আল আকসা মসজিদ ও ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রাম

সম্পাদকীয় ডেস্ক
সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৪১ এএম, ২৯ এপ্রিল ২০২২

খন্দকার মো. মাহফুজুল হক

গত ১৫ ও ১৭ এপ্রিল পবিত্র আল আকসা মসজিদে রোজা পালনরত ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপর যায়নবাদী ইসরাইলী সেনাদের নৃশংস হামলা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। ওই হামলার সময় ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে বহু ফিলিস্তিনি মুসল্লি আহত হন এবং চার শতাধিক রোজাদার ফিলিস্তিনিকে ইহুদিবাদী সেনারা ধরে নিয়ে যায়।

এছাড়া ১৫ এপ্রিলের হামলার সময় ইসরাইলি সেনারা পবিত্র আল আকসা মসজিদের ভিতর ঢুকে ফিলিস্তিনি মুসল্লিদেরকে লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুড়ে এবং মুসলমানদের প্রথম কেবলা এই পবিত্র মসজিদটির অবমাননা করে। এই নির্মম ও ন্যক্কারজনক ঘটনা বিশ্বের তাবত মুসলমানের মনকে আহত করেছে। বাংলাদেশ ও ইরানসহ বিশ্বের অনেক দেশ এই ঘটনায় যায়নবাদী ইসরাইলের নিন্দা করে এর প্রতিকারের জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি জানিয়েছে।

এই রমজান মাসে ইসরাইলের বর্ণবাদী সরকার যখনফিলিস্তিনে এই নৃশংসতা চালালো তখন সারা বিশ্বের দৃষ্টি মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে। সম্ভবত এই দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করে সম্প্রতি ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) স্থায়ী সদস্য দেশগুলোর নির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইসরাইলের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চলমান নতুন কোনো সংকট ও সংঘাতের কারণে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ফিলিস্তিনের এই দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা সঠিক হবে না।

দুই দশকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হচ্ছে ফিলিস্তিনের জনগণ নিদারুন কষ্ট ও বেদনাদায়ক জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন। তারা নিজ দেশেই পরাধীন, উদ্বাস্তু। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। এর উপর ক্ষণে ক্ষণে প্রায়ই বর্ণবাদী সেনাদের নিষ্ঠুরতম হামলা ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ এর মতো।

১৯৪৮ সালে বৃটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনিদের ভূমি জবরদখলের মাধ্যমে ইসরাইল রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের পর থেকেই বর্ণবাদী ইহুদিদের হাতে তাদের মার খাওয়ার ইতিহাস শুরু, যা চলছে অদ্যবধি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ঝরছে রক্ত। আকাশ ছুঁয়েছে লাশের পাহাড়। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা দমেনি। মাতৃভূমি এবং ধর্মীয় পবিত্র স্থান দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে তারা নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে দশকের পর দশক ধরে।

ফিলিস্তিন অঞ্চল ছিল তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে। আরব মুসলমানেরা ছিল সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। উনিশ শতকের শেষ দিকে বিশ্বে উগ্র ইহুদীগোষ্ঠি কর্তৃক যায়নবাদী আন্দোলন গড়ে ওঠে। ইহুদিদের চোখ পড়ে আরব ভূখণ্ডের দিকে। পশ্চিমা শক্তিগুলোর ইশারায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা ইহুদিরা ফিলিস্তিনে এসে বাসা বাঁধতে থাকে। আরব ভূখণ্ড দখল করে ‘আবাসভূমি’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে তারা সেখানে নিজেদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়াতে থাকে।

বিশ শতকের শুরুর দিকে অটোমান সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে ইউরোপীয় শক্তিগুলো ফিলিস্তিনে তাদের প্রভাব বাড়ায়। ধুর্ত ব্রিটিশরা তখন একদিকে ক্ষমতায় বসানোর প্রলোভন দেখিয়ে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরব দলপতিদেরকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নামাতে সক্ষম হয়। অপর দিকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইহুদিদেরও গোপনে আশ্বাস দেয়।

১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার বেলফোর ঘোষণায় ফিলিস্তিনে ‘ইহুদিদের একটি জাতীয় বাসস্থান’ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে সরাসরি সমর্থন জানায়। অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণ হাতে পায় ব্রিটিশরা। তখন বৃটিশদের সহায়তা এবং আশ্বাসে ফিলিস্তিনে দলে দলে অভিবাসী ইহুদি আসতে থাকে। স্থানীয় আরবদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সেখানে বহিরাগত ইহুদিরা ক্রমেই বসতি গড়ে তোলে। এরপর ১৯২০,২১,২৮,২৯ ও ৩৬ সালে আরবদের সঙ্গে ইহুদিদের সংঘর্ষ হয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

১৯৩৩ সালে অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে নেওয়ার পর ইহুদিরা সেখানে নিপীড়নের নিশানায় পরিণত হয়। ফলে জার্মানি থেকে দলে দলে ইহুদিরা পালিয়ে ফিলিস্তিনে আসতে থাকে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের হামবড়া ভাব তখন আরও বেড়ে যায়। ব্রিটিশ শাসন ও ইহুদি দখলদারির বিরুদ্ধে ১৯৩৬-১৯৩৯ সালে ফুঁসে ওঠে স্থানীয় আরবরা। সূচনা হয় বিদ্রোহের। ব্রিটিশরা ওই বিদ্রোহ নির্মমভাবে দমন করে। নিহত হয় পাঁচ হাজারের বেশি আরব মুসলমান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিলিস্তিন নিয়ে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে বৈরিতা বেড়ে যায়। ওই সময় ফিলিস্তিনের কর্তৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটিশ সরকার। একই সঙ্গে এই ভূখণ্ডের ভাগ্য নির্ধারণে সদ্যগঠিত জাতিসংঘকে অনুরোধ জানানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনিকে দ্বিখণ্ডিত করে পৃথক ইহুদি ও আরব রাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দেয়। আরবদের বিরোধিতা সত্ত্বেও পরিকল্পনাটি এগিয়ে যায়। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নীলনকশায় ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়।

১৯৪৮ সালের ১৪ মে ব্রিটিশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনের উপর থেকে নিজের কর্তৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। ওই দিনই বহিরাগত ইহুদি নেতারা ইসরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। পরদিন আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ বেধে যায়। পশ্চিমা শক্তি বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ইহুদিদের সহযোগীর ভূমিকা পালন করায় যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়। এই সুযোগে আদিবাসী ফিলিস্তিনীদের জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রের একটা বড় অংশ দখল করে নেয় ইসরাইল। পরিণতিতে সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী হয়।

পশ্চিমা মিত্র বিশেষ করে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও আশকারায় দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত বর্ণবাদী ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। ষাটের দশকে তারা বনে যায় পারমাণবিক বোমার মালিক। পাশাপাশি দখলদারি ও বর্বরতার ব্যারোমিটারও বাড়তে থাকে।

মধ্যপ্রাচ্যের এই বিষফোঁড়ার একগুঁয়েমি ও নৃশংসতায় রক্তগঙ্গা বইতে থাকে ফিলিস্তিনে। এমন পরিস্থিতিতে আরব-ইসরায়েলের মধ্যে ১৯৫৬,১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে আরও তিনটি যুদ্ধ হয়। কিন্তু ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতি পশ্চিমা শক্তিগুলোর সর্বাত্মক সমর্থন ও সহায়তা অপর দিকে আরব দেশগুলোর ক্ষমতা লিপ্সু সরকারগুলোর নতজানু মানসিকতার কারণে ওই সব যুদ্ধেও ফিলিস্তিনের ভাগ্যে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি।

মুক্তির সংগ্রামের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৬৪ সালেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও)। ১৯৬৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইয়াসির আরাফাত ছিলেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান। তিনি ফিলিস্তিনের শীর্ষস্থানীয় সেক্যুলার রাজনৈতিক দল ফাতাহ’রও নেতা ছিলেন। পিএলও’র নানা ব্যর্থতা এবং আপোসকামী নীতির প্রতিক্রিয়ায় মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের নিয়ে ১৯৮৭ সালে গঠিত হয় ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন “হামাস”। সময়ের পরিক্রমায় এই হামাস এখন যায়নবাদী ইহুদি সরকারের জন্য বড় আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে।

হামাসের নেতৃত্ব মাতৃভূমি দখলমুক্ত করা এবং বাইতুল মোকাদ্দাসের (জেরুজালেম) পবিত্র স্থানগুলোর নিয়ন্ত্রণ বর্ণবাদী ইহুদিদের কবল থেকে মুক্ত করার প্রশ্নে যে কোন আপোস বা লেনদেনের ঘোর বিরোধী। হামাস নেতাদের বক্তব্য হলো আপোস করে ফিলিস্তিনের সেক্যুলার নেতৃত্ব ইসরাইলের কাছ থেকে কোন ছাড় আদায় করতে পারেনি, ববং তাদের আপোসকামিতার সুযোগ নিয়ে বর্ণবাদী ইহুদি নেতারা ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড এবং পবিত্র শহর বাইতুল মোকাদ্দাস মুক্ত হতে পারে একমাত্র সংগ্রামের মাধ্যমে।

তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তির আপোস প্রক্রিয়ার উপর হামাসসহ ফিলিস্তিনের সংগ্রামী দলগুলো আস্থা রাখতে পারছে না। তারা মনে করেন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদেই ফিলিস্তিনের ভূমি জবর দখল করে সেখানে ইসরাইল নামক ইহুদি রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভবপর হয়েছে। আর এই দুই পশ্চিমা শক্তির সর্বাত্মক সমর্থন ও সহায়তায় এখনো পর্যন্ত ইসরাইল সরকার ফিলিস্তিনে জবরদখল বজায় রাখতে এবং সেখানে অব্যাহতভাবে হত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে পার পেয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ইসরাইলকে ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সামরিক সাহায্য প্রদান করে। তাছাড়া, ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন নিঃশর্ত এবং সীমাহীন। প্রতি বারই ইসরাইলের মানবতা বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ,ইউনেস্কোসহ সকল আন্তর্জাতিক উদ্যোগে যু্ক্তরাষ্ট্র প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমন কি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইসরাইলের অমানবিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে উত্থাপিত প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বারই ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা বানচাল করে দেয়।

পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, এ পর্যন্ত অন্তত চল্লিশ বার যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষে তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী নেতারা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের মত কোন কট্টর ইসরাইল সমর্থক দেশের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার আশা অলীক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়।

ফিলিস্তিন সঙ্কটের বিষয়ে মুসলিম বিশ্বের মনোযোগের একমাত্র কারণএটি নয় যে মুসলমানদের একটি ভূখণ্ড জবরদখলের কবলে পড়েছে। এর পিছনে রয়েছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর ধর্মীয় অনুভুতির বিষয়। ফিলিস্তিনের একটি পবিত্র স্থানের নাম বাইতুল মোকাদ্দাস। এখানেই রয়েছে পবিত্র মসজিদুল আকসা। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যে তিনটি মসজিদের উদ্দেশে সফর করাকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন,এর অন্যতম হচ্ছে আল আকসা মসজিদ।

ইসলামের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। হজরত ইবরাহিম (আঃ) কাবা ঘর পুনর্নির্মাণের ৪০ বছর পর,তাঁর পুত্র হজরত ইসহাক (আঃ) এর সন্তান হজরত ইয়াকুব (আঃ) ফিলিস্তিনের বাইতুল মোকাদ্দাস (জেরুজালেম) নামক স্থানে আল আকসা মসজিদটি নির্মাণ করেন। এরপর হজরত সুলাইমান (আঃ) তা পুনর্নির্মাণ করেন। অতএব, মসজিদ আল-আকসা এবং তার আশপাশের এলাকা বহু নবীর স্মৃতিবিজড়িত। এ মসজিদকে কেন্দ্র করে অসংখ্য নবী-রাসুলের দাওয়াতি মিশন পরিচালিত হয়েছে। এখানে রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসুলের মাজার। তাই এ পবিত্র নগরের প্রতি ভালোবাসা প্রত্যেক মুসলমানে হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত।

মহানবী (সাঃ)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকেই মুসলমানদের কাছে বাইতুল মোকাদ্দাস পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য হতে থাকে। কোরআন শরিফেও বায়তুল মোকাদ্দাসকে পবিত্র ভূমি উল্লেখ করে বলা হয়েছে,(মুসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল) হে আমার সম্প্রদায়! এই পূণ্য ভূমিতে প্রবেশ করো যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন, আর পিছনের দিকে ফিরে যেওনা,তাহলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ২১)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মিরাজের নৈশভ্রমণের প্রথম পর্ব সংঘটিত হয়েছিল মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্ব ছিল মসজিদুল আকসা থেকে ঊর্ধ্বলোক। মিরাজে এ মসজিদেই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সমস্ত নবী-রাসুলের ইমামতি করেছিলেন।

পবিত্র কোরআনে এ ভূখণ্ডের পবিত্রতা বা বিশেষ মর্যাদার উল্লেখ করে মেরাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি,যিনি তাঁর বান্দাকে এক রজনীতে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় পরিভ্রমণ করিয়েছিলেন,যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাঁকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য, তিনিই সর্বশ্রোতা,সর্বদ্রষ্টা।’ (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ১

বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মাদ (দঃ) ওহি লাভ ও নবুওয়ত প্রকাশের সময় আল আকসা মসজিদ ছিল মুসলমানদের কিবলা। নবীজি (সাঃ) মদিনায় হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এই কিবলা পরিবর্তন হয়ে ‘কাবা’ শরীফের দিকে কিবলা সাব্যস্ত হয়। মদিনা শরিফে এখনো মসজিদুল কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদের অস্তিত্ব রয়েছে।

মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতির সাথে জড়িয়ে থাকা এই পবিত্র স্থানটি ফিলিস্তিন জবরদখলের পর থেকে বর্ণবাদী ইহুদীদের হাতে পড়েছে। এটাও মুসলিম বিশ্বের একটি কষ্টের জায়গা। ফিলিস্তিনের মুসলমানদেরকে ইসরাইলি জবরদখল থেকে মুক্ত করা এবং আল আকসা মসজিদসহ বায়তুল মোকাদ্দাসের সকল পবিত্র স্থানগুলো উদ্ধারের উদ্দেশ্যে ইরানের পক্ষ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়। ইরান মুসলিম বিশ্বে জনমত তৈরির জন্য রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে “বিশ্ব কুদস দিবস” হিসেবে পালনের ডাক দিয়েছে।

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর দেশটির আধ্যাত্মিক নেতা ইমাম রুহুল্লাহ মুসাভী খোমেইনী (রঃ) এই দিনটি উদযাপনের জন্য তার দেশের সরকারকে নির্দেশ দেন এবং বিশ্ব জুড়ে তা পালনের আহ্বান জানান। সেই থেকে জুমাতুল বিদা বা পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও কিছু সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এই দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পবিত্র আল আকসা বা কুদস শরীফ উদ্ধার ও ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামকে সমূলে বিনাশ করার জন্য ইসরাইলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ষড়যন্ত্রের নতুন খেলায় মেতে উঠেছে। বর্ণবাদী ইহুদিদের বন্ধু কয়েকটি আরব রাষ্ট্রও দৃশ্যত এর সাথে যোগ দিয়েছে। তা

ই আজ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং এ নতুন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে যে বর্ণবাদী ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের কবল থেকে কুদস আল শরিফের মুক্তি এবং স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির একমাত্র পথ।

লেখক: আইআরবি, বাংলা বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক।

এইচআর/জিকেএস

আজ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং এ নতুন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে যে বর্ণবাদী ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের কবল থেকে কুদস আল শরিফের মুক্তি এবং স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির একমাত্র পথ।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।