অপার সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প ও কিছু কথা

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ১০:২১ এএম, ১১ জুলাই ২০২২

সরকারের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৪৭ থেকে ৫২ টাকা, খাসির চামড়া গতবারের চেয়ে তিন টাকা বাড়িয়ে ১৮ থেকে ২১ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি। দেখা যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ৫০০ টাকায়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এক হাজার টাকায় চামড়া বিক্রির সংবাদও পাওয়া গেছে।

গত পাঁচ বছরে চামড়ার দাম কমেছে অর্ধেক। যদিও এ বছর চামড়ার দাম কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়েছে কিন্তু নির্ধারিত মূল্যে ক্রেতারা চামড়া ক্রয় করতে দেখা যায়নি। ১০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যেই চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। ক্রেতাদের কাছে শুনতে হয় চামড়া কিনে নাকি তাদের লাভ হয়না বরং ক্ষতি হয়।

অপর দিকে চামড়া এবং চামড়াজাত সব পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কাঁচা চামড়ার দাম কমছে কেন, সেই উত্তর মিলছে না কোথাও।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে তৈরি পণ্যের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপ আমেরিকায় যাচ্ছে বাংলাদেশের জুতা ও চামড়াজাত পণ্য। এতে সামান্যতম সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশের জন্য চামড়া শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত, যা সুষ্ঠু পরিচালনা ও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও এ খাতের বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে না। দেখা যায় গত কয়েক বছর ধরে ঈদুল আজহায় চামড়ার তেমন কোনো মূল্যই পাওয়া যায়না।

আমরা মনে করি এই অপার সম্ভাবনাময় শিল্পকে ধ্বংসের জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। এমনটি না হলে দু’বছর আগে চামড়ার মূল্য কমিয়ে এটিকে মাটিতে পুঁতে ফেলার বা নষ্ট করার জন্য উৎসাহ জোগানোর সংবাদ পাওয়া যেত না।

বাংলাদেশে সারা বছর যে সংখ্যক পশু জবাই হয়, তার অর্ধেক হয় এই কোরবানির মৌসুমে। কোরবানি যারা দেন, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন ট্যানারিতে। এ সময়ই সবচেয়ে বেশি চামড়া সংগ্রহ করেন ট্যানারি মালিকরা। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগে চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য ন্যূনতম দাম ঠিক করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ট্যানারি মালিকদের দাবিতে গত বেশ কয়েক বছর ধরে ওই দাম কমতির দিকে।

এবারও পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার।

বাস্তবে কি সরকার কতৃক নির্ধারিত এ মূল্য কেউ পেয়েছেন? আমরা মনে হয় তা কেউ পায়নি। ব্যক্তিগতভাবে যতজনকে জিজ্ঞেস করেছি তারা সবাই এ বিষয়ে একমত যে চামড়ার সঠিক মূল্য পাওয়া যায়নি আর ছাগল-খাসির চামড়া বিনামূল্যে দিতে হয়েছে।

লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১১০টি রফতানিমুখী কারখানায় চামড়ার পাদুকা তৈরি হয়। এর মধ্যে এপেক্স, এফবি, পিকার্ড বাংলাদেশ, জেনিস, আকিজ, আরএমএম, বেঙ্গল এবং বে’র রয়েছে নিজস্ব ট্যানারি ও চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। এর বাইরে শুধু চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে এমন কারখানার সংখ্যা ২০৭টি।

দেশ-বিদেশে আমাদের চামড়াজাত পণ্যের বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও একটি মহল এ শিল্পকে ধ্বংসের জন্য উঠে পরে লেগেছে। এক ধরনের অসাধু ব্যক্তিদের কারসাজিতে দাম না থাকায় গত বছরের আগের বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঁচা চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলার দৃশ্য দেখেছি। তবে এবছর এমনটি করার খবর এখনও পাইনি। দেশের চামড়া শিল্পে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাময় শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব।

চমড়ার অর্থ গরীব-দুঃস্থদের প্রাপ্য। গরীবদের পেটে যারা লাথি মারে এবং তাদের হক নষ্ট করে তারা যাই হোক না কেন, তারা কখনই আপনার আমার শুভাকাঙ্খি হতে পারে না।

আমরা চাই এই সম্ভাবনাময় শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করার প্রয়োজন সে বিষয়ে কতৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থ গ্রহণ করা এবং প্রতিবছর চামড়া নিয়ে যারা সমস্যা সৃষ্টি করে তাদেরকে চিহিৃত করে বিচারের আওতায় আনা। এছাড়া ব্যবসায়ীরা সরকার কতৃক নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় করছেন কিনা এ বিষয়েও নজরদারি করা।

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।