গোদের ওপর বিষফোড়া
আচমকা রাজপথ অবরোধে সৃষ্ট যানজটে নগরবাসী যেভাবে নাকাল হলো তাকে গোদের ওপর বিষফোড়ার যন্ত্রণার সাথে তুলনা করলেও কম বলা হবে। এমনিতেই যানজটে পিষ্ট রাজধানীবাসীর দুর্ভোগের কোনো অন্ত নেই। তারওপর বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ রাজপথ অবরোধ এবং তা যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে তাহলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকে একবার ভাবা যায়? এই অরাজকতা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
গতকাল রোববার এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র কাছে রাখার দাবিতে মিরপুর সড়ক ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক এত দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার কারণে রাজধানীতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে এই অবরোধের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন রাস্তায় বের হওয়া অসংখ্য সাধারণ মানুষ। ব্যস্ততম এই রাজপথ অবরোধের ফলে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী।
যে কারণে সিটি কলেজের ছাত্ররা এই অবরোধ সৃষ্টি করে সেটি হচ্ছে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র কাছে রাখা। গত বছর সিটি কলেজের পরীক্ষার্থীরা পাশের গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু এবার তা পরিবর্তন করে রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নেওয়া হয়েছে। এতেই যেন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে। এই খবর জানার পরই তারা অবরোধ সৃষ্টি করে। যদিও ছাত্ররা বলছে সমস্যা সমাধানে কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে কোনো সমাধান না পাওয়ায় তারা এই অবরোধ সৃষ্টি করে। ছাত্রদের কোনো যৌক্তিক দাবির প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে। তবে এ জন্য রাজপথ অবরোধের মাধ্যমে মানুষজনকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের চরমপন্থা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, যে কোনো উসিলায় আমাদের দেশে কথায় কথায় রাস্তায় নেমে আসার একটি প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু যানজট প্রভাবিত একটি নগরীতে এ ধরনের হঠকারী কর্মকাণ্ডের সমূহ ক্ষতি সম্পর্কে অবরোধকারীরা পূর্বাপর ভাবেন না। রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও অনেক সময় হরতাল, অবরোধ থাকে, কিন্তু তা পূর্বঘোষিত বিধায় মানুষের এক ধরনের প্রস্তুতি থাকে। আচমকা রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিলে মানুষের আগে থেকে জানার কোনো সুযোগ থাকে না। ফলে দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়।
রোববারের অবরোধের ক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা। পুলিশও এ ব্যাপারে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে পারতো। এক্ষেত্রে নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী অবরোধ দমনে পুলিশকে আরো দক্ষ, কৌশলী হতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট মোকাবেলায় কিভাবে কাজ করা যায় সেটি নিয়েও ভাবতে হবে সংশ্লিষ্টদের। আমরা সবার কাছ থেকে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।
এইচআর/এসএম