ঘনিয়ে আসছে ফাঁসির দিন


প্রকাশিত: ০৪:৪৭ এএম, ০৬ জানুয়ারি ২০১৬

যুদ্ধাপরাধের বিচারে একের পর এক চিহ্নিত ঘাতকদের সাজা হওয়া এবং তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশ কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। এবার মুক্তিযুদ্ধকালে যার পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল সেই মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়েও বহাল থাকায় দেশবাসীর মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। সাজা বহাল থাকায় যুদ্ধাপরাধের বিচারে আরেকধাপ এগিয়ে গেল লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ। এখন রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তির পর রায় কার্যকরের পালা। দেশের মানুষ সেই দিনটির অপেক্ষায়।  

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার সকালে এক মিনিটের মধ্যে এই রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে দেন। এই বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে দেড় বছর আগে নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আপিল আংশিক মঞ্জুর করে সেই দণ্ডাদেশই বহাল রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত।  আপিলের রায়ে বলা হয়েছে, যে আট অভিযোগে তিনি ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, তার মধ্যে ১, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে তিনি খালাস পেয়েছেন। আর ২, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে তার দণ্ড বহাল রয়েছে। এর মধ্যে ২, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে পাবনার বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা ও ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ; পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা এবং পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে সুষ্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল। এরপর সেই অঙ্গীকারের প্রতি জনরায় পেয়ে দলটি সরকার গঠন করে।  শুরু হয় যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া। দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভ করা হয়। ইতিমধ্যেই অনেকরই বিচার সম্পন্ন হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা, কামারুজ্জমান, সাকা চৌধুরী, আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ডও কার্যকর করা হয়েছে। এখন বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও যাতে শেষ করা যায় সেটিই প্রত্যাশা করছেন একাত্তরে স্বজন হারানো এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষজন।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিটি দীর্ঘদিনের। কিন্তু স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর  একাত্তরের ঘৃণ্য অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। সামরিক শাসক জিয়া ক্ষমতা দখল করে নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীকে আবার রাজনীতি করার সুযোগ দেন। এ সময় কারাগারে বন্দি অনেক যুদ্ধাপরাধীকেও ছেড়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে রাজনীতিতে তারা আসন পাকাপোক্ত করে। খালেদা জিয়ার জোট সরকারে নিজামী-মুজাহিদ মন্ত্রীও হন। কিন্তু দেশের মানুষ সেটি মেনে নেয়নি। তারা সব সময়ই চেয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচার।

একাত্তরে স্বজন হারানোর বেদনা লাঘব করাই শুধু নয়, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যও যুদ্ধাপরাধের বিচার করা অত্যন্ত জরুরি। অপরাধ কখনো তামাদি হয় না, এবং অপরাধ করলে কেউ পার পায় না- এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে সমাজে নীতি নৈতিকতার উন্মেষ ঘটে। এ কারণে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কোনো বিকল্প নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শোষণহীন, বঞ্চনাহীন, সমৃদ্ধ  অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন করার প্রক্রিয়ায় এগুনোরও পথও পরিষ্কার হবে যদি স্বাধীনতা বিরোধী চক্রকে চিরতরে নির্মূল করা যায়। এ ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যমতের কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।