যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু...


প্রকাশিত: ০৪:২১ এএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

বেঁচে থাকার জন্য বায়ুর চেয়ে প্রয়োজনীয় আর কিছু নেই। কথায় বলে ‘নিশ্বাসের বিশ্বাস নেই।’ অর্থাৎ দম ফুরিয়ে গেলেই সব শেষ। কিন্তু সেই বায়ুই যদি দোষণীয় হয়, প্রাণ বাঁচানোর পরিবর্তে তা যদি প্রাণহরণের কারণ হয় এরচেয়ে ভয়ানক আর কী হতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে আমরা প্রাণ প্রবাহ সচল রাখি সেই নিশ্বাসের বাতাসেই ভয়াবহ দূষণ। এই দূষণ এমনই পর্যায়ের যে তা মৃত্যুর কারণ হচ্ছে। তাই বলা যায় আমরা অনেকটা জেনে-শুনেই বাধ্য হয়ে বিষপান করছি। তাই এই আত্মঘাতী প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বায়ুদূষণ বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বজুড়ে ধূমপান, সড়ক দুর্ঘটনা ও ডায়াবেটিস- এই তিন কারণে যত মানুষ মৃত্যুবরণ করে বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় তার চেয়ে বেশি। কী ভয়ানক কথা! শুধু তাই নয় ২০১২ সালে এই রোগে বিশ্বের যে পাঁচটি দেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ মারা গেছে, বাংলাদেশ তার একটি। আরও উদ্বেগজনক খবর হচ্ছে, রাজধানী ঢাকাসহ এ দেশে আটটি শহরের বায়ু অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। ফলে এসব শহরের কয়েক কোটি মানুষ নিজেদের অজান্তে প্রাণঘাতী স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে অনেক দিন ধরে। বায়ুদূষণের কারণে ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) বা শ্বাসপ্রণালির স্থায়ী রোগে কত মানুষ ভুগছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। হাঁপানির পেছনেও বায়ুদূষণ ব্যাপকভাবে দায়ী।

দুঃখজনক হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ বায়ুদূষণ সম্পর্কে অসচেতন এবং উদাসীন। বিশেষ করে কর্তৃপক্ষীয় দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই দায়িত্বজ্ঞানহীন। নইলে এতো বড় ঝুঁকির মধ্যে থেকেও কেন প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থা নেই। শুধু তাই নয় প্রতিকারহীনভাবে এই বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে। কলকারখানার কালো ধোঁয়া, ফিটনেসবিহীন গাড়ি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া, রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়িসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ  কাজের সময় ধুলো উড়ছে। সিমেন্টসহ এই জাতীয় কারখানায়ও বস্তুকণা যাতে বাতাসে ছড়াতে না পারে সে রকম প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়াই উৎপাদন হচ্ছে। মাটি, বালি ভর্তি ট্রাক ঢুকছে শহরে কোনো আচ্ছাদন ব্যবহার না করেই। ফলে গোটা শহর-ধুলি-বালিময় হয়ে যাচ্ছে। পানি ছিটানোরও কোনো ব্যবস্থা নেই। নাকে-মুখে এসব ধুলো-বালি ঢুকে অনেকেই হাঁপানিসহ নানা রকম শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তা মৃত্যুর কারণও হচ্ছে।    

বায়ুদূষণ রোধে আমাদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। যারা বায়ু দূষণের জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের অপরাধ এতোই বেশি যে কোনো দয়া, ক্ষমা বা অনুকম্পা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কবির ভাষায়-‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,/ তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।