নারী

কন্যাদের জন্য বাঁচি

তানজিনা পৃথা
তানজিনা পৃথা তানজিনা পৃথা , লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী
প্রকাশিত: ০১:২৫ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিক্রি হয়ে যাওয়া,পরিস্থিতির শিকার অথবা কিঞ্চিৎ ভালোবাসার মোহে মেয়েটি যখন বিছানায় যায় তার নাম হয় ‘বেশ্যা’; যা সমাজের নিচু শ্রেণি, অস্পৃশ্য, গালির উপকরণ। অথচ পুরুষত্বের তাগিদে বন্ধু মহলে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে যে পুরুষেরা প্রতিনিয়ত শুয়ে বেড়াচ্ছে তার নাম কি দিলো সমাজ? আদৌও কি পেরেছে কিংবা দিতে পারবে কি?

দামি কাপড়ের আড়ালে এই কম দামি মানসিকতা পাল্টাবে কবে? একজন নারীর জন্য নিরাপদ চিন্তার ক্ষেত্র কবে তৈরি হবে? জানতে চাই কিন্তু জবাব দেবে কে? কারণ সমাজটাই তো সুবিধাভোগীদের নিজেদের জন্য তৈরি নীতিমালায় পরিচালিত। নারীবাদ মানেই বিরোধিতা নয়; এটাকে মেনে নারীকে সম্মান দিতে শিখলেই নারীবাদ নিয়ে বিতর্ক ম্লান হবে।

প্রতিটি পুরুষের উদ্দেশ্যেই বলছি আপনার কন্যাসন্তানটি ভবিষ্যতে একজন পরিপূর্ণ নারী। অন্য নারীর প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি যদি অসম্মানের হয়; তবে ভেবে দেখুন আপনার ছায়ায় আগলে থাকা পরম আদরের সন্তানকেও একইভাবে হয়তো কেউ অসম্মান করছে আপনার আড়ালে। নিজের সন্তানের জন্য হলেও তো এভাবে ভাবা যায়; তাই নয়কি?

অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী একজন নারীকেও প্রতিনিয়ত সতিত্বের প্রমাণ দিয়ে টিকে থাকতে হয় ঘরে বাইরে। এই যুদ্ধ তার সম্পূর্ণ একার। পরিবারকে যুদ্ধের বাস্তব চিত্র বললে সামাজিক অসম্মানের আশঙ্কায় তার পথ আগলে রাখবে। আর বাইরে কাউকে পাশে পাবে না ‘খারাপ’ তকমা এড়ানোর জন্য। একমাত্র হাতিয়ার আত্মবিশ্বাস তা নিয়েও হবে নানারকম পরীক্ষামূলক গবেষণা। সেটাও তারই দোষ কেন সে কোনো বাধাই মানবে না! প্রতিটি পদক্ষেপের কঠিন পরীক্ষায় পাস তাকে করতেই হবে। এ যেন বীজগণিতের ফর্মুলায় না পড়লে ফলাফল মিলবে না। কি দম বন্ধ একটা পারিপার্শ্বিকতায় প্রতিদিন বেড়ে উঠছে প্রতিটি মন যারা কি না ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অভিভাবক।

কন্যাশিশু দিবসে আমি মন থেকে প্রতিটি কন্যাকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আমার সন্তানকে আমি ছাদখোলা বাসের মতো সংকীর্ণতাহীন মনখোলা পৃথিবী উপহার দিতে চাই। যেখানে তার নিজের সম্মানের জন্য হাহাকার করে অপেক্ষা করতে হবে না; আন্দোলন করতে হবে না আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায়। খুব বেশি কষ্টের নয় এ যাত্রা। আর বলতে চাই একদিন নয়, প্রতিদিনই হোক কন্যা দিবস।

বন্ধু মহলে নিজেকে নারীত্বে সুপ্রতিষ্ঠিত না করে নিজের কন্যাসন্তানের কাছে যোগ্য পিতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন। দেখবেন এই সমাজে আর কোনো মেয়েকে ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করতে হবে না। সম্পর্কের অবহেলায় তিলে তিলে কাউকে কাঁদতে হবে না।

হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে না অধিকার আদায়ের আন্দোলনে। নিজেদের কন্যাসন্তানের জন্যই না হয় একটি নির্মল সমাজ উপহারের চেষ্টা শুরু হোক; যেখানে পরিবারের ছেলে সন্তানটিও বেড়ে উঠবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষায়। রচিত হবে স্বপ্নময় পৃথিবীর নিষ্পাপ আবাসস্থল।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

এইচআর/জিকেএস

অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী একজন নারীকেও প্রতিনিয়ত সতিত্বের প্রমাণ দিয়ে টিকে থাকতে হয় ঘরে বাইরে। এই যুদ্ধ তার সম্পূর্ণ একার। পরিবারকে যুদ্ধের বাস্তব চিত্র বললে সামাজিক অসম্মানের আশঙ্কায় তার পথ আগলে রাখবে। আর বাইরে কাউকে পাশে পাবেনা "খারাপ" তকমা এড়ানোর জন্য। একমাত্র হাতিয়ার আত্মবিশ্বাস তা নিয়েও হবে নানারকম পরীক্ষামূলক গবেষণা।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।