পাকিস্তানের ঔদ্ধত্য
সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পর থেকেই পাকিস্তান অদ্যাবধি বাংলাদেশকে যে মনে-প্রাণে মেনে নিতে পারেনি তার প্রমাণ নানাভাবে পাওয়া গেছে। কিন্তু ইদানীং এই অপতৎপরতা যেন আরো বেড়ে গেছে। জঙ্গি তৎপরতায় মদদ দেয়াসহ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার নানা চক্রান্তে লিপ্ত দেশটি। সরকারের হাতে এ ধরনের প্রমাণ থাকার প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি নাগরিককেও আটক করা হয়।
ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার জোরালো অভিযোগ রয়েছে। গোয়েন্দারা সেসব তথ্যপ্রমাণ তুলেও ধরেছে। এরই প্রেক্ষাপটে গত বছর দুজন কর্মকর্তাকে পাকিস্তান ফিরিয়েও নিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান এসব অভিযোগের কোনো স্পষ্ট জবাব দিতে না পারলেও তারা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। তাদের কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পরপরই কোনো কারণ ছাড়াই পাকিস্তানে থাকা বাংলাদেশের কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে ফিরিয়ে আনতে বলে পাকিস্তান। যা স্পষ্টতই কূটনীতিক রীতিনীতির লঙ্ঘন। এরপরও বাংলাদেশ তাকে সেখান থেকে অন্যত্র বদলি করে।
সর্বশেষ গত সোমবার সকালে গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় সন্দেহজনক ঘোরাফেরার অভিযোগে পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মী আবরার খানকে পুলিশ আটক করে। সাধারণ নম্বর প্লেট লাগানো একটি মোটরসাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তিনি, কূটনীতিক রীতি অনুযায়ী যা তিনি করতে পারেন না। পরে তাকে পাকিস্তানি কূটনীতিকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার জের ধরে সোমবার বিকেল থেকে পাকিস্তানে থাকা বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত জাহাঙ্গীর হোসেনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাকে বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কাউকে আটক করা অন্যদিকে এরই জের ধরে নিরপরাধ কাউকে আটক অত্যন্ত আপত্তিজনক। বেশ কিছুদিন ধরেই পাকিস্তান এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে। উল্টো তারা বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ আনছে। যেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
একাত্তরের গণহত্যার বিষয়ে বাংলাদেশি কিছু রাজনীতিবিদদের দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টিও পাকিস্তান দূতাবাসের পক্ষ থেকেই উস্কে দেওয়া হয়েছে এমন খবর বেরিয়েছে গণমাধ্যমে। একাত্তরের গণহত্যার অপরাধকে অস্বীকার বা কমিয়ে দেখানোই এর উদ্দেশ্য। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রেও তারা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। পাকিস্তানের এহেন কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের উচিত যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।
চলছে ভাষা আন্দোলনের মাস মহান ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের মাতৃভাষাকেও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। তাই কোনো নতজানু নীতি নয়- কেননা একুশ মানে মাথা নত না করা।
এইচআর/আরআইপি