দারিদ্র্য তাদের দমাতে পারেনি


প্রকাশিত: ০৫:১৭ এএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

‘হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান, তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিস্টের সম্মান’- কবি নজরুলের এই বাণী বাস্তবে প্রমাণ করে দেখালেন বাংলাদেশের দুই সোনার মেয়ে মাহফুজা আক্তার শিলা ও মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত এই দুই তরুণী অদম্য মনোবল আর দেশপ্রেমকে সঙ্গী করে দেখিয়ে দিয়েছেন দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াই করতে হয়। দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে হয় কিভাবে।এরা এখন অনুসরণীয় অনুকরণীয়। অভিনন্দন সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে স্বর্ণজয়ী দুই গোল্ডেন গার্লকে।  

সাঁতার ইভেন্টে দুটি স্বর্ণপদক জয় করেছেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার মেয়ে মাহফুজা আক্তার শিলা। এছাড়া ভারোত্তলনে ৬৩ কেজি ওজন ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক জিতেছেন বাংলাদেশের মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনলেও অভাব অনটনের মধ্যে রয়েছে তাদের দুজনেরই পরিবার। শিলা সাঁতার প্রতিযোগিতায় এ পর্যন্ত চারটি স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। যার মধ্যে দুটি স্বর্ণ পদক বিক্রি করে অসুস্থ পিতার চিকিৎসা সেবা এবং অভাবের সংসারের খরচ যুগিয়েছেন।

শিলার পিতা আলী আহম্মেদ গাজী পরের জমি বর্গা চাষ করেন।  এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গাভী পালন করে দুধ বিক্রি করে সংসার চালান।  বাড়িতে নেই কোনো বিদ্যুৎ ও প্রবেশের জন্য ‘নেই’ রাস্তা।  ধার-দেনা আছে অনেক। একটু বৃষ্টি হলেই বাড়িতে পানি জমে যায়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় থাকে না। অন্যদিকে মাবিয়া আক্তার সীমান্তের পরিবারের অবস্থাও সঙ্গীন। দারিদ্র্যের সাথে নিয়ত সংগ্রাম করেই চলে তাদের সংসার। ঢাকার খিলগাঁওয়ে যেখানে থাকেন বাশের সাঁকো পার হয়ে ঢুকতে হয় সেই গলি ঘুপচিতে। আনসার বাহিনী থেকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা পান। পিতা মুদি দোকানী।  

প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মত নির্মম বাস্তব হচ্ছে স্বর্ণজয়ী দুই তরুণীর জীবন। কিন্তু দারিদ্র্য তাদের ছুঁতে পারেনি এতটুকু। এসএ গেমসের তৃতীয় দিন  গুয়াহাটিতে প্রথমবারের মতো বাজে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারোত্তলনে ৬৩ কেজি ওজন ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক জিতে বাংলাদেশের মাবিয়া আক্তার সীমান্ত পদক নেওয়ার সময় জাতীয় সংগীতের মূর্ছনায় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তার এই আনন্দের কান্না ছুঁয়ে যায় আশা-পাশের সবাইকে। পরে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে তা ছড়িয়ে পড়ে। প্রশংসিত হতে থাকে দেশের প্রতি তার এই অগাধ ভালোবাসার দিকটি।  

শিলা, সীমান্তের মতো অনেক মেধাবী তারুণ্যই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। পৃষ্টপোষকতা করতে পারলে এরা যে আরও বড় অনেক কিছু দিতে পারবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এ ব্যাপারে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। যার যেদিকে দক্ষতা, যোগ্যতা আছে সেটির বিকাশ যাতে তারা করতে পারে এ জন্য করণীয় সবকিছু করতে হবে। এভাবেই এগিয়ে যায় একটি সমাজ, দেশ।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।