবসরে যাওয়া বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি অবসর-পরবর্তী ছুটিতে (পিআরএল) রয়েছেন। এরফলে হাইকোর্টের এ বিচারপতি এখনো সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। থাকছেন সরকারি বাড়িতেই। এ অবস্থায় নজরুল ইসলাম চৌধুরী মীর কাসেম আলীর পক্ষে শুনানির জন্য দাঁড়ালে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেয়া অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান বিচারপতিদের আদালতের প্রথা ও নিয়মকানুন মেনে চলা উচিত।’
অন্যদিকে সদ্য অবসরে যাওয়া একজন বিচারপতিকে ঘিরেও নানা বিতর্কের জন্ম হচ্ছে। প্রধান বিচারপতির সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই এই বিতর্কের অবতারণা করেন তিনি। একটি সেমিনারে অংশ নিয়ে ‘অবসরে যাওয়ার পর কোনো বিচারপতির রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থি’ বলে অভিমত দেন প্রধান বিচারপতি। এরপর এ নিয়ে পক্ষ বিপক্ষে নানা যুক্তিতর্ক উত্থাপিত হতে থাকে।
এর পর থেকেই গণমাধ্যমে এমন সব বিষয় চলে আসছে যেগুলো একেবারেই বিচারাঙ্গনের নিজস্ব বিষয়। সমস্যা হয়ে থাকলে আলোচনা করে সেগুলোর সমাধান করাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, এ নিয়ে দায়িত্বহীন আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেটা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে মানুষ দায়িত্বশীল আচরণই প্রত্যাশা করে। বিশেষ করে বিচারাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আচরণ কথাবার্তা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। তাছাড়া কোন কথার কী প্রতিক্রিয়া হবে, সমাজে এর কী প্রভাব পড়বে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে গণমাধ্যমেরও দায় রয়েছে। বক্তব্য প্রচারের ক্ষেত্রেও দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা চাই যে কোনো মূল্যে বিচারাঙ্গনকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা হোক। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এর কোনো বিকল্প নেই।
এইচআর/আরআইপি