নির্বাচন কমিশনের আজ প্রি-টেস্ট


প্রকাশিত: ০৪:৩৮ এএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫

বছরটি শেষ হতে আর একদিন। শুরুটা ছিল পেট্রল বোমা সন্ত্রাস দিয়ে। শেষের দিকে জঙ্গিদের হামলার কিছু ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। এরই মাঝে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে গেছে। কারো কাছে হাত না পেতে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে এগুচ্ছে। সামাজিক মর্যাদায় দেশের মানুষের মান বেড়েছে। বেড়েছে গড় আয়ু। এই সবকিছুই আরো ভালোভাবে এগিয়ে যাবে যদি এদেশের মানুষ ইচ্ছেমত ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে। আজ ৩০ ডিসেম্বর সেটিরই প্রি-টেস্ট হচ্ছে।

দেশের  প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই সকাল আটটায় দেশের ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ইতিহাসে এই প্রথম দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবারই নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীরা মুখোমুখি হচ্ছেন।

প্রচারণার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ করে আসছে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই চলেছে, নির্বাচন কমিশন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের এই অভিযোগ কিছুটা সত্য। এরপরও যে বিএনপি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত লড়ছে সেটা ইতিবাচক রাজনীতিরই প্রকাশ। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি যে ঐতিহাসিক ভুল করেছে এবং গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়েও ভোটের শুরুতেই বর্জন করে যে অপরিপক্ক রাজনীতির কৌশল নিয়েছিল সেখান থেকে তারা এবার শিক্ষা নিয়েছে। এটাই আশার কথা।

আজ ভোটের দিন নির্বাচন কমিশন কি ভূমিকা রাখে সেটির ওপর নির্ভর করছে দেশের আগামী। নানা অভিযোগের পরও যে বিএনপি নির্বাচনের পথে ফিরে এসেছে এটা ধরে রাখার জন্য নির্বাচন কমিশনের অনেক কিছুই করার আছে।

আমাদের দেশে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানের মত আচরণ করলেও নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা রয়েছে আমরা আশা করবো কমিশন তা পুরোপরি ব্যবহার করবে। কারণ এই নির্বাচনে অনিয়ম ঠেকাতে কঠোর হতে না পারলে আগামী নির্বাচনগুলো এই কমিশনের অধীনে আয়োজন করা প্রশ্নের মুখে পড়বে এবং জনগণ দ্বারাও সমর্থিত হবে। আমরা দেখেছি ভোটের হাওয়া যেদিন থেকে শুরু হয়েছে সেদিন থেকেই কমিশন তার হাতে থাকা ক্ষমতা প্রয়োগে কার্পণ্য করেছে।

এইসব অভিযোগের জবাব কমিশন আজই দিতে পারে, কঠিনভাবে যদি আচরণবিধি মানতে বাধ্য করে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভোটের দিন মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে অতীতের সব অভিযোগ ভুলে যাবে।  আচরণবিধি যদি সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করা যায়, তাহলে সে নির্বাচনে অনিয়মের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। দরকার শুধু কমিশনের সদিচ্ছা আর দৃঢ়তা। মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারলেই হয়। এই দেশেই অতীতে সফলভাবে অনেক নির্বাচনের আয়োজন করতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন। সেই উদাহরণ মাথায় রেখে যদি এবার কমিশন তার দায়িত্বটা ঠিকমতো পালন করে তবে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে রাজনীতিতে যে বিরোধ চলছে সেটাও দূর করা সম্ভব হবে। তত্ত্বাবধায়ক বা সর্বদলীয় বা নিরপেক্ষ কোনো সরকারেরই দরকার হবে না। কমিশন সেই আস্থার জায়গাটা আজ তৈরি করতে পারে।

বাংলাদেশের মূল সংকটই হল আস্থা। আওয়ামী লীগ বিএনপিতে একে অপরের মধ্যে আস্থা নেই, নিজেদের ভেতরেও রয়েছে আস্থার সংকট।  বিচার ব্যবস্থা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর  মানুষের আস্থা নেই, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন. জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কারো ওপরই মানুষের আস্থা নেই। নির্বাচন কমিশনের ওপর তো আস্থা হারিয়েছে সেই কবেই। গণমাধ্যম ছিল শেষ ভরসা-সেখানেও দলবাজি শুরু হওয়ায় মানুষের যাওয়ার জায়গা কমে আসছে। এই আস্থাহীনতার জায়গাটি পুনঃ মেরামত করতে পারে কেবল নির্বাচন কমিশন- একটি সুন্দর সু্ষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে, যে ক্ষমতা তাদের সংবিধান দিয়েছে। তাই শুরুতেই বলছিলাম আজ প্রি-টেস্ট। এরপর দ্বিতীয় দফায় যে স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন হবে সেটি হবে টেস্ট। এই দুটোতে ফেল করলে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা যে এই কমিশনের থাকবে না সেটি বোধকরি কাউকে আঙ্গুল তুলে বলে দিতে হবে না।

pintu

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।