এ দায় কার?


প্রকাশিত: ০৪:৩৬ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়ক প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লো। নকশায় এলো পরিবর্তন। সেই সঙ্গে বাড়লো প্রকল্প ব্যয়ও। এখন এটি শেষ হবে ২০১৭ সালে। প্রায় ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ উড়াল সড়কের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রতিশ্রুতি ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু প্রথম দফায় ব্যর্থ হয়ে মেয়াদ বাড়ানো হয় গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। ফলে দ্বিতীয় দফায় এর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রথম দফায় খরচ ধরা হয়েছিল ৩৪৪ কোটি টাকা। প্রথম দফায় এর ব্যয় বাড়িয়ে ৭৭২ কোটি টাকা করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার একনেক সভায় খরচ আরো ৪৪৬ কোটি টাকা বা ৫৮ শতাংশ বাড়িয়ে এক হাজার ২১৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করে অনুমোদন দেওয়া হয়।

দেখা যাচ্ছে, সময়মত বাস্তবায়ন হলে যে উড়াল সড়ক নির্মাণ করতে খরচ হতো ৩৪৪ কোটি টাকা এখন তা দাঁড়িয়েছে  এক হাজার ২১৮ কোটি টাকায়। প্রায় তিনগুণ ব্যয় বেড়েছে শুধু সময়মত নির্মাণ কাজ শেষ করতে না পারায়। এই বিপুল অংকের টাকা খরচ হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ঘাড়ে গিয়েই পড়বে।

অত্যন্ত দুঃখজনক প্রবণতা হচ্ছে, আমাদের দেশে কোনো নির্মাণ কাজই সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হয় না। এ জন্য ব্যয় বেড়ে যায়। বাড়ে দুর্ভোগও। মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়ক হচ্ছে রাজধানীর একটি যানজট প্রবণ এলাকায়। সেখানে যদি ছয় বছর ধরে নির্মাণ কাজ চলতে থাকে তাহলে জনদুর্ভোগ কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটি ভাবা যায়। এতদিনেই নাভিশ্বাস উঠেছে। এখন মেয়াদ বাড়ানোর পরও যে তা সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হবে এরই বা কি গ্যারান্টি আছে।

প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর জন্য নানা অজুহাত দেখানো হচ্ছে। বাঙালির নাকি তিনটা হাত। ডানহাত, বামহাত আর অজুহাত। যে কোনো কাজে বিশেষ করে সরকারি কাজের ক্ষেত্রে অজুহাতটাই বেশি দেখা যায়। প্রকল্প যখন হাতে নেওয়া হয় তখন অনেক ধাপ পার হয়ে তা বাস্তবায়ন পর্যায়ে আসে। তখন কেন সবকিছু মাথায় রাখা হয় না। বলা হচ্ছে, আগে সেতুতে ভূমিকম্প সহনীয় কোনো প্রযুক্তি ছিল না, যেটি নতুন করে সংযোজন করা হচ্ছে। ঢাকা একটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। এটি বিশেষজ্ঞরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন। তাহলে শুরুতেই কেন বিষয়টি আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী নকশা প্রণয়ন করা হলো না? এছাড়া রেললাইন পার হয়ে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত গিয়ে উড়াল সড়ক শেষ করার দাবি তো প্রথম থেকেই ছিল। তখন কেন এটি আমলে নেওয়া হল না। প্রধানমন্ত্রী না বলা পর্যন্ত কি কোনো কিছুই আমলযোগ্য হবে না। এখন যদি হতে পারে তখন কেন হতে পারলো না? এটা নিছকই অদূরদর্শিতা, দায়িত্বে অবহেলাও।  

বলা হচ্ছে, বিদ্যুতের হাইভোল্টেজ লাইন, গ্যাস, পানি, পয়োনিষ্কাশন, বিটিসিএলের কেবলসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থার বড় বড় পাইপলাইনের কারণে এসব পরিসেবা অক্ষুণ্ন রেখে প্রতিটি পাইল ও ফাউন্ডেশনের নকশা বদলাতে হচ্ছে। কথা হচ্ছে লাইনগুলো তো আগে থেকেই ছিল। তাহলে তখন বিষয়টি মাথায় আসেনি কেন?

এ কথা সত্যি একটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই বলে পদে পদে অদূরদশির্তা আর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়বে, সময়মত বাস্তবায়ন হবে না, ফলে অর্থ ব্যয় বেড়ে তিনগুণ হবে একটি স্বল্পোন্নত দেশের জন্য এটি অত্যন্ত অবিচেনাপ্রসূত কাজ। কথায় কথায় আমাদের দেশে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সঙ্গত কারণে তা বাড়তেই পারে। কিন্তু এটি যখন ‘রোগে’ পরিণত হয় তখনই মুশকিল। কেবল মেয়াদ বাড়িয়ে অর্থবরাদ্দ বৃদ্ধি করে দায়িত্ব সারলে হবে না, কোথাও কোনো গাফিলতি থাকলে তার দায়-দায়িত্বও নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। আমরা চাই যথাসময়ে উড়াল সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ  হোক।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।