নেতা আপনি আমাদের ক্ষমা করে দেবেন


প্রকাশিত: ০৫:০৯ এএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

আমার শ্রদ্ধাভাজন সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার রাতে তার অবস্থা ভীষণ সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

আজ ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ রোববার সকালে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল মজিদ জানান, আলতাফ মাহমুদ মারা গেছেন। প্রিয় নেতার পারিবার থেকেও এই ভয়াবহ দু:সংবাদটি নিশ্চিত করা হয়েছে।

গত ১৪ জানুয়ারি স্পাইনাল কডের সমস্যা, মাথার পেছনে ও ঘাড়ে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি আলতাফ মাহমুদ। গত বৃহস্পতিবার তার অপারেশন হয়।

প্রিয় নেতার মৃত্যুতে গোটা সাংবাদিক সমাজের এক অপূরনীয় ক্ষতি হল। যা আর কোনভাবেই পূরণ হওয়া নয়। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি হারালাম একজন অভিভাবক।

আমি যখন হাসপাতালে অসুস্থ নেতাকে দেখতে যাই; তখনও আমার প্রতি নেতার যে মমতা, যে স্নেহ-তা ভুলার নয়। হাসপাতালে যাওয়ার পর বারবার ভাবীকে বলেছেন, বাদশা এসেছে ওকে বিস্কিট দাও। ওকে আপেল দাও। আমি বললাম লিডার থাক ওসব লাগবে না। এরপরও নেতা ভবীকে বলেই যাচ্ছেন। অগত্যা ভাবী আমাকে আপেল কেটে দিল, বিস্কিট দিল। আমি না করলে, ভাবী বললো- না খেলে আপনার ভাই রাগ করবেন। আমি নেতার কাছে বসে থাকা অবস্থায় জলিল ভাইয়ের (বিএফইউজে’র সাবেক মহাসচিব) মেয়ে আসলো শ্রদ্ধাভাজন নেতাকে দেখতে। আমাদের স্নেহের মা’মনিকে সাথে নিয়েই একটা বিস্কিট ও এক টুকরো আপেল খেলাম।

নেতার কাছে জানতে চাইলাম কারা দেখতে এসেছে, কারা আসেনি। একজনের নাম বলতেই আলতাফ ভাই চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। আমি নেতার চোখের জল মুছিয়ে দিলাম। নেতা বললো- বাদ দাও ওর কথা।

স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম- নেতার চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে সাংবাদিক সংগঠনগুলো যাতে এগিয়ে আসে। বলেছিলাম সরকার কেন এখনও তার চিকিৎসার ব্যয়ভার যোগাচ্ছে না। স্ট্যাটাসের পরদিন জানতে পেরেছি, নেতার চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দশ লাখ টাকা দিয়েছেন।

ডাক্তার বলেছিল চিকিৎসার জন্য আলতাফ ভাইকে বিদেশ নিতে। চেন্নাইতে নিতে হলে প্রয়োজন ছিল ৫০ লাখ টাকার। আলতাফ ভাইয়ের পরিবার থেকে জানতে পেরেছি, টাকার অভাবে নেতাকে বাইরে নেয়া সম্ভব হয়নি। খুব কষ্ট পেয়েছি- এমন কথা শুনে।

যে নেতা সারাটি জীবন সাংবাদিক সমাজের জন্য কাজ করেছেন; যে নেতা বিএফইউজে’র সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন-সেই নেতাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে অর্থের অভাব! নেতা চলে গেলেন- রেখে গেলেন গোটা সাংবাদিক সমাজের জন্য একরাশ লজ্জার পাহাড়।

আর সহস্র কোটি টাকা দিলেও গোটা সাংবাদিক সমাজ আর একটি আলতাফ মাহমুদ পাবে না।

শ্রদ্ধাভাজন নেতা আপনাকে অভিবাদন। শেষ অশ্রুতে জানাই আপনাকে চিরবিদায়। আপনি আমার হৃদয়ে চিরদির থাকবেন শ্রদ্ধার আসনে। আপনার রূহের মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ নেতাকে তুমি বেহেস্ত নসিব করো। আমিন

সাবেক সভাপতি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।