অসম্মানের মূল কারণ কি নিজেরাই নন!


প্রকাশিত: ০৯:১৮ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

শিক্ষকদের  অপমানিত হতে দেখলে খুব খারাপ লাগে। কারণ শিক্ষকরাই জাতি গঠনের কারিগর। তাদেরকে বাদ দিয়ে সত্যিকার অর্থেই উন্নত এবং সমৃদ্ধ জাতি গঠন করা অসম্ভব। কিন্তু কিছুই করার থাকে না বা কষ্ট অনেকাংশে প্রশমিত হয়ে যায় যখন দেখি বা শুনি এক শ্রেণির শিক্ষক নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ করেন। আজকে শিক্ষকদের অসম্মানের মূল কারণ কি শিক্ষকরা নিজেরাই নন? এই আত্মজিজ্ঞাসা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

অত্যন্ত ব্যথিত হই যখন দেখি দলকানা এক শ্রেণির শিক্ষক ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশকে অপব্যবহার করে দলীয় লেজুড়ভিত্তিতে জড়িয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনীতি করার নামে পরিবেশকে করেন কলুষিত। দলীয় কিংবা গ্রুপের ভোট বাড়ানোর জন্যে প্রকৃত মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে অপদার্থ, অথর্ব, অদক্ষ এবং অপেক্ষাকৃত মেধাহীনদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। শিক্ষক নিয়োগের মাপকাঠি দলীয় লবিং এবং রেজাল্ট। আবার গত অনেক বছর ধরে শুধু লবিংয়ের মাধ্যমেই শিক্ষক নিয়োগের দৃষ্টান্ত অনেক। এসব শিক্ষকরা ক্লাসে ঠিকমতো পড়াতে পারেন না। অনেক শিক্ষার্থী তাদের ক্লাস করতে অনীহা প্রকাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য বিষয়টি টের পেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করা বাধ্যতামূলক করে দিলেন। নম্বর বসালেন ক্লাসের উপর।

এই অপেক্ষাকৃত অযোগ্য শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলেন অনেক শিক্ষার্থী। এই শিক্ষকদের অনেকেই আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। আবার অনেককে দেখি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েই বেশি এ্যাকটিভ। এরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় বিদেশ গিয়ে আর ফেরত আসেন না। গতকালও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন ৬০ জন শিক্ষকের নাম প্রকাশ করেছে যারা গবেষণা ও বিদেশে পড়ার নাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৪ কােটি টাকা আত্নসাৎ করেছেন। এই শিক্ষকদের কারণেই ডাকসুসহ ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন হয় না। এতে দেশ মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সর্বজনীন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। এর জবাবও শিক্ষকদেরই দিতে হবে।

শুধু তাই নয় ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও শিক্ষকদের আচরণ খুব বেশি প্রশংসনীয় নয়। শিক্ষকরা ছাত্রদের মধ্যে বিভক্তি করে দেন। যা একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের কাছে কোনোভাবে কাম্য নয়। অনেক শিক্ষক পেশায় প্রবেশ করার পর যেভাবে পড়াশুনা করা দরকার সেটি করেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি এর বাস্তব সাক্ষী।

উপরের লেখাগুলো সবাই কম বেশি জানি। প্রকৃতপক্ষে এর চেয়েও খারাপ অবস্থা বিরাজমান। সেগুলো বলাটা বোধহয় সমীচীন নয়। আমি আমলাদের খুশি করা কিংবা তাদের পক্ষে-বিপক্ষে বলছি না। আমরা সবাই জানি আমলারা কত দুর্নীতিপরায়ণ। (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে)। তারা ইচ্ছা করলে দেশ ও জাতিকে অনেক কিছু দিতে পারেন। কিন্তু সেই গুরু দায়িত্ব কি তারা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন? এখানেও আত্মজিজ্ঞাসার প্রশ্ন এসে যাচ্ছে।  তাদের অনেকেই দেশের টাকায় পড়াশুনা করে দেশের সঙ্গেই বেঈমানি করছেন।

কিন্তু শিক্ষকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা পাহাড়সম। তাদের মর্যাদাও পাহাড়সম। কিন্তু এটি ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে। আমরাও চাই শিক্ষকরা সম্মানে থাকুক। তাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাক। কিন্তু সেটি থাকতে হলে শিক্ষকদেরই বদলাতে হবে।  ফিরিয়ে আনতে হবে তাদের নীতি-নৈতিকতা। তাদের মর্যাদা নিজেদেরই রক্ষা করতে হবে। তাহলেই আবার পরিবর্তন আসবে। কেউ শিক্ষকদের নিয়ে তামাশা করতে পারবে না। আপনাদের অসম্মান হবে না। আশা করি, আপনারা ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিবেন, যােগ্যদের শিক্ষক বানাবেন, লেজুড়বৃত্তি বন্ধ করবেন, আরো বেশি করে গবেষণা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং ভাল থাকবেন সম্মানের সঙ্গে। তিক্ত কথাগুলো বলার জন্য দুঃখিত।

লেখক: সাবেক সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।